Advertisement
২১ নভেম্বর ২০২৪
Swastika Mukherjee

ঘুম ভেঙে গেল, সারা ঘরে বাবার চেনা গন্ধ ছড়িয়ে পড়ল, কিন্তু আমি ঘুরে তাকালাম না: স্বস্তিকা

এ যে কেবল মাত্র কল্পনা, তা নিজেও জানেন স্বস্তিকা। কিন্তু নিজেই ঘোর কাটাতে চাইছেন না তিনি। বিশ্বাস করতে চাইছেন, সত্যিই বাবা এসেছিলেন।

স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়।

স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২৪ ২৩:৫১
Share: Save:

জীবনের দুটো অধ্যায় থাকে। প্রথমটা বাবা-মায়ের ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠা। দ্বিতীয়টা তাঁদের স্মৃতি আঁকড়ে এগিয়ে যাওয়া। মাথার উপর থেকে যে কোনও একটা স্তম্ভ সরে গেলেই বদলে যায় জীবনের বহু সমীকরণ। তার মধ্যেই কখনও স্বপ্নে বা কখনও ভাবনায় বার বার ফিরে ফিরে আসে তাঁদের স্মৃতি। এমনই এক মন ভার করা লেখা লিখলেন স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়।

২০২০ সালের ১১ মার্চ বাবাকে হারিয়েছিলেন স্বস্তিকা। একটা সময় সন্তু মুখোপাধ্যায় স্টুডিয়ো থেকে বাড়ি এলে ঘরে একটা গন্ধ ছড়িয়ে পড়ত। সেই গন্ধই হঠাৎই শনিবার রাতে ছড়িয়ে পড়ে স্বস্তিকার বাড়িতে। ঘুম ভেঙে যায় অভিনেত্রীর। রবিবার স্মৃতিতে ডুব দিয়ে স্বস্তিকা লিখলেন, “কাল রাতে ঘুমটা হঠাৎ ভেঙে গেল। সেই চেনা গন্ধটা নাকে আসতেই উঠে পড়লাম। গন্ধটা পেয়ে জেগে গিয়েছিলাম, নাকি জেগে গিয়ে গন্ধটা পেলাম, ঠিক ঠাহর করতে পারলাম না। বাবা ষ্টুডিয়ো থেকে বাড়ি ফিরলেই বাড়িটা যেমন ব্যস্ত হয়ে উঠত, কাল রাতে ঠিক তেমনটা হল। আর সেই ঘাম, পারফিউম, ইউডি কোলন মেশানো গন্ধটা বাড়িময় ঘুরপাক খাচ্ছিল। আমি বালিশে মাথা রেখেই ভাবছি, আচ্ছা বাবা কি সত্যি বাড়ি ফিরেছে?”

স্মৃতি হাতড়ে মনের কথা লিখেছেন স্বস্তিকা। বাড়ি ফিরে রোজ শৌচালয়ে ঢুকে পা ধুতেন সন্তু। তন্দ্রা অবস্থায় সেই ঘোরেই ডুবে ছিলেন তিনি। অভিনেত্রী লিখেছেন, “তার পরই বাথরুমে ঢুকল বাবা, রোজ যেমন যেত পা ধুতে। জল পড়ার আওয়াজও পেলাম। ফুলকি পায়ে পায়ে ঘুরছিল বলে আবার ফুলকিকেও স্বভাববশত কত কিছু বলল। এমনিতে ফুলকি গলা দিয়ে নানান স্বর বার করে আদুরে ভাষায় কথা বলে, কিন্তু কাল রাতে বলল না। বা বলেছে হয়তো আমি শুনতে পেলাম না।”

সেই ঘোর নিয়ে স্বস্তিকা আরও লেখেন, “গাঢ় গেরুয়া রঙের পাঞ্জাবিটা পরে ছিল বাবা। বাথরুম থেকে বেরিয়ে বলল, ‘দাঁড়া একটু বসতে দে, মামনি আমার বড় গ্লাসটায় জল দে তো! বলে নিজের ঘরে চলে গেল। আমি সেই একই ভাবে ডান পাশ ফিরে বালিশে মাথা দিয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে ভাবছি, আমি কখন বাড়ি ফিরেছি জিজ্ঞেস করল না তো? তা হলে কি ভুলে গেল যে আমি বাড়িতেই আছি? কত কিছু ভাবলাম! ওই চেনা গন্ধটা নাকে নিয়েই, কিন্তু ডান পাশ থেকে আর বাঁ পাশে ফেরা হল না। বাড়িতে পুজো, সকাল সকাল উঠে পড়েছি, তখনও গন্ধটা নাকে লেগে আছে। আমি তো ঘুমোচ্ছিলাম না, আমার পরিষ্কার মনে আছে, আমি চেয়ে ছিলাম। খালি কোনও একটা অজ্ঞাত কারণে পাশ ফিরিনি, উঠেও যাইনি। ঘরের দরজা খোলা, তাকালেই বাবাকে দেখতে পেতাম। কিন্তু তাকালাম না। অথচ পাঞ্জাবির রংটা তো ঠিক মনে আছে।”

বাবা  সন্তু মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে  স্বস্তিকা।

বাবা সন্তু মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে স্বস্তিকা।

কেন এমন ঘোরে ছিলেন, কেন এমন ভাবনা ঘিরে ধরল, তা নিয়ে পরের দিন ভাবলেন স্বস্তিকা। তিনি লিখলেন, “দিন গড়িয়ে সন্ধে নামার আগে ছাদে উঠে খুব মন দিয়ে ভাবলাম। রাত হতে চলল এখনও ভাবছি। এক বার ঘুরে তাকালেই বাবাকে দেখতে পেতাম। কত বছর দেখিনি। তাকালাম না কেন? উঠে গেলাম না কেন? স্বপ্ন হলে সকালবেলা ঘুম থেকে ওঠার পরে বাবার গায়ের গন্ধটা পেতাম?”

এ যে কেবল মাত্র কল্পনা, তা নিজেও জানেন স্বস্তিকা। কিন্তু নিজেই ঘোর কাটাতে চাইছেন না তিনি। বিশ্বাস করতে চাইছেন, সত্যিই বাবা এসেছিলেন। তাই স্বস্তিকা লিখেছেন, “মাসিকে একটা কথাও জিজ্ঞেস করিনি।

যদি মাসি বলে, না কেউ আসেনি তো! কী জানি, পুজোর কটা দিন আমার কাছে থাকবে বলে বাড়ি ফিরল হয়তো। আবার যদি আসে, আমি যদি আবার দেখতে না পাই, যদি ডাকে শুনতে না পাই, এই ভয়ে ঘুমোতে পারি না। কত ওষুধ খাই তাও পারি না। যদি বাবা এসে ডাকে, আমি ভুলে গিয়েছি আর অপেক্ষা করি না ভেবে যদি সাড়া না পেয়ে চলে যায়!”

কল্পনা থেকে বেরোতে চান না স্বস্তিকা। এই ঘোরেই রয়েছে বাবার হদিস। এই কল্পনায় ডুব দিলেই জীবন্ত হয়ে ওঠেন বাবা। ঠিক যেন সব আগের মতো। শুধু তাঁকে ছোঁয়া যায় না। অভিনেত্রীর পোস্টে আকুতি, “আর তো দেখতে পাব না। সবার বাবারা ভাল থাকুক। সন্তানেরা তাদের আগলে রাখুক। চলে গেলে সব ছাই।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy