প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার দুর্নীতির অভিযোগে ‘১০০ দিনের কাজ’ প্রকল্পে অর্থ দেওয়া বন্ধ করে রেখেছে। সেই পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজ্য সরকারের উদ্যোগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চালু করেন বিকল্প প্রকল্প— ‘কর্মশ্রী’। গত বছর লোকসভা নির্বাচনের আগে রাজ্য বিধানসভার বাজেটে মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এই প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছিলেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। এই প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যের গরিব মানুষের হাতে ফের কাজ তুলে দিতে উদ্যোগী হয় রাজ্য সরকার। সদ্যসমাপ্ত অর্থবর্ষে পঞ্চায়েত দফতরের তথ্য অনুযায়ী, প্রথম বছর অর্থাৎ ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে ‘কর্মশ্রী’ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৬৪ লক্ষ জবকার্ড দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু চলতি অর্থবর্ষে সেই সংখ্যা ছাড়িয়ে গিয়েছে।
২০২৪-২৫ সালে ‘কর্মশ্রী’ প্রকল্পের অধীনে প্রায় ৭৫ লক্ষ জবকার্ড হোল্ডারকে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের প্রকল্পে কাজ দেওয়া হয়েছে। ‘পথশ্রী’, ‘বাংলার বাড়ি’ নির্মাণ, জল সরবরাহ পাইপ বসানো— প্রভৃতি কাজে এঁদের নিযুক্ত করা হয়েছে বলে দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। পঞ্চায়েত দফতরের এক শীর্ষ আধিকারিক বলেছেন, “জবকার্ড হোল্ডারেরা যাতে প্রকৃতপক্ষে কাজ পান, তা নিশ্চিত করতে কড়া নজরদারি চালানো হয়েছে। এই বছর ৫২টি দফতরের কাজের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছিল তাঁদের। এ বছর যে পরিসংখ্যান আমাদের হাতে এসেছে, তাতে বলা যায় কর্মশ্রী প্রকল্প রাজ্যের গরিব মানুষের মধ্যে ভালই সাড়া ফেলেছে। রাজ্য সরকারের লক্ষ্য চলতি অর্থবছরে ১ কোটি মানুষকে জব কার্ড দেওয়া।” ওই আধিকারিকের আরও দাবি, গ্রামাঞ্চলের মানুষের মধ্যে এই প্রকল্প ঘিরে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। পাহাড়, সাগর, জঙ্গলমহল কিংবা সুন্দরবন— প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে কৃষিকাজের পাশাপাশি ‘কর্মশ্রী’-র কাজে যুক্ত হয়ে বাড়তি আয় নিশ্চিত করছেন বহু পরিবার।
নবান্ন সূত্রে খবর, কেন্দ্রের একরোখা মানসিকতার জেরে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষ কাজ হারিয়েছিলেন। সেই শূন্যস্থান পূরণ করেছে ‘কর্মশ্রী’ প্রকল্প। পঞ্চায়েত দফতর আশাবাদী, নতুন অর্থবর্ষে আরও বেশি সংখ্যক মানুষ এই প্রকল্পে যুক্ত হবেন এবং রাজ্যের গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা আবার সচল হবে। সরকারি তথ্য বলছে, ‘কর্মশ্রী’ শুধু বিকল্প নয়, আগামী দিনে রাজ্যের নিজস্ব কর্মসংস্থান মডেল হয়ে উঠতে পারে।
তবে নিজ উদ্যোগে ৫০ দিনের কাজ গ্রামীণ জনতাকে দিতে পারলেও, ১০০ দিনের বকেয়া অর্থ পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাবে নবান্ন। পঞ্চায়েত দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে যে সমস্ত অভিযোগ করা হয়েছিল, তা তথ্য দিয়ে রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রীরা বার বার খণ্ডন করেছেন। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহানের কাছেও দরবার করা হয়েছে।’’ যত দিন না সেই অর্থ পাওয়া যাচ্ছে, তত দিন এ ভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাবে বলেই জানিয়েছেন নবান্নের এক আধিকারিক।