ভোটার তালিকায় ‘কারচুপি’র বিরুদ্ধে নিজের দলকে সতর্ক হতে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তালিকায় নজরদারির জন্য কোর কমিটিও ঘোষণা করে দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার দলের মহা সমাবেশে মুখ্যমন্ত্রীর সেই ঘোষণার পর কালক্ষেপ না করে পাল্টা ময়দানে নামল বিজেপি। বিধায়ক এবং দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে শুক্রবার রাজ্য নির্বাচন কমিশনে গেলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। মৃতদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া, ভুয়ো ভোটার চিহ্নিত করা-সহ একগুচ্ছ দাবি তো জানালেনই, পাশাপাশি তৃণমূলের বিরুদ্ধে দক্ষিণবঙ্গের একটি অংশের ভোটার তালিকায় কারচুপির চেষ্টার অভিযোগ জানিয়ে সংশ্লিষ্ট সমস্ত বুথের তালিকাও জমা দিয়ে এলেন।
শুভেন্দুর সঙ্গে শুক্রবার কমিশনে গিয়েছিলেন অগ্নিমিত্রা পাল, বঙ্কিম ঘোষ, মিহির গোস্বামী, সুশান্ত ঘোষ, অসীম সরকার-সহ বিজেপি পরিষদীয় দলের অনেকেই। দলের তরফে কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা শিশির বাজোরিয়াও ছিলেন প্রতিনিধি দলে। মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক আরিজ আফতাব অবসর নেওয়ায় এই মুহূর্তে ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক হিসাবে কাজ চালাচ্ছেন দিব্যেন্দু দাস। তাঁর কাছে চিঠি তথা দাবিপত্র জমা দিয়েছে বিজেপি। তবে চিঠিটি লেখা হয়েছে দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে। শিশিরের কথায়, ‘‘আমরা চাই ভোটার তালিকার এই গুরুতর কারচুপির চেষ্টা রুখতে সরাসরি দিল্লিই সক্রিয় হোক। তাই দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের উদ্দেশেই চিঠি লিখেছি। এখানকার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিককে বলেছি চিঠিটি দিল্লির নির্বাচন সদনে পাঠিয়ে দিতে।’’
আরও পড়ুন:
চিঠিতে বিজেপির অভিযোগ মূলত তিনটি। প্রথমত, প্রকৃত ভোটারদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, মৃতদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে না। তৃতীয়ত, বিপুল সংখ্যক ভুয়ো ভোটারের নাম ঢোকানো হয়েছে। এর আগে কত বার সুনির্দিষ্ট তথ্য সহযোগে কমিশনে এই সব অভিযোগ জানানো হয়েছে, তার খতিয়ানও উল্লেখ করা হয়েছে বিজেপির চিঠিতে। সঙ্গে যোগ করা হয়েছে দক্ষিণবঙ্গের ছ’টি লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ২০টি বিধানসভা কেন্দ্রের কথা। সেগুলি হল উত্তর কলকাতার চৌরঙ্গি, জোড়াসাঁকো, বেলেঘাটা, মানিকতলা। বারাসত লোকসভার রাজারহাট নিউ টাউন এবং বিধাননগর। ব্যারাকপুর লোকসভার বীজপুর, নৈহাটি, ভাটপাড়া, জগদ্দল, নোয়াপাড়া এবং ব্যারাকপুর। শ্রীরামপুর লোকসভার উত্তরপাড়া, শ্রীরামপুর, চাঁপদানি। হুগলি লোকসভার চন্দননগর, চুঁচুড়া, সপ্তগ্রাম। দক্ষিণ কলকাতা লোকসভার কলকাতা বন্দর এবং ভবানীপুর (এটি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কেন্দ্র)। এই ২০টি বিধানসভা কেন্দ্রের বিভিন্ন বুথ নম্বর উল্লেখ করে বিজেপির অভিযোগ, সেখান থেকে অনেক আসল ভোটারের নাম বাদ দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। বিজেপি সূত্রের দাবি, এই বুথগুলিতে ‘অবাঙালি’ জনসংখ্যা বেশি। তাই আইপ্যাকের পরামর্শে ওই সব বুথে ভোটারদের নাম বাদ দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
বিজেপির দাবি, এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকায় ১৭ লক্ষের বেশি ‘ভুয়ো’ নাম রয়েছে। নির্বাচন কমিশন যেন অবিলম্বে এই সব নাম বাদ দেয়। পাশাপাশি চিঠিতে আর্জি জানানো হয়েছে যে, কোনও ‘প্রকৃত’ ভোটারের নাম যেন তালিকা থেকে বাদ না পড়ে।