
এসএসসি দফতরের সামনে চাকরিহারাদের অবস্থান। — নিজস্ব চিত্র।
যাঁরা 'অযোগ্য' নন, তাঁদের তালিকা ডিআই অফিস এবং স্কুলগুলিতে পৌঁছতেই কমতে শুরু করেছে আন্দোলনের ঝাঁজ। অভিযোগ, ইতিমধ্যেই বেশ কয়েক জন ‘যোগ্য’ চাকরিহারা অবস্থানমঞ্চ থেকে চলে গিয়েছেন। অনেকে আবার স্কুলে যাবেন বলেও মনস্থির করেছেন। চাকরিহারা এক শিক্ষক অমিতরঞ্জন ভুঁইয়া বলেন, ‘‘জেলায় জেলায় ডিআইদের কাছে তালিকা পাঠানো হয়েছে। সেখানে লেখা আছে ‘অযোগ্য নয়’। কিন্তু কোথাও ‘যোগ্য’ বলে লেখা নেই। চালে কাঁকর সরকার মিশিয়েছে, ফলে আলাদা করার দায়িত্বও ওঁদেরই।’’
অন্য দিকে, চিন্ময় মণ্ডল বলেন, ‘‘আমরা অবস্থান চালাচ্ছি। পরবর্তী আন্দোলনের রূপরেখা কী হবে, তা আমরা আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করব। আন্দোলনকারীদের সংখ্যা কমেছে তার কারণ গত দু’দিন ধরে টানা গরমে আন্দোলন চালাচ্ছেন তাঁরা। বেশ কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আবার অনেকে বাড়ি গিয়েছেন। তাঁরা আবার যোগদান করবেন।’’
আদালত অবমাননা মামলায় সাময়িক স্বস্তিতে স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) এবং স্কুল শিক্ষা দফতর। বুধবার কলকাতা হাই কোর্টে বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রসিদির ডিভিশন বেঞ্চে তারা সওয়াল করে, সংশ্লিষ্ট মামলার গ্রহণযোগ্যতা নেই। কারণ, এই সংক্রান্ত মামলা বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। তাই মামলা করতে হলে সর্বোচ্চ আদালতে যেতে হবে মামলাকারীদের।
এমনই এক চাকরিপ্রার্থী বিদেশ গাজী বলেন, ‘‘সরকারের সদিচ্ছার অভাবের জন্যই আমরা দু’বছর ধরে পরীক্ষা দিয়েও বেকার বসে রয়েছি। সংরক্ষিত আসন সংক্রান্ত মামলায় কোথাও বলা হয়নি যে ইন্টারভিউ নিতে পারবে না সরকার।’’
করুণাময়ীতে নতুন করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করলেন প্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থীরাও। বুধবার সকাল থেকে শুরু হল ২০২২ সালে টেট উত্তীর্ণ চাকরিপ্রার্থীদের বিক্ষোভ। তাঁদের দাবি, ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে টেটের ফল প্রকাশ হয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ৫০ হাজার শূন্য পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি বের হয়নি। তাই অবিলম্বে বিজ্ঞপ্তির দাবিতে করুণাময়ী থেকে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ পর্যন্ত মিছিল করছেন চাকরিপ্রার্থীরা।
করুণাময়ীতে টেট-পরীক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। — নিজস্ব চিত্র।
নিবেদিতা ভবনে চাকরিহারা গ্রুপ-সি ও গ্রুপ-ডি শিক্ষাকর্মীদের অনশন ৪২ ঘণ্টায় পড়ল। অবিলম্বে বেতন বৃদ্ধি এবং যোগ্য-অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশের দাবিতে অনশন করছেন তাঁরা। আন্দোলনকারীরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, অনশন চলাকালীন অনশনকারীদের কোনও ক্ষতি হলে তার দায় নিতে হবে দফতরকেই।
অনশনে চাকরিহারা শিক্ষাকর্মীরা। — নিজস্ব চিত্র।
সোমবার সন্ধ্যা থেকে নিজের দফতরে আটকে থাকার পর বুধবার সকালে ছাড়া পেয়েছেন এসএসসির চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার ও অন্য আধিকারিকেরা। এ বিষয়ে চাকরিহারাদের প্রতিনিধি চিন্ময় মণ্ডল বলেন, ‘‘বুধবার হাই কোর্টে মামলা রয়েছে। সেখানে চেয়ারম্যানকে সশরীরে হাজির থাকতে হবে। তাই শর্তসাপেক্ষে ওঁকে ছাড়া হচ্ছে। শিক্ষামন্ত্রী ঘোষণা করেছেন যে রিভিউ পিটিশনের আগে তালিকা দেবেন না। সে নিয়ে আমরা তাঁর কাছেই জবাব চাইব। পাশাপাশি, ২২ লক্ষ ওএমআর প্রকাশের দাবিতেও আমরা অনড় রয়েছি।’’
মঙ্গলবার রাতে চাকরিহারা শিক্ষকেরা জানান, ১৭,২০৬ জনের যে তালিকা বিকাশ ভবন দিয়েছে, তার মধ্যে ১৫,৪০৩ জন যোগ্য। কিন্তু এই তালিকায় তাঁরা ‘আংশিক সন্তুষ্ট।’ কারণ, ওএমআরের ‘মিরর ইমেজ’ এখনও প্রকাশ করা হয়নি। কেন হচ্ছে না, তার ব্যাখ্যা চাওয়া হবে মন্ত্রীর কাছে। অন্য দিকে, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের কাছ থেকেও তাঁরা জানতে চাইবেন, কেন ১৭ হাজারের মধ্যে যাঁরা অযোগ্য, তাঁদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হচ্ছে না। একই দাবিতে বুধবার সকালেও তাঁদের অবস্থান চলছে। চড়া রোদ, তীব্র গরম উপেক্ষা করে এসএসসি দফতরের সামনেই ঠায় বসে রয়েছেন চাকরিহারারা।
মঙ্গলবার এসএসসির তরফে জানানো হয়, বুধবারের মধ্যে ‘বৈধ’ শিক্ষকদের তালিকা স্কুল শিক্ষা দফতরে পাঠানো হবে। মঙ্গলবার এ নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে বৈঠকও হয় এসএসসির। এর পরেই জানানো হয়, এসএসসির তৈরি করা তালিকা বুধবারের মধ্যে পাঠানো হবে স্কুল শিক্ষা দফতরে। তবে সেই তালিকা তিনটি ফেজ়-এ (পর্যায়ে) পাঠানো হবে। এসএসসি-র এক কর্তা জানান, একেবারে নিষ্কলঙ্ক বা বৈধ শিক্ষক যাঁরা, যাঁদের পরীক্ষা-সহ কোনও প্রক্রিয়াতেই কোনও সমস্যা নেই, তাঁদের নামের তালিকা তৈরি হবে।
অন্য দিকে, মঙ্গলবার স্কুল শিক্ষা কমিশনারের তরফ থেকে চিঠি পাঠানো হয় ডিস্ট্রিক্ট ইনস্পেক্টরদের (ডিআই) কাছে। সেই চিঠিতে বলা হয়, ‘যোগ্য’ শিক্ষকদের তালিকা প্রকাশ করবেন ডিআইরা। গত ১৭ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়া অনুযায়ী যাঁরা যোগ্য, তাঁরা আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত শিক্ষকতা করতে পারবেন। জানা গিয়েছে, যাঁরা অযোগ্য বলে চিহ্নিত নন, তাঁদের বেতন দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন স্কুল শিক্ষা কমিশনার।
হাই কোর্টে মামলায় যাতে সশরীরে উপস্থিত থাকতে পারেন, সে জন্য শর্তসাপেক্ষে এসএসসির চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদারকে বেরোতে দিলেন চাকরিহারারা। তাঁরা জানিয়েছেন, পুলিশের সঙ্গে কথা বলার পর সিদ্ধার্থকে বেরোতে দেওয়া হয়েছে। সোমবার থেকে প্রায় ৪০ ঘণ্টা নিজের দফতরেই বন্দি ছিলেন সিদ্ধার্থ-সহ এসএসসির অন্যান্য আধিকারিক।
সোমবার থেকে এসএসসি দফতরের সামনে অবস্থানে বসে রয়েছেন চাকরিহারারা। যোগ্য-অযোগ্যের তালিকা দেয়নি এসএসসি। সোমবার থেকে আচার্য ভবনে নিজের দফতরে ঘেরাও হয়ে রয়েছেন এসএসসি চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার। চাকরিহারা ‘যোগ্য’ শিক্ষক এবং অশিক্ষক কর্মীরা জানিয়েছেন, তালিকা না দেওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। এর মধ্যেই ‘যোগ্যদের’ তালিকা দিয়ে ডিআই-দের চিঠি পাঠায় স্কুল শিক্ষা দফতর। তাতে ‘যোগ্য’দের স্কুলে যেতে বলা হয়েছে। অন্য দিকে, বিক্ষোভকারীরা জানিয়েছেন, আপাতত স্কুলে যাবেন না। স্থায়ী সমাধান না মেলা পর্যন্ত রাস্তাতেই থাকবেন চাকরিহারা শিক্ষকেরা। বুধবার সকালেও একই চিত্র এসএসসি দফতরের সামনে।
বুধবার ২৬ হাজার চাকরি বাতিল নিয়ে আদালত অবমাননা মামলার শুনানি রয়েছে কলকাতা হাই কোর্টে। সোমবার বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রসিদির ডিভিশন বেঞ্চ আদালতের নির্দেশ কেন কার্যকর করা হয়নি তা নিয়ে স্কুল সার্ভিস কমিশন তথা রাজ্যের বক্তব্য জানতে চেয়েছিল আদালত। এসএসসির নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় কলকাতা হাই কোর্টের ২৬ হাজার চাকরি বাতিলের নির্দেশ বহাল রাখে সুপ্রিম কোর্ট। হাই কোর্ট জানিয়েছিল, ইতিমধ্যে দাগি বা চিহ্নিত অযোগ্যদের বেতন ফেরত দিতে হবে। যে সব ওএমআর শিট উদ্ধার করা গিয়েছে সেগুলি এসএসসির ওয়েবসাইটে আপলোড করতে হবে। ওই অযোগ্যরা কী ভাবে চাকরি পেয়েছেন, কাকে ঘুষ দিয়েছেন তা নিয়ে সিবিআই আরও তদন্ত করবে। প্রয়োজনে তাঁদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে সিবিআই। গত ৩ এপ্রিল রায় দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট হাই কোর্টের ওই সব নির্দেশ বহাল রাখে। এই অবস্থায় আদালতের নির্দেশ কার্যকর হয়নি এই অভিযোগ তুলে হাই কোর্টে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের হয়। সোমবার ওই মামলার শুনানিতে আদালত প্রশ্ন তোলে, যে সব নির্দেশ সুপ্রিম কোর্ট পরিবর্তন করেছে তা আমরা স্পর্শ করছি না। কিন্তু বাকি নির্দেশ কার্যকর করা হয়নি? কেন ওএমআর শিট আপলোড হয়নি? জবাবে এসএসসির আইনজীবী জানান, কয়েক দিন সময় দেওয়া হোক। বিচারপতি জানান, এক দিন সময় দেওয়া হবে। এই সময়ের মধ্যেই তাঁকে জেনে আসতে হবে। বুধবার ফের শুনানি রয়েছে ওই মামলার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy