মধুমিতা সরকার।
একটা ছবি সিরিয়াস বানিয়ে দিয়েছে! চূড়ান্ত ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নিতে শিখিয়েছে। অবসাদ থেকে বেরিয়ে আসার রাস্তা দেখিয়েছে। প্রমাণ করে দিয়েছে, ‘মধুমিতা সরকারই ঠিক’। আর কী কী ব্লু’জ রেখে গিয়েছে ‘ট্যাংরা ব্লু’জ’?
প্রশ্ন: পরপর ৩টি ছবিতে ভিন্ন চরিত্র। ‘পাখি’ ইমেজ ভাঙল?
মধুমিতা: ‘বোঝে না সে বোঝে না’ শেষ হয়েছে, আমার ‘পাখি’ ইমেজও ফুরিয়েছে। দর্শক এত দিন ধরে সেটা মনে রেখেছেন। ৩টি ছবির পর আমার মা-বাবার দেওয়া ‘মধুমিতা সরকার’ নামটা আস্তে আস্তে জায়গা করে নিচ্ছে সবার মনে। এটা সত্যিই আমার কাছে খুবই বড় ব্যাপার।
প্রশ্ন: এই মধুমিতাকে বরুণ ধবনও চেনেন!
মধুমিতা: কী যে আনন্দ হচ্ছে, কী বলব? আমার বন্ধুরা প্রথমে আমায় জানিয়েছিল, মধু দ্যাখ তোর ছবি বরুণ লাইক করেছেন! আমি তো দাবড়ানি দিয়েছি, ধ্যাত তোরা এপ্রিল ফুল করছিস। আজ ১ এপ্রিল নয়, ৩ এপ্রিল। ওরা বলল, তুই ভাল করে দেখলেই বুঝবি সত্যি না মিথ্যে। দেখার পর রি-চেক করেছি ৩ বার। বরুণের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টের ব্লু সাইন বারে বারে দেখেছি। তার পর শান্তি। মনে জোর পেলাম, যা করছি ঠিকই করছি তা হলে! বরুণ তাই ‘লাইক’ করেছেন। সবাই তো শুধুই আমার সমালোচনা করেন!
প্রশ্ন: ‘ট্যাংরা ব্লু’জ’-এর ‘জয়ী’ও কি মধুমিতার মতোই?
মধুমিতা: কিছু কিছু জায়গায় এক। যেমন, ২ জনেই ইতিবাচক। জয়ী আর মধুমিতা চরম ধাক্কা খেলে চূড়ান্ত অবসাদে ভোগে। আবার একে বারে ডুবে যেতে যেতে সেখান থেকে বেরিয়েও আসতে জানে।
প্রশ্ন: আপনিও অবসাদে ভুগেছেন?
মধুমিতা: হ্যাঁ, ভুগি। ভুগেছি। কারওর সাহায্য না নিয়েই বেরিয়ে এসেছি সেখান থেকে। আমায় কেউ, কোনও দিন অবসাদ থেকে টেনে তোলেনি। নিজেকেই নিজে ঠেলে ঠেলে বের করে নিয়ে এসেছি।
প্রশ্ন: অ-মিলগুলো মেলাতে কী করেছেন?
মধুমিতা: অনেক শান্ত হতে হয়েছে। অনেক ধীরেসুস্থে কথা বলতে হয়েছে। অনেক পরিণতমনস্ক হতে হয়েছে। ছবিতে জয়ীর চোখ দিয়ে দর্শক ‘ট্যাংরা ব্লু’জ’কে চিনবেন। ট্যাংরা অঞ্চলটাকে দেখবেন। যাকে তথাকথিত ভদ্র সমাজ ‘আবর্জনার অঞ্চল’ বলে নাক কুঁচকোন। সেখানকার মানুষদের নিয়েও একই মনোভাব। ট্যাংরার প্রকৃত ছবি ঠিক ভাবে তুলে ধরার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বেশি ছটফটে হলে চলে?
প্রশ্ন: মধুমিতা অপিরণতমনস্ক?
মধুমিতা: সবাই ভাবেন, যারা হড়বড়িয়ে এক সঙ্গে অনেক কিছু বলে ফেলে তারা তুলনায় অপরিণতমনস্ক। বাচ্চা বাচ্চা! আমার ক্ষেত্রেও অনেকেই সেটা ভাবেন। জয়ী তেমন নয়। ও খুব ভাবুক। ফলে, আমার এত হড়বড়ানি, এত এনার্জি তো ওকে মানাবে না! তাই, ‘শান্তশিষ্ট যিশু খ্রিস্ট’ হতে হয়েছে আমাকে (এনার্জিটিক হাসি)।
প্রশ্ন: বাস্তবে কলকাতার কোনও বস্তি দেখেছেন?
মধুমিতা: হ্যাঁ দেখেছি। বিডন স্ট্রিটের পিছনে যে ‘নিষিদ্ধ এলাকা’ আছে সেখানে গিয়েছিলাম। ওড়নায় মুখ ঢেকে নিজের পরিচয় গোপন করে। চাইনি, কেউ ‘মধুমিতা সরকার’ হিসেবে আমায় ‘স্পেশ্যাল ট্রিট’ করুন। কারণ, তত দিনে পড়াশোনার পাশাপাশি ‘বোঝে না সে বোঝে না’ মেগায় ‘পাখি’ চরিত্রে অভিনয় করছি। মানুষদের আচার-ব্যবহার দেখতে আমার খুব ভাল লাগে। ওখানকার মানুষদের খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছিলাম। একটা মজার কথা শেয়ার করি?
প্রশ্ন:নিশ্চয়ই...
মধুমিতা: ইন্টারভিউ দিতে দিতে আমি সাংবাদিকদেরও ‘ফলো’ করি (হাসি)। কখনও এ রকম চরিত্র পেলে কারওর কোনও বিশেষ আচরণ হয়তো অভিনয়ে মিশিয়ে দেব।
প্রশ্ন: এই ছবিতে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়-মধুমিতা সরকার প্রথম জুটি। পরমব্রতের কী কী ভাল লাগল?
মধুমিতা: গোটা ছবি জুড়ে ওঁর অবদান। অনেক বছর ধরে এই ছবিটার সঙ্গে যুক্ত। সেখানে আমার উপস্থিতি বলতে ১৩-১৪ দিনের শ্যুট। আর ১ মাসের মহড়া। এত অল্প সময় দেখে কী বলি? তার পরেও বলব পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় সব দিক থেকে টোট্যাল প্যাকেজ। শুধু আমাকে নয়, সব দিক থেকে সবাইকে সাহায্য করেছেন। আমাকে বিশেষ করে হাতে ধরে অনেক কিছু দেখিয়ে দিয়েছেন। এটা দারুণ লেগেছে।
প্রশ্ন: প্রযোজক পরমব্রত ‘কড়া’ না ‘উদার’?
মধুমিতা: বাচ্চাদের কাছে কড়া। যাঁরা সিরিয়াস, তাঁদের কাছে নন। সবাই ‘বাচ্চা বাচ্চা’ বললেও কাজের সময়ে আমি মারাত্মক মনোযোগী। কাউকে বকার সুযোগ দিই না। তাই আমি অন্তত বকুনি খাইনি। কাজ মিটলেই উচ্চিংড়েপনা করি।
প্রশ্ন: ব্লু’জ মানুষের জীবনে ছাপ রেখে যায়। ‘ট্যাংরা ব্লু’জ’ কোনও ছাপ ফেলল?
মধুমিতা: যে সময়ে আমি এই ছবিতে অভিনয় করছিলাম, সেই সময় নিজের জীবন নিয়ে ভীষণ ঘেঁটে ছিলাম। খুব খারাপ সময়ের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল আমায়। সেগুলো একান্তই ব্যক্তিগত। তখন, আমি পড়ব কি না, পড়লে কী নিয়ে পড়ব, কী ভাবে নিজের জীবন এগিয়ে নিয়ে যাব, কেরিয়ারকে কোন দিকে নিয়ে যাব-- এগুলো খুব ঠান্ডা মাথায় ভাবতে হচ্ছিল। সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছিল। তার জন্য সিরিয়াস হতে হত। জয়ী আমায় সিরিয়াস করেছে। জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে শিখিয়েছে। ছবির গল্প আমায় আমার মতো করে চলার শক্তি জুগিয়েছে। ট্যাংরার সঞ্জয় মণ্ডলকে দেখতে দেখতে বুঝেছি, আমি যা বলছি, করছি একদম ঠিক। খারাপ থেকে ভাল-তে ফেরাটাও একেবারেই আমার হাতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy