সুতপা-ইরফান। ছবি: সংগৃহীত।
যথার্থই বলেছেন সুতপা শিকদার। দীর্ঘ ৩৫ বছরের সঙ্গী ইরফান খানের মৃত্যুকে ব্যক্তিগত শোক বলতে নারাজ স্ত্রী সুতপা। কারণ অভিনেতার অকালপ্রয়াণ যে আসলে কত মানুষের বুকের ভিতরটা মুচড়ে দিয়েছে, দিচ্ছে, তার নজির দেশ-বিদেশ থেকে আসা শত-সহস্র শোকবার্তা। উপচে পড়া সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্ট। আসলে স্বপ্নালু চোখদুটো নিয়ে যখন পর্দায় আসতেন ইরফান, দর্শক তাঁর মধ্যে দেখতে পেতেন নিজেদের। মধ্যবিত্ত, ছাপোষা, সাধারণ, ধরাছোঁয়ার মধ্যে থাকা সে সব স্বপ্ন, সে সব ‘অ্যাচিভমেন্ট’ পর্দায় বাস্তব করতে জানতেন ইরফান। সুইৎজ়ারল্যান্ডের পাহাড়ে রোম্যান্স কিংবা একা হাতে বিশ জন গুন্ডাকে ধরাশায়ী করতে হয়নি তাঁকে ‘নায়ক’ হওয়ার জন্য। রাজস্থানের প্রত্যন্ত প্রান্ত থেকে দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামায় একরাশ স্বপ্ন নিয়ে পড়তে আসা সেই ‘সাধারণ’ ছেলেটা ধীরে ধীরে এক সমান্তরাল ‘খান’ সাম্রাজ্য তৈরি করে ফেলেছিল হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে। এবং তার বাইরেও। যে ছেলেটিকে স্মরণ করে ‘অ্যাকাডেমি অব মোশন পিকচার্স’-এর টুইট-বার্তা, ‘...অ্যান ইনস্পিরেশন টু মিলিয়নস, হি উইল বি গ্রেটলি মিসড।’
লক্ষাধিক ভক্ত তো বটেই, ইরফান অনুপ্রেরণা তাঁর দুই ছেলে আর স্ত্রীর কাছেও। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে ২৫ বছরের বিবাহিত জীবন সম্পূর্ণ হয়েছিল এনএসডি-র দুই ব্যাচমেট সুতপা আর ইরফানের। প্রথম ছবির রিজেকশনে হাউ হাউ করে কান্নায় ভেঙে পড়া ইরফানের পাশে সে দিনও যেমন ছিলেন সুতপা, তেমনই মারণব্যাধির সঙ্গে তাঁর লড়াইয়ে হাল ছাড়েননি বাঙালি কন্যা। সুতপার কথায়, ইরফানের চলে যাওয়া তাঁর কাছে কোনও ‘লস’ নয়, এক প্রকার প্রাপ্তিই। এক দীর্ঘ বিবৃতিতে নিজের উপলব্ধি উজাড় করে দিয়েছেন সুতপা, ‘একটা অভিযোগ রয়েছে ওর প্রতি যে, আমাকে সারা জীবন ‘স্পয়েল’ করেছে। জীবনের প্রতি ওর দৃষ্টিভঙ্গি, পারফেকশনের প্রতি ওর প্যাশন, আমাকে কোনও বিষয়ই সাধারণ ভাবে নিতে শেখায়নি। শোরগোল-বিশৃঙ্খলার মাঝেও ও একটা ছন্দ খুঁজে নিতে জানত ঠিক।’ নিউরোএন্ডোক্রাইন টিউমর ধরা পড়ার পরের দেড়-দু’বছরের টালমাটাল লড়াই-পর্বকে সুতপা তুলনা করেছেন নাটকের মধ্যকার এক অঙ্কের সঙ্গে। অভিনয়ের সেই মাস্টারক্লাসের কনডাক্টর ইরফানই। চিত্রনাট্যের মতো হাতে এসে পড়া ডাক্তারের রিপোর্ট যখন অনভিপ্রেত বার্তা বয়ে আনছে একের পর এক, তখনও জীবনে ফেরার গান গেয়েছেন তাঁরা। ২০১৮ সালে বজ্রপাতের মতো খবরটা আছড়ে পড়ার পরে সুতপা সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছিলেন, ‘...মাই ফ্যামিলি উইল সুন জয়েন ইন দিস ডান্স অব লাইফ!’
জীবনের অঙ্গুলিহেলনে পা মেলাতে শিখে গিয়েছে ইরফানের দুই উত্তরসূরি। বাবিল আর আয়ান যে বাবার দেখিয়ে দেওয়া পথেই নৌকা ভাসাতে পারবে, সে ভরসা রয়েছে সুতপার। বাবিল সোশ্যাল মিডিয়ায় ধন্যবাদ জানিয়েছেন সকলকে। রাতে ফুটে সকালে ঝরে যাওয়া জুঁই ফুল ছিল ইরফানের প্রিয়। তাঁর কবরস্থানে সেই ‘রাত কি রানি’র চারা লাগাবেন সুতপা, অয়ন আর বাবিল। অসময়ে তার সুবাস মনে করিয়ে দেবে সেই ‘সাধারণ’ নায়ককে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy