(বাঁ দিকে) অবিনাশ তিওয়ারি এবং (ডান দিকে) কেকে মেনন। ছবি: সংগৃহীত।
সারা জীবন সৎপথে হাঁটলে কী পাওয়া যায়? সম্মান? আত্মতৃপ্তি? দিনের শেষে শান্তির ঘুম? কিন্তু তাতে খিদে মেটে? চাহিদার কি কোনও বালাই থাকে না? লোভ ভাল নয়। বাদশাও যে কোনও মুহূর্তে তাঁর সিংহাসন হারিয়ে ফেলতে পারেন। গোলামও নিজেকে গড়েপিটে সেই সিংহাসন ছিনিয়ে নিতে পারে। সিংহাসন একই থাকে। বার বার শুধু জন্মমৃত্যু হয় বাদশার।
ভগবানের ঘরেই শয়তানের জন্ম— এই কথা বার বার আওড়ে গেল ‘বম্বই মেরি জান’। মুম্বইয়ের কুখ্যাত ‘মাফিয়া’ দাউদ ইব্রাহিমের উত্থান, বাবা-ছেলের সম্পর্কের টানাপড়েন, শহর জুড়ে প্রতারণার জাল বিস্তার— সব মিলিয়েই ১০ পর্বের চিত্রনাট্য বুনেছেন সুজাত সওদাগর।
২০১৬ সালে সুজাতের পরিচালনায় মুক্তি পেয়েছিল ‘রক অন ২’। সেই ছবির পরতে পরতে ছিল রোম্যান্স, ড্রামা, মিউজ়িক। প্রায় সাত বছর আগে সুজাত ‘রক অন ২’-এর মাধ্যমে যদি বিরিয়ানি রান্না করে থাকেন তা হলে ‘বম্বই মেরি জান’ কন্টিনেন্টাল ঘরানার খাবারই বটে। সিনেমা থেকে ওয়েব সিরিজ়, রোম্যান্টিক ড্রামা থেকে পিরিয়ড ক্রাইম থ্রিলার ঘরানা— সুজাত যে এই কয়েক বছরে পরিচালনার ক্ষেত্রে ভাঙাগড়ার মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন তা স্পষ্ট ফুটে উঠল ‘বম্বই মেরি জান’-এ।
বৃহস্পতিবার অ্যামাজ়ন প্রাইম ভিডিয়ো ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পায় এই ওয়েব সিরিজ়টি। প্রথম ঝলক মুক্তি পাওয়ার পর দর্শকের একাংশ অনুমান করেছিলেন যে, ‘বম্বই মেরি জান’-এর প্রাণভোমরা হয়ে উঠবেন কেকে মেনন। কিন্তু এই ওয়েব সিরিজ়ের আসল ‘জান’ যে অবিনাশ তিওয়ারি, তা গল্প এগোলেই বোঝা যায়। এস হুসেন জাইদির লেখা ‘ডোংরি টু দুবাই: সিক্স ডিকেডস অফ মুম্বই মাফিয়া’ বইয়ের উপর ভিত্তি করে এই ওয়েব সিরিজ়ের চিত্রনাট্য নির্মাণ করেছেন সুজাত। প্রযোজনার দায়িত্বে ছিলেন ফারহান আখতার।
দাউদ ইব্রাহিম কী ভাবে ধীরে ধীরে মুম্বইয়ের (তৎকালীন ‘বম্বই’) ‘মাফিয়া’ হয়ে উঠলেন, দাউদের সঙ্গে তাঁর পিতা ইব্রাহিম কস্করের কেমন সম্পর্ক ছিল, ছোটা রাজনের সঙ্গে দাউদের প্রথম আলাপের ছোঁয়াও রয়েছে এই সিরিজ়ে। চিত্রনাট্যের প্রয়োজনে যদিও বদলও আনা হয়েছে বহু জায়গায়। কিন্তু দশ পর্বের ঘটনাবহুল সিরিজ় তৈরিতে টান টান উত্তেজনা এতটাই দেরি করে কড়া নাড়ল যে তার আগে দর্শকের ধৈর্যচ্যুতি ঘটতে বাধ্য। এক একটি পর্ব প্রায় ৩৮ থেকে ৫০ মিনিট দীর্ঘ। সিরিজ়ের সূচনা পর্বে কেকে মেনন রাজত্ব করলেও পরের দিকে দর্শকের দৃষ্টি কেড়ে নেবেন অবিনাশ। ‘লয়লা মজনু’ এবং ‘বুলবুল’-এ অভিনয় করে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন সুযোগ পেলে তিনিও কাঁপিয়ে দিতে পারেন। ‘বম্বই মেরি জান’-এ তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েও দিলেন অবিনাশ।
সংলাপহীন অবস্থায় শুধুমাত্র মুখের অঙ্গভঙ্গি দিয়ে দুর্ধর্ষ অভিনয় করেছেন অবিনাশ। অবিনাশের সঙ্গে পাল্লা দিয়েছেন সৌরভ সচদেও। তিনিও কোনও অংশে কম যাননি। এই সিরিজ়ে পার্শ্বচরিত্রের সংখ্যা প্রচুর। সকলের চরিত্রই গুরুত্বপূর্ণ। আমাইরা দস্তুরের পাশাপাশি টেলি তারকা কৃতিকা কামরা এবং ভিভান ভাটেনার কেরিয়ারে এই সিরিজ় নয়া মাইলফলক গড়ে তুলেছে। তাঁদের অভিনয়ও সমান ভাবে নজরকাড়া। নিবেদিতা ভট্টাচার্য-সহ অন্যান্য পার্শ্বচরিত্রের অভিনয় দেখতেও মন্দ লাগবে না। চিত্রনাট্য এবং অভিনয়ের ক্ষেত্রে ‘বম্বই মেরি জান’ পরীক্ষার খাতায় পুরো নম্বর পেয়েছে। কিন্তু রান্নার সময় পদের সংখ্যা বেশি হয়ে গেলে পরিবেশন করতে অনেক সময় দেরি হয়। ‘বম্বই মেরি জান’-এর ক্ষেত্রে বোধ হয় তাই হল।
সিরিজ়টি দেখতে দেখতে মনে হতেই পারে এমন ঘটনা অযথাই দেখানো হয়েছে। দৃশ্যটি বাদ দিলে গল্পে খুব একটা ছন্দপতন হত না। সংলাপ পাকা হাতে লেখা। কিন্তু মাঝেমধ্যে একই ধাঁচের সংলাপ বার বার আওড়ে যাওয়া বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সিরিজ় বহু দূর এগিয়ে যাওয়ার পর একটি ক্যামিয়ো চরিত্রের উদয় হয়েছে যা সত্যি চমকপ্রদই বটে।
তবে দশটি পর্ব জুড়ে প্রায় ১০ ঘণ্টা সময় খরচ করে এই ধীরগতির সিরিজ়টি দর্শক দেখবেন কি না তা নিয়ে সন্দেহ জাগে। কিন্তু সব শেষে ‘বম্বই মেরি জান’-এর রেশ কেটে গেলেও অবিনাশের অভিনয় দীর্ঘ সময়ের জন্য মন ছুঁয়ে যাবে। হাতে পর্যাপ্ত সময় থাকলে এবং পিরিয়ড ক্রাইম থ্রিলার ঘরানা পছন্দ করলে ‘বম্বই মেরি জান’ এক বার দেখা যেতেই পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy