কথা বলার মাঝে তিন বার বিগড়ে গেল মাইক্রোফোন। মাঝে এতটাই আওয়াজ হচ্ছিল যে কিছুটা বিরক্ত হয়েই মিডিয়া ম্যানেজারকে বললেন, “মাইক বন্ধ করে দিন। আমি ওদের (সাংবাদিকদের) কথা শুনতে পাচ্ছি।” তবে যান্ত্রিক সমস্যা মেটার আগে এবং পরে বেশ খোশমেজাজেই পাওয়া গেল কেএল রাহুলকে। নিউ জ়িল্যান্ড ম্যাচের দু’দিন আগে নানা প্রশ্নের উত্তর দিলেন। রোহিত শর্মা বা মহম্মদ শামিকে রবিবার বিশ্রাম দেওয়া হবে কি না সেটা যেমন জানালেন, তেমনই ঋষভ পন্থের সঙ্গে প্রথম একাদশে লড়াইয়ের কথাও মেনে নিলেন।
শুক্রবার অনুশীলনের আগে রাহুলকে জিজ্ঞাসা করা হয় নিউ জ়িল্যান্ড ম্যাচে চোট-আঘাতের সমস্যা রয়েছে কি না। ভারতের উইকেটকিপারের উত্তর, “যত দূর আমি জানি, কারও ফিটনেস নিয়ে সমস্যা নেই। সব ঠিকঠাক আছে। আজ অনুশীলনের পর আরও ভাল জানতে পারব। সবাই জিম, অনুশীলন করছে।” শুক্রবার রোহিতকে অনুশীলন করতে দেখা গিয়েছে। কোচ গৌতম গম্ভীরের সঙ্গে আলোচনাও করেন।
তবে দলে বদল হবে কি না তা নিয়ে ধোঁয়াশা রেখে দিলেন রাহুল। বললেন, “দলে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আমার নেই। তবে এ ধরনের ম্যাচে কিছু বদলের চিন্তাভাবনা থাকেই। যারা খেলেনি তাদের একটা সুযোগ দেওয়ার চিন্তা থাকে। আমি জানি না সেটা রবিবারের ম্যাচে হবে কি না। সেমিফাইনালের আগে মাত্র এক দিন রয়েছে। আমরা ইতিমধ্যেই ছ’দিন বিশ্রাম পেয়েছি। নিশ্চিত ভাবেই সেমিফাইনালে যাতে সবাইকে পাওয়া যায় সেই চেষ্টা থাকে। তবে নিউ জ়িল্যান্ড ম্যাচে কোনও বদল দেখা যাবে কি না জানি না।”
কৌশলগত কারণে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে উইকেটকিপার হিসাবে খেলানো হচ্ছে রাহুলকে। রিজ়ার্ভে থাকছেন পন্থ। প্রথম একাদশে ঢোকার ব্যাপারে তাঁর সঙ্গে কি লড়াই রয়েছে? রাহুল বললেন, “অবশ্যই আছে। আমি মিথ্যা বলব না। পন্থ খুবই প্রতিভাবান ক্রিকেটার। ও কী করতে পারে, কত দ্রুত খেলা বদলে দিতে পারে সবাই জানি। আমি না পন্থ, কাকে খেলানো হবে তা নিয়ে সব সময়েই কোচ এবং অধিনায়কের মধ্যে আলোচনা চলে। তবে আমাকে সুযোগ দেওয়া হলে সব সময়ে ভাবি দলের জন্য কী করতে পারি। পন্থের সঙ্গে লড়াইয়ের কথা মাথায় থাকে না। আমি নিশ্চিত পন্থ নিজেও তেমনটাই ভাবে। অন্য কারও মতো খেলতে কেউই চাই না।”
পাকিস্তান, বাংলাদেশকে অনায়াসে হারালেও নিউ জ়িল্যান্ড যে কঠিন পরীক্ষা হতে চলেছে ভারতের কাছে এটা অনেকেই বলছেন। সেটা মেনে নিয়ে রাহুলও জানিয়েছেন, তাঁরা কাউকেই হালকা ভাবে দেখেন না। রাহুলের কথায়, “এটা আমার প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। আমি খেয়াল করেছি, দ্রুত সব জিনিস বদলে যায়। এটা বিশ্বকাপের মতো নয় যেখানে অন্তত সাত-আটটা ম্যাচ খেলতে হয় এবং শুরুটা খারাপ হলেও সেটা পরের দিকে সামাল দেওয়া যায়। এই প্রতিযোগিতাটা খুব কঠিন। কোনও ম্যাচই সহজ নয়। আমরা সে ভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। নিউ জ়িল্যান্ড গত কয়েক বছর ধরেই বেশ কঠিন একটা দল। আইসিসি প্রতিযোগিতায় অনেক বার ওদের সঙ্গে খেলেছি। ওদের রেকর্ডও ভাল।
দুবাইয়ের মাঠে ভারত বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে অভিযোগ উঠেছে। তবে রাহুলের মতে, দুবাইয়ের পিচ আগে থেকে তাঁদের পরিচিত বলেই ভাল খেলতে পারছেন। পাশাপাশি বাড়তি অনুশীলনও সাহায্য করেছে। রাহুলের কথায়, “উইকেট ধীরগতির। যে-ই ব্যাট করতে যাক, খুচরো রান নেওয়া কঠিন। ইংল্যান্ড সিরিজ়ে খেলে আসার পর একটু অন্য ধরনের পিচে খেলতে হচ্ছে। মানিয়ে নিতে সময় লাগছে। তবে আমরা আগেও দুবাইয়ে এমন পিচে খেলেছি। তাই পিচ কেমন হতে পারে সেটা সম্পর্কে আগে থেকেই ধারণা ছিল। সেই মতো মানসিক প্রস্তুতি নিয়েছি। এক সপ্তাহ আগেই দুবাইয়ে চলে এসেছিলাম। অনুশীলনে যে পিচ পেয়েছিলাম সেটাও মাঠের মতোই। এই উইকেটে যে জমে যাবে তাকে বেশি ক্ষণ থাকতে হবে, যাতে বাড়তি ২০-৩০ রান দলের স্কোরের সঙ্গে যোগ হয়।”
আরও পড়ুন:
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন শামি। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে উইকেট না পেলেও তাঁর বোলিং নজর কেড়েছে। শামির বিরুদ্ধে উইকেটকিপিং করা যে বেশ কঠিন সেটা স্বীকার করেছেন রাহুল। হাসতে হাসতে তাঁর উত্তর, “শামি ঠিক করেই রাখে যাতে আমাকে পুরো ঝাঁপিয়ে ওর বল ধরতে হয়। ও আমাকে সুযোগ করে দেয় উইকেটের পিছনে নায়ক হওয়ার বা বোকা বনে যাওয়ার। শামি বা বুমরাহ বোলিং করার সময় বল একটু অন্য ভাবে আসে। সবাই বলে শামির বল কতটা সুইং করে। কেউ বলে না যে শামি কতটা নিখুঁত। কী ভাবে গতিতে বৈচিত্র আনতে পারে। আগের দিনই অনুশীলনে শামির বল আমার হেলমেটে লেগেছিল। এগুলোই শামির বল খেলা কঠিন করে তোলে।”