নুসরত জাহান। ছবি: সংগৃহীত।
ছোট থেকেই দুর্গাপুজোর সঙ্গে একটা আনন্দের আমেজ জড়িয়ে থাকে। পুজো মানেই ছুটি। পুজো মানেই শহরের সঙ্গে সঙ্গেই আমাদেরও সেজে ওঠার সময়। তার থেকেও বড় কথা, পুজো মানেই দুষ্টের দমন এবং শিষ্টের পালন। কারণ, মা আসছেন।
পুজো আসছে শুনলেই মনের মধ্যে একটা অন্য রকমের ভাল লাগা তৈরি হয়। পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন কোণে ছড়িয়ে থাকা বাঙালিদের কাছে পুজো অন্য রকম অনুভূতি। সারা বছর অপেক্ষা করে থাকা। কিন্তু, পুজো এলেই তো ঝড়ের গতিতে দিনগুলো কেটেও যায়। তার পর খুব মনখারাপ করে।
পুজোর সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি। মনে আছে, ছোটবেলায় আমাদের কনভেন্ট স্কুলে একটু কম ছুটি দেওয়া হত। কিন্তু তার মধ্যেও চেষ্টা করতাম যতটা সম্ভব আনন্দ করে নিতে। আমার মাসির বাড়ি বেহালায়। তাই ভাই-বোনেদের নিয়ে একসঙ্গে ঠাকুর দেখার স্মৃতি আজও আমার মনে টাটকা। তখন তো সুযোগ পেলে কখনও বাইকে, কখনও আবার বাসে চড়ে এলাকা ভাগ করে ঠাকুর দেখতাম। তখন নতুন জুতোয় পা কেটে যাচ্ছে বা খিদে পাচ্ছে কি না, এ সব মাথায় আসত না। এক দিন সারা রাত ঠাকুর দেখে যদি শরীর খারাপ করত, তা হলে পরের দিন বিশ্রাম। তার পর আবার ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে পড়া। সেই সব দিনগুলো খুব মিস্ করি। তবে পুজোর মধ্যে একটা দিন নির্দিষ্ট থাকত, সে দিন বাবা আমাদের নিয়ে ঠাকুর দেখাতে নিয়ে যেতেন। আমি ছোট থেকেই খুব জেদি। মনে আছে, এক বার বাবা বললেন, যত ক্ষণ না পর্যন্ত আমি ক্লান্ত হয়ে পড়ছি, তত ক্ষণ ঠাকুর দেখতে হবে। বাড়ি ফেরা যাবে না!
বয়সের সঙ্গে সঙ্গে পুজোর দিনগুলোও বদলে গিয়েছে। এখন তো অতিথি হিসেবে বহু পুজোয় যেতে হয়। ঠাকুরও দেখা হয়ে যায়। তবুও চেষ্টা করি সময় করে ভিড় এড়িয়ে ঠাকুর দেখার। পুজোর সঙ্গে বাঙালির পেটপুজোও জড়িয়ে। পুজোর সময়ে রাস্তার দু’পাশের ফাস্ট ফুডের স্টলগুলো আমাকে খুব টানে। এই প্রসঙ্গে গত বছরের একটা অভিজ্ঞতা না জানালেই নয়। আমি আর যশ ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছি। যশকে ভিড়ের মধ্যে ধীরে ধীরে গাড়িটা চালাতে বলে আমি টুক করে নেমে পড়েছিলাম। পরবর্তী গন্তব্য ঘুগনির দোকান। যশ বুঝতেও পারেনি। আমাকে দেখে মানুষের ভিড়। সকলের সঙ্গে ছবিও তুলেছিলাম। কিন্তু আমার হাতে তখনও ঘুগনির প্লেট!
পুজোর আগে আমার আর যশ, দু’জনেরই ব্যস্ততা তুঙ্গে। কিন্তু তা সত্ত্বেও ওকে বলেছি, সময় করে আমাকে নিয়ে একটু বেরোতে। মা, বাবা এবং বাচ্চাদের জন্য কেনাকাটা করতে হবে। ব্যস্ততার জন্য প্রতি বছর পুজোর কেনাকাটা শেষ মুহূর্তেই সময় পাই। ঈশানের এখন সাড়ে তিন বছর বয়স। অনেকটাই বড় হয়েছে। গত বছর ওকে নিয়ে ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছিলাম। ও মণ্ডপের আলোকসজ্জা দেখতে খুব পছন্দ করে। গত বছর ঢাকের তালে একটু আধটু নেচেওছে। দেখেছি, এখন ও পুজো বিষয়টা একটু বোঝার চেষ্টা করে। ‘দুগ্গা আসছে’-গোছের অল্পবিস্তর কথাও বলছে। এ বার কী করে, দেখা যাক। পুজোয় বাচ্চাদের নিয়ে একটা দিন সময় কাটানোর পরিকল্পনা তো থাকবেই। তা ছাড়া আমরা সময় বার করতে না পারলেও দাদুরা ঠিকই নাতিদের নিয়ে ঠাকুর দেখাতে বেরিয়ে পড়বেন।
পুজোয় সাধারণত আমি আর যশ কলকাতায় থাকার চেষ্টা করি। কারণ, কাজের বাইরে আমাদের পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ পাই। তা ছাড়া, আমাদের অনেক বন্ধু বছরের এই চারটে দিনই শহরে আসেন। তাঁদের সঙ্গেও দেখা করার সুযোগ পাই। একসঙ্গে আড্ডা দেওয়া খাওয়াদাওয়ার মধ্যে দিয়ে খুব ভাল সময় কাটে।
প্রত্যেক বছর অষ্টমীর দুপুরে আমি ভোগ খেতে খুব ভালবাসি। একশো বার হয়তো তার জন্য আমাকে কটাক্ষের শিকার হতে হয়েছে! কিন্তু তার পরেও অষ্টমীর দিন অঞ্জলি দিই, আগামী দিনেও অঞ্জলি দেব। কারণ, বিশ্বাস কোনও ধর্মের উপর নির্ভর করে না। কোনও ভাষার উপরেও নির্ভর করে না। বিশ্বাস মানুষের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। ট্রোলিংকে আমি পাত্তা দিই না। কারণ প্রত্যেকের তার নিজের মতো জীবন যাপনের স্বাধীনতা রয়েছে। কেউ অন্যের জীবনযাপনের শর্ত নির্ধারণ করে দিতে পারে না। আমি সমাজমাধ্যমে দেখেছি, মহিলাদের একটু বেশিই ট্রোল করা হয়। চারটে লাইন লিখে পালিয়ে যাচ্ছে। তাদেরকে চিনিও না, জানিও না। তাই পাত্তাও দিই না।
এ বারের পুজো নিয়ে নানা মন্তব্য কানে আসছে। আমার মতে, পুজো অন্য রকম হয় না। তার মেজাজ অন্য রকম হতেই পারে। আমরা অন্য রকমের একটা সময়ের মধ্যে দিয়ে অগ্রসর হচ্ছি ঠিকই। কিন্তু আমার মতে, পুজোর সঙ্গে জড়িত মানুষের আমেজ নষ্ট হয় না। মা আসছেন। প্রতি বছরের মতো এ বারেও তাঁর সামনে দাঁড়াব। সকলের জন্য মঙ্গলকামনা করব। আমার শহরটা কঠিন সময়ের সঙ্গে লড়ছে। মা যেন প্রত্যেকের জীবনে শান্তি পৌঁছে দেন। আনন্দবাজার অনলাইনের পাঠকদের শারদীয়ার শুভেচ্ছা।
(সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে অনুলিখিত)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy