Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Aro Ek Prithibi Review

কেমন হল অতনু ঘোষের নতুন ছবি ‘আরো এক পৃথিবী’, জেনে নিন আনন্দবাজার অনলাইনে

নিত্যজীবনে রাস্তাঘাটে ক’জনকে দেখি আমরা? পরিচালক বোধ হয় নজর করেছিলেন। তাই সযত্নে একটি গল্পও বুনেছেন।

a scene from the film Aro ek prithibi

সাধারণত কৌশিকের অভিনয় এমন ভাবে দর্শকের চোখ টানে, যে সঙ্গে অন্য কেউ থাকলে তিনি হয়তো আড়াল হয়ে যান। কিন্তু তাসনিয়ার ক্ষেত্রে তেমনটা হয়নি। ছবি: সংগৃহীত।

পৃথা বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৪:৫৭
Share: Save:

শৈশব, স্কুলের পড়াশোনা, কলেজ পেরিয়ে চাকরি বা ব্যবসা। তার পর ধীরে ধীরে বাড়ি-গাড়ি-সংসার। ইএমআই-লোন শেষ করে অবসর। বেশির ভাগ মানুষের জীবন এ ভাবেই কেটে যায়। কিংবা বলা ভাল, মধ্যবিত্তের জীবন এ ভাবেই কাটে বলে সকলের ধারণা। জীবন মানেই কি এই একই ঘটনাক্রম? আদতে তা নয়। পৃথিবী জুড়ে কত রকম মানুষের বাস। তাঁদের কত ধরনের জীবনযাপন, নানা রকম অভিজ্ঞতা, নানা রকম দর্শন। রাস্তায় বেরোলে হয়তো এমন অনেক মানুষকে পাশ কাটিয়ে আমরা চলে যাই, যাদের জীবনটা আমাদের চেয়ে অনেকটাই আলাদা। কিন্তু সে ভাবে খেয়াল করি না, বা ভেবেও দেখি না। পরিচালক অতনু ঘোষ হয়তো এমনই কিছু মানুষকে ভাল করে নজর করেছিলেন। তাই তেমনই কিছু চরিত্র নিয়ে সযত্নে একটি গল্প বুনেছেন।

প্রতীক্ষা (তাসনিয়া ফারিণ) আর অরিত্রের (সাহেব ভট্টাচার্য) সদ্য বিয়ে হয়েছে। অরিত্র এনআরআই। তাই বিয়ের পরই সে দু’সপ্তাহের মধ্যে লন্ডন পাড়ি দেয়। পরে ভিসা পেয়ে লন্ডন পৌঁছয় প্রতীক্ষা। কিন্তু স্বামীর সঙ্গে আর কিছুতেই যোগাযোগ করতে পারে না। অচেনা-অপরিচিতদের শহরে সে আয়েষা (অনিন্দিতা বসু) এবং শ্রীকান্তের (কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়) মতো কিছু বন্ধু খুঁজে পায়। অনেকেই তাকে উপদেশ দেয় বাড়ি ফিরে যাওয়ার। তবে স্বামীর খোঁজ না পেলে দেশে ফিরবে না বলে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ প্রতীক্ষা। ছবির মূল গল্প প্রতীক্ষার খোঁজ নিয়েই। প্রতীক্ষা কী ভাবে খোঁজ শুরু করে, কী করে এগোয়, সেই খোঁজের মাধ্যমেই নানা রকম মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয় প্রতীক্ষার। কখনও কখনও সে কেন অচেনা মানুষদের ভরসা করছে, তা প্রথমে বোঝা না গেলেও ক্রমশ বোঝা যায়। প্রতীক্ষার অতীতের গল্পও ধীরে ধীরে ফ্ল্যাশব্যাকে স্পষ্ট হয় চিত্রনাট্যে।

‘ময়ূরাক্ষী’, ‘রবিবার’ এবং ‘বিনি সুতোয়’-র মতো একটি ট্রিলজি এর আগে বানিয়েছিলেন পরিচালক। তাঁর ছবিতে যে সূক্ষ্ম জীবনবোধ ধরা পড়ে, তার একটি নির্দিষ্ট দর্শক তৈরি হয়ে গিয়েছে এত দিনে। এই ছবিতেও গল্প বলার ধরন নিয়ে খানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন পরিচালক। অনেকে ছবির গতি প্রথমার্ধ্বে শ্লথ লাগতে পারে। আবার অনেকের এই গল্প বলাটাই ইউরোপীয় ঘরানার ছবির কথা মনে করিয়ে দিতে পারে। বাস্তবের কাছাকাছি ছবি মানেই যে তাতে জীবনের খামখেয়ালিপনা থাকবে না, অপরাধ, হিংসা থাকবে না বা একটু ‘অ্যাবসার্ডিটি’ থাকবে না— এই ছবির মাধ্যমে সেই ধারণাই ভাঙার চেষ্টা করেছেন নির্মাতা।

Anindita Bose in the film Aro ek prithibi

অপরাধের সঙ্গে কোনও না কোনও ভাবে যুক্ত থাকলেই কি কেউ অপরাধী হয়ে যান? এই প্রশ্নকে উস্কে দেয় অতনুর ছবি। ছবি: সংগৃহীত।

ছবির মূলধন অবশ্যই তাসনিয়ার অভিনয়। এর আগে তাঁকে অনেকেই ‘কারাগার’-এ দেখেছেন। সেখানে চঞ্চল চৌধুরীর সামনে হয়তো অনেকেই ধরতে পারেননি তাসনিয়া আসলে কতটা শক্তিশালী অভিনেত্রী। এই ছবিতে অবশ্য সেটা উসুল করে নিয়েছেন তাসনিয়া। তাঁর চরিত্রটা এখানে বেশ জটিল। কৈশোর থেকে প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থা— অনেকটা সময় জু়ড়ে ধরা হয়েছে তাঁর চরিত্রটা। নানা রকম স্তর রয়েছে। কিন্তু গোটা ছবিতে কোনও এক মুহূর্তের জন্যও তাঁর অভিনয় নড়বড় করেনি। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে বেশ কিছুটা স্ক্রিনটাইম রয়েছে তাঁর। সাধারণত কৌশিকের অভিনয় এমন ভাবে দর্শকের চোখ টানে যে, সঙ্গে অন্য কেউ থাকলে তিনি হয়তো আড়াল হয়ে যান। কিন্তু তাসনিয়ার ক্ষেত্রে তেমনটা হয়নি।

শ্রীকান্তের মতো ভবঘুরে হাল আমলে কেমন হবে? পরিচালকের ভাবনাকে পর্দায় প্রাণ দিয়েছে কৌশিকের অভিনয়। তাঁর মতো সাবলীল অভিনেতা এই মুহূর্তে টলিউডে হাতেগোনা।

অপরাধের সঙ্গে কোনও না কোনও ভাবে যুক্ত থাকলেই কি কেউ অপরাধী হয়ে যান? এই প্রশ্নকে উস্কে দেয় অতনুর ছবি। প্রান্তিক মানুষদের নিয়ে গল্প বোনার প্রয়াস মন্দ নয়। তবে ‘ময়ূরাক্ষী’ বা ‘বিনিসুতোয়’ দেখে দর্শকের যে ভাবে মন যায়, এই ছবিতে ততটা না-ও ভরতে পারে। চিত্রনাট্যে অনেক কিছু নাটকীয় কাণ্ড রয়েছে বটে, কিন্তু ছবির ট্রিটমেন্ট তাকে নাটকীয় করে তোলেনি। অত্যন্ত দক্ষ হাতে সেগুলি নিত্যজীবনে আর পাঁচটা স্বাভাবিক ঘটনার মতোই দেখানো হয়েছে। এটা এক দিকে যেমন ভাল, অন্য দিকে একটু সমস্যারও। কারণ প্রতীক্ষার চরিত্রটা ছাড়া আরও কারও সঙ্গেও দর্শক সে ভাবে একাত্মবোধ করে না। তাই যাঁকে নিয়ে খোঁজ চলছে সেই অরিত্রের খোঁজ পাওয়ার পর খুব একটা আনন্দ হয় না। বা শ্রীকান্তের বেদনার গল্প শুনে কখনও চোখের কোণটা ভিজে যায় না। তবে এই সবের মাঝে পাওনা একটাই— চরিত্রগুলি ধূসর হলেও তাঁদের প্রতি দর্শকের কোনও রকম রাগ বা খারাপ লাগার জায়গা তৈরি হবে না।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy