TTP may attack Pakistan Army with US Javelin Missile, know its consequences dgtl
Pakistan Army vs TTP
উড়বে সাঁজোয়া গাড়ি, ধ্বংস হবে বাঙ্কার! পাক ফৌজকে শিক্ষা দিতে ‘কালদণ্ড’ হাতে ঘুরছে টিটিপি
ট্যাঙ্ক ধ্বংসকারী মার্কিন ‘জ্যাভলিন’ নিয়ে প্রশিক্ষণের ভিডিয়ো এ বার প্রকাশ করল পাকিস্তানের বিদ্রোহী গোষ্ঠী টিটিপি। এর ফলে ঘুম ছুটেছে ইসলামাবাদের সেনাকর্তাদের।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২৫ ১৪:০৭
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
ট্যাঙ্ক ওড়ানোর বিধ্বংসী মার্কিন হাতিয়ার। সেই সঙ্গে অসংখ্য আত্মঘাতী ড্রোন। অত্যাধুনিক জোড়া অস্ত্রে শক্তি বাড়াচ্ছে পাক বিদ্রোহী গোষ্ঠী তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান বা টিটিপি। বিষয়টি জানাজানি হতেই ঘুম ছুটেছে ইসলামাবাদের। এর জন্য টিটিপির বিরুদ্ধে চলা অভিযানে যে চরম মূল্য দিতে হবে, তা একান্তে মানছেন রাওয়ালপিন্ডির সেনাকর্তারাও।
০২১৮
সম্প্রতি পাক ফৌজকে হুঁশিয়ারি দিয়ে জোড়া ভিডিয়ো প্রকাশ করে টিটিপি। সেখানে বিদ্রোহীদের ইসলামাবাদের ধ্বংসযজ্ঞের প্রস্তুতি নিতে দেখা গিয়েছে। ভিডিয়োয় তাঁদের হাতে ছিল ট্যাঙ্ক ধ্বংসকারী মার্কিন ‘জ্যাভলিন’ ক্ষেপণাস্ত্র। আর তাই রাওয়ালপিন্ডির জেনারেলদের কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ।
০৩১৮
গত তিন বছরের বেশি সময় ধরে চলা ইউক্রেন যুদ্ধে ফের এক বার নিজের জাত চিনিয়েছে আমেরিকার ‘জ্যাভলিন’। লড়াইয়ের প্রথম দিকে এই ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েই একের পর এক রুশ ট্যাঙ্ক ওড়ায় কিভ ফৌজ। ফলে মস্কোর বাহিনীর পক্ষে দ্রুত অগ্রসর হওয়া সম্ভব হয়নি।
০৪১৮
ইউক্রেনকে গুঁড়িয়ে দিতে টি-৯০ এবং টি-৭২র মতো অত্যাধুনিক ট্যাঙ্কের উপর ভরসা করেছিলেন রুশ জেনারেলরা। সেগুলির বিরুদ্ধে সাক্ষাৎ কাল হয়ে সামনে আসে ওই মার্কিন অস্ত্র। হাতিয়ারটির পোশাকি নাম অবশ্য ‘এফজিএম-১৪৮ অ্যান্টি ট্যাঙ্ক জ্যাভলিন ক্ষেপণাস্ত্র’।
০৫১৮
১৯৯৬ সালে মার্কিন সেনাবাহিনীতে আসে ‘জ্যাভলিন’। রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত ছাড়াও আফগানিস্তান এবং ইরাক যুদ্ধে এর ধ্বংসক্ষমতা প্রত্যক্ষ করেছে বিশ্ব। পাশাপাশি, সিরিয়া এবং লিবিয়ার দ্বিতীয় গৃহযুদ্ধে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ারগুলির তালিকায় নাম রয়েছে আমেরিকার ট্যাঙ্ক ধ্বংসকারী ক্ষেপণাস্ত্রটির।
০৬১৮
১৯৮৯ সালে ‘জ্যাভলিন’-এর নকশা তৈরিতে হাত ছিল যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি প্রতিরক্ষা সংস্থার। সেগুলি হল, টেক্সাস ইনস্ট্রুমেন্টস, মার্কিন ম্যারিয়েটা (বর্তমান রেথিয়ন টেকনোলজ়িস) এবং লকহিড মার্টিন। তবে এর উৎপাদনের দায়িত্ব পায় শেষের দু’টি কোম্পানি। উল্লেখ্য, পঞ্চম প্রজন্মের স্টেলথ শ্রেণির লড়াকু জেট এফ-৩৫ লাইটনিং টু নির্মাণের সুবাদে লকহিড মার্টিনের দুনিয়া জুড়ে আলাদা পরিচিতি রয়েছে।
০৭১৮
‘জ্যাভলিন’-এর সবচেয়ে বিপজ্জনক বিষয়টি হল, অতি সাধারণ সৈনিকও এটিকে ব্যবহার করতে পারেন। ক্ষেপণাস্ত্রটির একটি লঞ্চার রয়েছে, যেটি কাঁধে রেখে লক্ষ্যবস্তুর দিকে ‘জ্যাভলিন’কে ছোড়া যায়। এক বার লঞ্চ হওয়ার পর ক্ষেপণাস্ত্রটিকে আর কোনও ভাবেই ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। অর্থাৎ, এটি ‘ফায়ার অ্যান্ড ফরগেট’ শ্রেণির ক্ষেপণাস্ত্র।
০৮১৮
‘জ্যাভলিন’-এর ওজন আনুমানিক ২৩ কেজি। এর লঞ্চার সাধারণত ৬.৪ কেজির হয়ে থাকে। ২,৫০০ মিটার পাল্লার এই মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র হেলিকপ্টার ধ্বংস করতেও পটু। ৮.৪ কেজি বিস্ফোরক নিয়ে নিখুঁত নিশানায় হামলা চালাতে পারে এই হাতিয়ার।
০৯১৮
সূত্রের খবর, এক একটি মার্কিন ‘জ্যাভলিন’-এর দাম দু’লক্ষ ডলার। ট্যাঙ্ক, সাঁজোয়া গাড়ি, হেলিকপ্টারের পাশাপাশি এর সাহায্যে অনায়াসেই ওড়ানো যেতে পারে শত্রুর বাঙ্কার। আর তাই টিটিপির হাতে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র দেখে ঘুম উড়েছে পাক ফৌজের।
১০১৮
আফগানিস্তান সীমান্ত লাগোয়া পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশ টিটিপির গড় হিসাবে পরিচিত। তাঁদের প্রকাশ করা ভিডিয়োয় সশস্ত্র গোষ্ঠীটির যোদ্ধাদের ‘জ্যাভলিন’-এর প্রশিক্ষণ নিতে দেখা গিয়েছে। গত কয়েক বছরে বহু বার এই এলাকার ফৌজি বাঙ্কার বা কনভয়ে হামলা চালিয়েছে টিটিপি। আর তাতে প্রাণ গিয়েছে ইসলামাবাদের কয়েক ডজন সৈনিক ও অফিসারের।
১১১৮
২০২১ সালে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করে আমেরিকা। ওই সময়ে বিপুল পরিমাণ হাতিয়ার কাবুলে ফেলে আসে মার্কিন বাহিনী। হিন্দুকুশের কোলের দেশটি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ফৌজ সরতেই দ্বিতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় ফেরে তালিবান। ফলে পড়ে পাওয়া চোদ্দা আনার পর ওই অস্ত্রের অধিকারী হন বর্তমান আফগান শাসকেরা।
১২১৮
ইসলামাবাদের ফৌজি কর্তাদের অভিযোগ, টিটিপিকে জ্যাভলিন সরবরাহ করছে আফগান তালিবান। ফলে দিন দিন সাহস বাড়ছে বিদ্রোহীদের। পাক সংবাদমাধ্যম দ্য ডনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেনার এক পদস্থ আধিকারিক বলেছেন, ‘‘দেশের ভিতরে মার্কিন জ্যাভলিনের কোনও অস্তিত্ব নেই। তবে খাইবার পাখতুনখোয়ার সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে এর সাহায্যে আক্রমণ হতেই পারে।’’
১৩১৮
অন্য দিকে আর একটি পাক সংবাদমাধ্যম দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউনে মার্কিন ‘জ্যাভলিন’ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পাকিস্তানের সাবেক সেনাকর্তারা। অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল খালেদ জামাল আনসারির কথায়, ‘‘ক্ষেপণাস্ত্রটির সবচেয়ে বিপজ্জনক দিক হল এর সাহায্যে সীমান্তের যে কোনও ফৌজি পোস্ট ধ্বংস করতে পারে টিটিপি। সে ক্ষেত্রে সীমান্তে জমি হারানোর আশঙ্কা থাকবে।’’
১৪১৮
আফগান তালিবানের হাতে থাকা মার্কিন ‘জ্যাভলিন’-এর সংখ্যা নিয়ে আবার চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে রাশিয়া। মস্কোর প্রতিরক্ষা দফতরের তরফে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, কাবুলের বর্তমান সরকার এবং যোদ্ধাদের কাছে ১০০টির বেশি ‘জ্যাভলিন’ রয়েছে। তবে টিটিপি কাছে কত সংখ্যক ট্যাঙ্ক ধ্বংসকারী ক্ষেপণাস্ত্র আছে, তা স্পষ্ট নয়।
১৫১৮
দ্বিতীয় ভিডিয়োয় পাক সেনাঘাঁটিতে স্বশস্ত্র বিদ্রোহীদের ড্রোন হামলা চালাতে দেখা গিয়েছে। টিটিপির মানববিহীন উড়ুক্কু যান সেখানে পর পর দু’টি বোমা ছুড়ে মারে। ফলে বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে গোটা এলাকা। ওই ঘটনায় কারও মৃত্যু হয়েছে কি না, তা জানায়নি ইসলামাবাদ।
১৬১৮
টিটিপির এ হেন বাড়বাড়ন্তের মধ্যেই পাল্টা অভিযানে নেমেছে পাক ফৌজ। চলতি বছরের ১০ এপ্রিল খাইবার পাখতুনখোয়ার লোয়ার দির জেলায় তিমেরগারা পাহাড়ে দু’পক্ষের মধ্যে লম্বা সময় ধরে চলে তুমুল লড়াই। তাতে বিদ্রোহী গোষ্ঠীটির দু’জন নেতার মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসলামাবাদ।
১৭১৮
টিটিপিকে নিকেশ করতে আফগানিস্তান সীমান্তবর্তী এলাকায় অভিযানে নেমেছেন সেখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধাসেনা ফ্রন্টিয়ার কোর এবং সেনা কমান্ডোরা। ১০ তারিখ সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে হামলা চালান তাঁরা। তাতে টিটিপির শীর্ষ কমান্ডার খারজি হাফিজুল্লার মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে।
১৮১৮
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের নভেম্বরে ইসলামাবাদের সঙ্গে শান্তি আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পরে যুদ্ধ ঘোষণা করে টিটিপি। শীর্ষ কমান্ডারের মৃত্যুর পর বর্তমানে প্রত্যাঘাতের সুযোগ খুঁজছে এই বিদ্রোহী গোষ্ঠী। ফলে পাক সেনাকে মার্কিন ‘জ্যাভলিন’-এর ঘা সইতে হতে পারে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।