Advertisement
০৭ অক্টোবর ২০২৪
Puja 2024 Special

পাহাড়, নদী, চা- বাগান দেখতে ডুয়ার্স যাবেন, সঙ্গী হোক চারচাকা

পুজোর ছুটির জন্য ট্রেন, বাস, বিমানের টিকিট কাটা হয়নি? হতাশ না হয়ে চারচাকাকেই সঙ্গী করে নিন এ বছর। শরতের ছুটি কাটানোর জন্য কাছে ও দূরে নানা জায়গা রয়েছে। আনন্দবাজার অনলাইনে থাকছে সড়কপথে ভ্রমণের চেনা-অচেনা ঠিকানা।

কলকাতা থেকে গাড়িতেই চলুন ডুয়ার্স।

কলকাতা থেকে গাড়িতেই চলুন ডুয়ার্স। ছবি: সংগৃহীত।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২৪ ০৯:১২
Share: Save:

পুজো মানেই ছুটির মেজাজ। মন যখন পালাই পালাই করছে, তখন আর দেরি না করে বেরিয়ে পড়ুন। পাহাড়, নদী, ঝর্না, চা-বাগান, বন্যপ্রাণ— সবই যদি পছন্দের তালিকায় থাকে, তা হলে ডুয়ার্সই হতে পারে সবচেয়ে ভাল গন্তব্য।

পুজোর সময় ট্রেনের টিকিট নেই। চিন্তা ছেড়ে সঙ্গী করুন চারচাকাকেই। কলকাতা থেকে ডুয়ার্সের দূরত্ব খুব কম নয় ঠিকই, তবে গাড়িতে যাওয়ার আলাদা মজা আছে। যখন ইচ্ছা দাঁড়ানো যায়, পছন্দের স্থান উপভোগ করা যায়, যে ভাবে ইচ্ছা চলা যায়। ট্রেনের যাত্রা যতই আরামদায়ক হোক না কেন, মাঝপথে নেমে টুক করে কোথাও ঘুরে নেওয়া যায় না।

কলকাতা থেকে ডুয়ার্স

টানা গাড়ি চালালে কলকাতা থেকে ডুয়ার্স ১৫-১৬ ঘণ্টার রাস্তা। তবে, পথে বিভিন্ন জায়গা ঘুরে নিতে পারেন। কলকাতা থেকে ২ দিনেও ডুয়ার্স পৌঁছতে পারেন আবার তিন দিনেও। ঘোরার স্বাধীনতা আপনার হাতে। যানজট এড়াতে চাইলে রাত অথবা ভোরে বেরিয়ে পড়তে পারেন। রাতে সাধারণত রাস্তা ফাঁকা থাকে। ভোরেও তাই। বেলা বাড়লে রোদও বাড়ে, রাস্তায় গাড়িও বেড়ে যায়।

কোন পথে?

কলকাতা থেকে বেরিয়ে পড়ুন নিবেদিতা সেতুর রাস্তা ধরে। সোজা চলুন বর্ধমান। এই পথেই পড়বে গুসকরা। গাড়িতে যাওয়া মানে মাঝেমধ্যে বিশ্রাম। মাঝেমধ্যে চা পান। এই রাস্তায় চায়ের অভাব হবে না। মাঝেমধ্যেই মিলবে ধাবা। গুসকরা থেকে ঘুরে নেওয়া যায় ওড়গ্রাম, আউস গ্রাম, কাটোয়ার জলটুঙ্গি। কলকাতা থেকে যেতে মোটমুটি ঘণ্টা ৪-৫ সময় লাগবে। তবে ওড়গ্রাম ঘুরতে গেলে দিনের বেলাতেই সেখানে পৌঁছতে হবে। সে ক্ষেত্রে যাত্রা শুরু করতে হবে রাতে নয়, ভোরে। এখানে একটি পরিত্যক্ত এয়ারফিল্ড রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন 'চাতাল'। জঙ্গলে ঘেরা জায়গাটি ঘণ্টা দুয়েক ঘুরে নেওয়ার জন্য বেশ ভাল। ওড়গ্রামে জঙ্গলের ভিতরে একটি থাকার জায়গাও রয়েছে। সেখানকার রেস্তরাঁয় সকাল কিংবা দুপুরের খাবারও খেয়ে নিতে পারবেন। পাশেই রয়েছে আউশগ্রাম। সেখানে রয়েছে জলটুঙ্গি। জলের উপর রয়েছে মহল। রাতে আলো জ্বলে উঠলেই তার রূপ খোলে। চাইলে সেখানেও ঢুঁ মারতে পারেন। এই পথ ধরে এগোলেই পড়বে রামপুরহাট। সেখান থেকে ঘুরে নেওয়া যায় নলাটেশ্বরী মন্দির, তারাপীঠ। তবে দু’টি স্থান ঘুরতে গেলে তারাপীঠে অথবা রামপুরহাটে একটা রাত থেকে যেতে পারেন।

কলকাতা থেকে ডুয়ার্স যেতে, কল্যাণী-কৃষ্ণনগরের রাস্তা ধরে বহরমপুর হয়েও যাওয়া যায়। যদি সেই পথ ধরেন তা হলে ডুয়ার্স যাওয়ার পথে একটা রাত বহরমপুরে কাটিয়ে যেতে পারেন। সারাটা দিনে এখানে ঘুরে নিতে পারেন মুর্শিদাবাদের হাজারদুয়ারি, জাহানকোষ কামান, কাটরা মসজিদ, মোতিঝিল, খোসবাগ-সহ দর্শনীয় স্থানগুলি।

ডুয়ার্সের যাত্রাপথের আরও একটি আকর্ষণ ফরাক্কা ব্যারেজ। এমন ভাবে ভ্রমণ পরিকল্পনা করুন, যাতে দিনের আলো থাকতে থাকতেই ব্যারেজ পার হতে পারেন। ফরাক্কা ব্যারেজ থেকে যদি নিউ মাল জংশন হয়ে ডুয়ার্স যান, তা হলেও প্রায় ৭-৮ ঘণ্টার পথ। তাই ফরাক্কা সকাল বেলাতেই পেরিয়ে যাওয়া সুবিধাজনক।

ডুয়ার্স ভ্রমণ

ডুয়ার্স শব্দের অর্থ 'দরজা'। ভারত এবং ভুটানের যাওয়ার একাধিক প্রবেশপথ রয়েছে এখানে। পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ির তিস্তা থেকে অসমের উদলগুড়ির ধানসিড়ি নদী পর্যন্ত ডুয়ার্স বিস্তৃত। দুই রাজ্যের সীমানা দিয়ে বয়ে চলা সঙ্কোশ নদী ডুয়ার্সকে দুই ভাগে ভাগ করেছে।

ডুয়ার্স ভ্রমণের পরিকল্পনা

ডুয়ার্সের পরিধি বেশ বড়। এখানে পাহাড়, নদী, চা-বাগান, জঙ্গল— সবটাই দেখা যায়। একবারে পুরো ডুয়ার্স ঘোরা সময়সাপেক্ষ। তাই দুই অথবা তিন ভাগে এর আনাচ-কানাচ ঘুরে নিতে পারেন।

ডুয়ার্স ভ্রমণের তালিকায় থাকে, গরুমারা সাফারি, মূর্তি নদী, ডুয়ার্স ৭ পয়েন্ট, জলদাপাড়া সাফারি, জলদাপাড়া থেকে চিলাপাতার জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে বক্সা-জয়ন্তী, বক্সার দুর্গ, বক্সার জঙ্গলে ঘোরা এবং মহাকাল দর্শন। ডুয়ার্স একবারে ঘুরতে অন্তত ৭-৮ দিন সময় লাগবে। তবে যদি ডুয়ার্সের আনাচ-কানাচে নাম না জানা, স্বল্পচেনা জায়গা ঘুরতে চান, সময় লাগবে আরও। ফলে, নিজের সময় মতো ভ্রমণ পরিকল্পনা করা যেতে পারে।

কলকাতা থেকে গাড়ি করে ডুয়ার্সে এলেও, গহীন জঙ্গলে কিন্তু সেই গাড়ি নিয়ে যাওয়া যায় না। জঙ্গল সাফারির জন্য আলাদা গাড়ি বন দফতর থেকে বুক করে নিতে হয়। গরুমারার জঙ্গল ঘোরার জন্য লাটাগুড়ির অফিস থেকে গাড়ি বুকিং হয়।

যেতে কত ক্ষণ সময় লাগবে?

কলকাতা থেকে ডুয়ার্সের দূরত্ব প্রায় ৬৫০ কিলোমিটার। একটানা গাড়ি চালালে, যেতে ১৪-১৫ ঘণ্টা সময় লাগে।

কী ভাবে যাবেন?

নিবেদিতা সেতু হয়ে গুসকরা, দুর্গাপুর, রামপুরহাট, ফরাক্কা, রায়গঞ্জ, মহানন্দা ব্যারেজ। আবার বহরমপুর বাইপাস ধরেও ফরাক্কা যাওয়া যায়। ফরাক্কা থেকে রায়গঞ্জ, ইসলামপুর, জলপাইগুড়ি, ধূপগু়ড়ি, ফালাকাটা হয়ে আলিপুরদুয়ার। আর যদি মালবাজার হয়ে ডুয়ার্স ভ্রমণ শুরু করেন তা হলে জলপাইগুড়ি থেকে ফুলবাড়ি, ওদলাবাড়ি, ডামডিম হয়ে মালবাজার পৌঁছতে হবে।

কোথায় থাকবেন?

ডুয়ার্স বিস্তীর্ণ এলাকা। এর বিভিন্ন জায়গায় থাকার জন্য সরকারি বাংলো, বেসরকারি হোটেল রয়েছে। হোম স্টে-র ব্যবস্থাও রয়েছে। জয়ন্তী, মূর্তি প্রভৃতি জায়গায় থাকা যায়। জঙ্গলের ভিতরেও বন দফতর এবং বনোন্নয়ন নিগমের থাকার জায়গা রয়েছে।

আর কী দেখবেন?

ডুয়ার্সের পাশাপাশি কোচবিহার ঘুরে নিতে পারেন। চলে যেতে পারেন কালিম্পং কিংবা দার্জিলিঙেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Travel Doors
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE