ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মটি
পরিচালনা: অরিত্র মুখোপাধ্যায়
অভিনয়: ঋতাভরী, সোমা,
সোহম, মানসী
৬/১০
সৌদি আরবের কথা আলাদা। সেখানে নারী বিষয়ক সম্মেলন হচ্ছে, একজনও নারী উপস্থিত নেই। তুলনায় ভারত তো স্বর্গ! নারীরা রাজনীতি থেকে খেলার মাঠ কাঁপাচ্ছেন। সরস্বতী পুজোয় এ বার দু’-তিনটে জায়গায় পূজারি পুরুষ নয়, নারী। দেশ, সমাজ এগোচ্ছে!
এগুলো এক দলের কথা। আর এক দল কথা শুরু করে পরের লাইনেই ‘কিন্তু’তে চলে যান। ‘ঠিকই, মেয়েরা অনেক কিছু করছে, কিন্তু...’ ওই ‘কিন্তু’ এলেই মুশকিল। কিন্তু ওরা অন্য রকম মেয়ে। কিন্তু আমার ঘরে ও সব চলবে না। কিন্তু মেয়েরা পুরুষ নয়... এই দলকে সর্বত্র পাবেন। বাসে, মেট্রোয়। ভিড়ে, একান্তে। অফিসে, নিজের ঘরেও। এই কিন্তু-দলের সদস্যরা পুরুষ, নারীও। যিনি ‘ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মটি’ দেখেছেন, বা দেখবেন, তিনিও নন তো?
প্রযোজক জুটি নন্দিতা রায় এবং শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় নারী দিবস উপলক্ষে তৈরি এই ছবি পরিচালনার সুযোগ দিয়েছেন অরিত্র মুখোপাধ্যায়কে। নামকরা প্রযোজনা সংস্থা বাজেট বুঝে তারকা ও চরিত্রাভিনেতার ভারসাম্যটা রাখতে জানে। গানের ক্ষেত্রে আপস করে না, নতুন পরিচালককে যথেষ্ট স্বাধীনতা দেয়, বিপণনে দক্ষ। হাতে রইল কী? ভাল আইডিয়া, ভাল গল্প, ভাল সংলাপ, সব নিয়ে একটা জম্পেশ চিত্রনাট্য। উপকরণ সব তৈরি, রান্নাটা শুধু বাকি।
গল্পটা মন্দ নয়। শবরী (ঋতাভরী চক্রবর্তী) নামের মেয়েটি পুজো করে। ঘরের নিভৃতিতে নয়, জনসমক্ষে। শ্রাদ্ধের কাজ করায়। বিয়েতে পৌরোহিত্য করে কিন্তু কন্যাদানের মন্ত্র পড়ে না, তার পুজো-শেখানো বাবার বারণ। সে কলেজে সংস্কৃত পড়ায়, মঞ্চে দ্রৌপদীকে উপস্থাপন করে এ যুগের নারী-ভাবনার মোড়কে। সেই মেয়েই বিয়ের পরে শ্বশুরবাড়িতে এসে জোর ধাক্কা খায়। একটু আগে বলা ‘কিন্তু’-দলের ধাক্কা নয়। ভয়ানক গোঁড়া, রক্তচোখ রক্ষণশীলতার ধাক্কা। সেই গোঁড়ামি আসে পঞ্চায়েত-প্রধান শাশুড়ি, জ্যোতিষী পিসিশাশুড়ি, বাতাসিপুর মন্দিরের পুরুষ পুরোহিতের রূপ ধরে। মরমি হাতও যে বাড়ায় না কেউ, তা নয়। তবে দরদি স্বামী বা বিপত্নীক ভাশুরের সেই সহায়তা আশপাশের ঝড়ঝাপটার সামনে নিতান্ত নগণ্য। এই মেয়েরই জয়ের গল্প বলে ‘ব্রহ্মা জানেন’। সিনেমা ইচ্ছেপূরণের কল, কে না জানে! দর্শক তো অবচেতনে জানেনই যে, মেয়েটা শেষে জিতবে। কী ভাবে জিতবে, সেটাই দেখার।
এই ‘কী ভাবে’ দেখানোতেই তো চিত্রনাট্যের মুনশিয়ানা। সেখানটায় যে হোঁচট-ঠোক্কর নেই, বললে ভুল হবে। একটি মেয়ে পুজো, বিয়ে-শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করাচ্ছে শাস্ত্র আর মানবিক নিয়মের মিশেলে। বিয়ের আগে সে খবর মফস্সলবাসী ছেলের বাড়ি জানতেই পারবে না, বিশ্বাস করতে বাধে। মেয়েটাও কেন গোড়া থেকেই সব পষ্টাপষ্টি বলবে না তার হবু বরকে? শবরীর জীবনে আসা দ্বন্দ্বগুলো অনুমেয়, আর সে জন্যই একটু হলেও ক্লান্তিকর। মনে হয়, নারীর অন্য রকম পেশা, শ্বশুরবাড়ির পীড়ন, ‘শরীর খারাপ’, স্ক্রিপ্টে সব একসঙ্গে বাঁধার সদিচ্ছা-দড়িটুকু আছে, কিন্তু তা আলগা। ক্লাইম্যাক্সের সঙ্কট আর তার সমাধান, একটু আগেও খড়্গহস্ত অনেকের ভালমানুষ হয়ে যাওয়াও অতিনাটকীয়। জীবনে অত সহজে যুদ্ধজয় হয়?
তা না হোক। ছবি শেষে বেরিয়ে দেখি, ‘ব্রহ্মা জানেন...’ এর পাশের হলে সমপ্রেম বিষয়ে বলিউডি ছবি চলছে। ছবিগুলোয় যে দর্শকের ভিড়, এ-ও তো কম জয় নয়!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy