কথা ছিল শেক্সপিয়রের রোমিও-জুলিয়েটের অনুপ্রেরণায় তৈরি হবে বাংলা ছবি।
কথা ছিল সে ছবির মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করবেন অঙ্কুশ-শুভশ্রী।
তবে চিত্রনাট্য এখন পাল্টেছে খানিকটা।
ছবির নাম পরিবর্তন করে হয়েছে ‘রোমিও vs জুলিয়েট’।
বদলে গিয়েছে ছবির নায়িকাও।
শুভশ্রীর জায়গায় এখন অঙ্কুশের সঙ্গে অভিনয় করবেন বাংলাদেশি নায়িকা মাহি।
পুরো নাম মাহিয়া মাহি। কী এমন হল যে হঠাত্ নায়িকা বদল হয়ে গেল ছবির? উত্তরে ছবির প্রযোজক হিমাংশু ধানুকা লন্ডন থেকে বলছেন, “আমি চেয়েছিলাম শুভশ্রীর সঙ্গে কাজ করতে। সেই মতো লন্ডনের শিডিউলও তৈরি করেছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শুভশ্রীর ডেট নিয়ে এত সমস্যা হল যে বাধ্য হয়েই আমাকে এ সিদ্ধান্ত নিতে হল।”
তার পর হিমাংশু খোঁজ শুরু করেন নতুন হিরোইনের। খবর নিয়ে দেখেন যে বাংলাদেশের নতুন নায়িকাদের মধ্যে মাহি খুবই জনপ্রিয়। সব ঠিক হওয়া সত্ত্বেও সমস্যা হয় মাহির ইউকে ভিসা নিয়ে। “সাঙ্ঘাতিক টেনশনে ছিলাম মাহির ভিসা নিয়ে। একটু সময় নিচ্ছিল ভিসা পেতে। শেষ পর্যন্ত ভিসা পাওয়া গিয়েছে। অনেকটা নিশ্চিন্ত লাগছে,” জানাচ্ছেন প্রযোজক।
ছবির নাম কেন পাল্টানো হল তা নিয়ে প্রশ্ন করায় হিমাংশু বলেন, “আমার ছবির নায়ক রোমিও নামে এক গ্রামের ছেলে। আর নায়িকা লন্ডনের মেয়ে। নাম জুলিয়েট। টাইটেল সঙটা এ রকম ‘ফেসবুকে ফোটো দেখে প্রেমে পড়েছি/ সাত সমুন্দর পার তোকে বলতে এসেছি/ ম্যঁয় তেরা রোমিও, তু মেরি জুলিয়েট’। এই গানটার থেকেই বুঝতে পারবেন সিনেমাটায় ঠিক কী বলতে চাওয়া হচ্ছে।”
আজ সোমবার ঢাকা থেকে কলকাতায় আসার কথা মাহির। দিন দু’য়েক এ শহরে থেকে উড়ে যাবেন লন্ডনে। ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ওখানেই শ্যুটিং শুরু হবে সে ছবির।
প্রথম বার কলকাতায় আসছেন মাহি। ঢাকা থেকে কলকাতা আসার আগে আনন্দ প্লাস-কে বলেন, “এ ছবিতে কাজ করার অফার পেয়ে আমি দারুণ খুশি। এর আগে ইউরোপ গিয়েছি। কিন্তু লন্ডনে কোনও দিন যাওয়া হয়নি। ছবিতে অভিনয় করার সুযোগটা তো বড় ব্যাপার ঠিকই। তার সঙ্গে উপরি পাওনা লন্ডন ঘোরার সুযোগ।”
বাংলাদেশে বসে অঙ্কুশ-শুভশ্রীর ‘আমি শুধু চেয়েছি তোমায়’ ছবিটি দেখেছেন মাহি। “অঙ্কুশ ভাইয়ার ন্যাচারাল অ্যাক্টিং আমার পছন্দ। ‘আমি শুধু...’র গানের দৃশ্যে এক্সপ্রেশনগুলো এত সুন্দর দিয়েছে যে আমি মনে মনে ভাবছি ‘রোমিও vs জুলিয়েট’য়ে আমাকে ওর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করতে হবে,” স্বীকার করেন মাহি।
আর শুভশ্রী? “ওর মিষ্টি হাসিটা আমার খুব ভাল লেগেছে।”
আপনি কি জানেন এই ছবিতে শুভশ্রীর অভিনয় করার কথা ছিল? “ডিটেলস জানি না। তবে নিশ্চয়ই ওর কোনও বিশেষ প্রবলেম ছিল। তাই হয়তো কাজটা করতে পারেনি। আমার এ প্রসঙ্গে একটাই প্রতিক্রিয়া। যে রোলটা আমার পছন্দের নায়িকার করার কথা ছিল, সেটা আমাকে করতে হলে চ্যালেঞ্জটা অনেক বেড়ে যায়। নিজেকে তাই জিজ্ঞেস করছি আমি ওর কাছাকাছি যেতে পারব তো?”
শুভশ্রী এ খবর শুনে বলছেন, “ডেট-এর ঝামেলার জন্য ছবিটা করতে পারলাম না। বাংলাদেশি নায়িকা ছবিটা করছে শুনলাম। আশা করি ছবিটা খুব ভাল হবে।” এ ছবি করতে না পেরে মনখারাপ হচ্ছে না? সংক্ষেপে শুভশ্রী শুধু বলেন, “না, একদম না। ভগবান যা করেন, মঙ্গলের জন্যই করেন।”
অঙ্কুশের প্রশংসার সঙ্গে দেবের কথাও বলতে ভোলেন না মাহি। বলছেন, “এমনিতে শ্যামলা ছেলেদের আমার পছন্দ। আমি দেবের ফ্যান। বলিউডের সিদ্ধার্থ মলহোত্রকেও আমার বেশ পছন্দ। ও ফর্সা। তবু আমার পছন্দ।” বলিউড নায়িকাদের মধ্যে পরিণীতি চোপড়ার ভক্ত তিনি। ‘হসি তো ফসি’তে পরিণীতিকে দেখে ওর সঙ্গে নিজের খানিকটা মিলও খুঁজে পেয়েছেন তিনি।
এখনও বাইশে পা দেননি মাহি। ইতিমধ্যে বাংলাদেশে ৮-টা ছবি করে ফেলেছেন। ৪টে ছবি মুক্তির অপেক্ষায়। ‘রোমিও vs জুলিয়েট’-এর শ্যুটিং সেরে আবার বাংলাদেশে গিয়ে আরও কয়েকটা প্রজেক্ট করার কথাও ঠিক হয়ে গিয়েছে। পিছন ফিরে দেখলে আজ মাহির ভাবতে অবাক লাগে যে এক সময় তিনি নায়িকা হওয়ার স্বপ্নই দেখেননি। বলছেন, “স্বপ্নেও ভাবিনি আমার সোলো বিলবোর্ড হতে পারে। প্রথম যখন ফিল্মের জন্য অডিশন দিতে গিয়েছিলাম, তখন আমি বেশ চিকন ছিলাম। মডেল হতে গেলে তো চিকন হতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশে নায়িকা হওয়ার জন্য মোটা হওয়া দরকার...”
তার পর শুরু হয় ওজন বাড়ানোর চেষ্টা। একদিনে ১২-টা ডিম আর দু’টো চিকেন এ রকম ডায়েট চার্ট তৈরি করলেন নিজের জন্য। এখন অবশ্য দিনে ১২-টা ডিম খাওয়ার লাক্সারি নেই। সারা সপ্তাহ ফল আর জ্যুস খেয়ে কাটিয়ে দেন। শুক্রবার ডায়েট থেকে ছুটি। সেদিন লাঞ্চে ভাত আর শুঁটকি ভর্তা।
কিছু দিন আগে বাংলাদেশের জয়া এহসান কাজ করে গিয়েছেন টলিউডে। এর পর তিনি আসছেন। দু’দেশের অভিনয়ের জগতে এ রকম পারাপার নিয়ে তাঁর মতামত জানতে চাইলে মাহি বলেন, “জয়া আপ্পু আমার থেকে অনেক সিনিয়র। উনি যে টলিউডে ছবি করছেন, সেটা খুব ভাল ব্যাপার। কিছু দিন আগে আপনাদের ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত আমাদের দেশে ‘চোরাবালি’ বলে একটা ছবিতে কাজ করলেন। যদি ‘রোমিও vs জুলিয়েট’ ভাল ব্যবসা করে, তা হলে আমি আরও ভারতীয় ছবিতে কাজ করতে চাইব।”
সেই সঙ্গে এটাও বলেন দু’দেশের ছবিও সীমান্ত পার করে মুক্তি পাওয়াটা দরকার। সাক্ষাত্কার শেষ করার আগে বলেন, “সুদূর লন্ডনে গিয়ে ভারতীয় ছবিতে অভিনয় করব। আমি মনেপ্রাণে চাই সে ছবির কাজ আমাদের দেশের দর্শক দেখতে পাক। আমাদের দেশের ছবিও যেন ভারতে মুক্তি পায়। দু’দেশের মধ্যে এই আদানপ্রদানটা খুব জরুরি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy