Advertisement
০৭ অক্টোবর ২০২৪

কাবাবিয়ানা

শীত ঢুকছে শহরে। আগুনে পোড়া মখমলি কাবাবের উষ্ণতায় ভরা থাক এই মরসুম। লিখছেন সোমঋতা ভট্টাচার্যপুজোপার্বণ তো এক-এক করে সব শেষ হওয়ার মুখে। নতুন জামাকাপড় সব পরা হয়ে গিয়েছে। শহরের হেন রেস্তোরাঁ নেই, যেখানে ঢুঁ মারা হয়নি, হেন ভিনদেশি ক্যুইজিন নেই যা চেখে দেখা হয়নি। মায় অ্যান্টাসিডের কোর্স পর্যন্ত শেষ হয়ে গিয়েছে।

শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৫ ০০:৪০
Share: Save:

আহা! প্রায় ফুরোতে বসল গো এমন আমোদের মরসুমটা!

পুজোপার্বণ তো এক-এক করে সব শেষ হওয়ার মুখে। নতুন জামাকাপড় সব পরা হয়ে গিয়েছে। শহরের হেন রেস্তোরাঁ নেই, যেখানে ঢুঁ মারা হয়নি, হেন ভিনদেশি ক্যুইজিন নেই যা চেখে দেখা হয়নি। মায় অ্যান্টাসিডের কোর্স পর্যন্ত শেষ হয়ে গিয়েছে।

তবুও, এত জৌলুসের পরে আচমকা মনটাকে সাদামাঠা করে দিতে কি আর ইচ্ছে করে? তার চেয়ে বরং ফাঁকা প্যান্ডেল, আর একটার পর একটা খুলে নেওয়া বাঁশ দেখতে দেখতেও মেজাজটাকে শরিফ রাখতে একটু ‘তা’ দেওয়া যাক পেটে।

সেই কবে কে যেন একটা খাস লখনউয়ে কাকোরি কাবাবের দোকানে গিয়ে বর্ধমানের রাঁধুনি দেখে বেজায় খাপ্পা হয়ে গিয়েছিল! কিন্তু খানাপিনাও তো পৈটিক সঙ্গীতের মতোই! তারও কোনও ভাষার গণ্ডি থাকতে নেই। তাই পটল দিয়ে শিঙি মাছের ঝোল খাওয়া ভেতো বাঙালি রন্ধনশৈলীতেও রোশনাই হতে পারে ভারওয়ান আলু জিলাফি, মাশরুম টিক্কা কাবাব, মুর্গ লসুনি কাবাব, মুর্গ খুশনাওয়া কাবাব, মুর্গ পাহাড়ি কাবাব, মুর্গ মলাই কাবাব, মাটন মখমলি কাবাব-এর।

কাবাবি বাহার নিয়ে কলি-জনতার উৎসাহ চিরদিনই তুঙ্গে। গড়িয়াহাটের ‘মির্চ মশালা’ই হোক, বা কাঁকুরগাছির ‘গ্রিল মেট’—নিজ নিজ দ্রব্যগুণে কাবাব-সোহাগে উথালপাথাল করে দিতে পারে তারা। চিরকেলে অভিজাত রেস্তোরাঁদের পাশাপাশি ‘জিঞ্জার’, ‘জারাঞ্জ’, ‘নৌশিজান’ নৈবেদ্য সাজায় হরিয়ালি চিকেন কাবাব, কলমি কাবাব, মুর্গ তিল টিক্কা, চিকেন অ্যান্ড ল্যাম্ব মিন্সড স্পাইসি বার-বি-কিউড যুগলবন্দি শিক কাবাব, গলৌটি কাবাব, ককোরি কাবাব, পসিন্দা কাবাব, বুরা কাবাব, চিপলি কাবাব, মাটন টুকরা কাবাব দিয়ে।

শুধু মুরগি বা মাটনেই যে আটকে রাখতে হবে কাবাব-সম্ভারকে, তার যে কোনও অর্থই হয় না, তা আগেই শিখিয়েছে ‘ফ্লেম অ্যান্ড গ্রিল’, ‘সিগরি’ বা ‘কাসা কিচেন’। ‘কাসা কিচেন’-এ যেমন আকছার নানা রকম উৎসব হচ্ছে নিরামিষ সমস্ত কাবাবের। যেমন সুফিয়ানা পনির টিক্কা, অ্যাভোক্যাডো শামি কাবাব- এ রকম আরও কত কী! তার পরে রয়েছে মাছ, চিংড়ি বা ল্যাম্বের হরেক কাবাব। টলি হুই মচ্ছি, রুবিয়ান আল ফাহাম (টার্কিশ মশলায় চারকোল গ্রিল্‌ড প্রন), চারকোল গ্রিল্‌ড ভেটকি সমক মেশয়ি, গ্রিল্‌ড ল্যাম্ব চপ্‌স, আদানা কাবাব, শিশ তাউক।

রেস্তোরাঁয় রেস্তোরাঁয় ছুটোছুটি করে বেজায় ক্লান্ত? বাড়িতে রান্নায় হঠাৎ নবাবি কেতা দেখানো কিন্তু অস্থিমজ্জায় আছে এ শহরবাসীর। লাগবে তো শুধু মাইক্রোওয়েভের ‘গ্রিল’ অপশনটা, বা আর একটু খাটনি পোষালে তাওয়া এবং বার-বি-কিউয়ের বন্দোবস্ত। তা হলেই যে কোনও দিন তন্দুরে তৈরি হয়ে যেতে পারে আদার ফ্লেভারে জুসি মাটন চপ্‌স কুক্‌ড তন্দুর, যার পোশাকি নাম মাটন অদরক কে পঞ্জে অথবা অন্য আর এক দিন আজওয়ান ফিশ টিক্কা।

পালন করে ফেলা যায় একটা কাবাব সপ্তাহ, বাড়িতেই। নানা রকম রান্নাবান্নার সাইট ঘাঁটাঘাঁটি করলেই দিব্যি বানিয়ে ফেলা যাবে চিকেন টিক্কা লবাবদার, আফতাব গোশ্‌ত, মুর্গ কস্তুরী অথবা গোশ্‌ত বরা কাবাব।

কুছ পরোয়া নেই, কাবাব জিন্দাবাদ!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE