Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
Entertainment News

মুভি রিভিউ: ‘হামি’ দেখিয়ে দিল আমরা আদ্যোপান্ত ক্লিশে

শৈশব যে আগে জানত না হামি এ ভাবেও মারবে!

‘হামি’র বন্ধুরা।

‘হামি’র বন্ধুরা।

সুচন্দ্রা ঘটক
শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৮ ১৮:৩৭
Share: Save:

স্কুলের প্রথম শ্রেণিতে সহপাঠীর কপালে সিঁদুর পরালে কার বাবা-মা বকুনি দেননি? নাকি ছোটবেলায় ক্লাসের কোনও বন্ধুর ব্যাগে ‘আই লাভ ইউ’ লেখা চিঠি দেননি ৩৫ পেরনো অভিভাবকেরা?

বাস-কাকু ভাল হলেও মন্দ। মন্দ হলেও মন্দ। এ কথাও কি ছোটবেলায় কারও মুখে শোনেননি এ কালের বাবা-মায়েরা? যে মা ছোট মেয়েটিকে নিয়ে ছবি দেখতে বসে ভেবেছিলেন স্কুলবাসের মিশুকে চালক চাচাজি ছবির মাঝে ফাঁসবেন না, তিনিই ব্যতিক্রমী।

এক বাড়াবাড়ির জবাবে কি আর এক দফা বাড়াবাড়িই হওয়া নিশ্চিত করেছে এ সমাজ? এতটাই কি ক্লিশে হতে হবে?

ফিনকি দিয়ে বেরিয়ে আসতেই পারে বিরক্তি। তবু উত্তরটা জানা। প্রতিটি একঘেয়ে আচরণের একটি একঘেয়ে শৈল্পিক পাল্টা উত্তর আসবেই। তা যা-ই হোক— চলচ্চিত্র, ধারাবাহিক কিংবা উপন্যাস। তা দেখতে হবে, পড়তেও হবে। কারণ তার প্রয়োজন আছে।

কিন্তু তাই বলে আবারও স্কুল, আবারও অভিভাবক, আবারও তা ঘিরে নাটক? ঠিক তাই।

আবারও সেই স্কুল, সাজানো ক্লাসঘর, ছোট ছোট বেঞ্চ, বন্ধুর টিফিন বক্স। এবং সে সব হঠাৎ অচেনা দেখানোর ভান।

তবে আছে কি কিছু নতুনত্ব? রামধনু দেখা দর্শকের মনে এমন প্রশ্ন উঠতেই পারে। শুধু রামধনু কেন, খবরের কাগজ পড়া, টেলিভিশনে দিন-রাত নিউজ চ্যানেল দেখা, রোজ সন্তানের স্কুলের অভিভাবকদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ফলো করা— কারও নতুন লাগবে না কোনও ঘটনা। নতুনত্বের জন্য কিছু ছবি হয় না? এটিও তা-ই।

আরও পড়ুন, ‘হামি’ মানে কী? উত্তরে ওরা বলল...

বরং আবারও নন্দিতা রায়-শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় দেখিয়ে দিয়েছেন, আমরা আদ্যোপান্ত ক্লিশে। আমাদের আচরণ, অভ্যাস, ব্যাকরণ— সব ক্লিশে। নিজেরা কতটা ক্লিশে, তা-ও তো জানতে হবে। যাঁরা যেমন, তাঁদের তো সে ভাবেই গল্প বলতে হবে। আয়না নিয়ে দাঁড়িয়েছেন এক দল শিল্পী। উপলক্ষ নতুন ছবি ‘হামি’।

যাঁদের বসিয়ে গল্প বলছেন, তাঁরা সকলেই জানেন সে গল্পের শেষটা। যে বাসচালকের আচরণ নিয়ে ধুন্ধুমার, তাঁকেও চেনেন প্রায় সক্কলে। তবু একঘেয়ে গল্পগুলো যে ঠিক এ ভাবেই বলতে হয়। কারণ, একঘেয়েমির জবাবও একঘেয়েমিতেই হয়।

তবে যে সব গল্প বলা প্রয়োজনীয়, সে সব গল্পের ক্ষেত্রে হ্যাঁ বাচক বিশেষণ ব্যবহার করাই শ্রেয়। তাই বলা ভাল, চেনা ছকের গল্প বলার ভঙ্গিও চেনা ছকেই বয়েছে। আর সেই ছকটিও বেশ সরল। কিছু সরল সমীকরণ সরলরেখায় বয়ে চলে। সেই সরলরেখা এখন সচেতনতা ঘেঁষা। ফলে শিশু, বৃদ্ধ, মাঝবয়সী— সকলেই সেই সচেতনতার জ্বরের শিকার। এ পর্যন্ত ভালই ছিল। কিন্তু এক সচেতনতার পাল্টা সচেতনতাই যেন জটিল করে দিল শৈশবটা।


‘হামি’র দৃশ্যে ব্রত এবং তিয়াসা।

এককালে স্কুলজীবন ছিল সরল বন্ধুত্বের। এ সময়টা তেমন নয়। তা ঠিক। আবার ভুলও। তবে ঠিক এবং ভুল, সত্যের দু’পিঠ স্বীকার করার মতো প্রাপ্তমন দেখা গেল না কেন ছবিতে? অতি সচেতন অভিভাবকদের সন্তানদের কী পরিণতি হতে পারে, তা দেখালেন বটে শিক্ষিকারা। দেখা গেল অতি-সচেতনতাকে খণ্ডন করার প্রয়াস। তা তো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই বলে কি চারপাশে যা যা ঘটছে, তা মিথ্যা করে দেওয়া যায়? যে মা সন্তানকে স্কুলে পাঠিয়ে চিন্তায় থাকে, তার চিন্তা কি সচেতনতার আবডালে অপ্রাসঙ্গিক করে দেওয়া যায়? যায় না। তাই একরৈখিক সরল ভাবনাভঙ্গি সত্যকে আসলে জটিল করে দেয় যেন। সংবাদমাধ্যম, সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া সমস্যা যেমন একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ নয়, তেমন, তা বাদ দেওয়ার মতো কি?

সেই জটিলতার মাঝে পড়েই যেন এখন আর কোনও ক্লাসে সহজে ‘হামি তুমহাকে মারবে!’ বলে বকুনি দেন না আর শিক্ষকেরা।

শৈশব যে আগে জানত না হামি এ ভাবেও মারবে!

আরও পড়ুন, প্রেম নিয়ে কথা বলা কি ইশার বারণ?

অ্যাংলো ইন্ডিয়ান ক্লাস টিচারের মুখে সেই কথা যে এ ভাবে রূপ বদলাবে কে তা জানত! বদলাতে থাকা শৈশবে বদলেছে সব রকম ‘হামি’র ব্যাখ্যা। সঙ্গে মারেরও।

অতঃপর শৈশব থরথর অতি সচেতনার ঝড়ে।

আর সেই ঝড় ফুটে উঠেছে দারুণ ভাবে অভিনয়, ক্যামেরা, পরিচালনা এবং মানানসই সেট ডিজাইনে। লাল্টু-মিতালীর ভূমিকায় শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-গার্গী রায়চৌধুরী স্বভাবতই সহজ, তেমনই সহজ চুর্ণী গঙ্গোপাধ্যায় ও সুজন মুখোপাধ্যায়ের অভিনয়। অপরাজিতা আঢ্য শুধু ‘অ-সাধারণ’, তবে তাঁর অভিনয়ে নয়। চরিত্রটিই যেন বাস্তবের থেকে একটু দূরে। যে ব্যালান্স তনুশ্রীশঙ্করের প্রিন্সিপালের চরিত্রে আছে, তা যেন অপরাজিতার চরিত্রে নেই। কিন্তু সব ত্রুটি ধুয়ে যায় চিনি আর ভুটুর কেমিস্ট্রিতে। সব জটিলতা ভুলিয়ে, স্কুল-জীবনে ফেরত নিয়ে যাওয়ার জন্য একাই একশো এই দুই খুদে সদস্য!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE