‘সাহেব বিবি গোলাম’-এর একটি দৃশ্যে স্বস্তিকা।
স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় ইজ ইক্যুয়াল টু কন্ট্রোভার্সি। মানবেন?
উত্তরটা পরে দিচ্ছি। আগে বলুন, এটা কেন মনে হল?
গত পাঁচ বছরে যে হারে আপনার ছবি নিয়ে সেন্সর বোর্ড আপত্তি করছে…
(হাসতে হাসতে) হ্যাঁ। এটা ঠিক বলেছেন। গত পাঁচ বছরে আমার এত ছবি নিয়ে ওদের সমস্যা হয়েছে যে এখন হয়তো কোনও ছবিতে আমার মুখ দেখলেই ওদের মনে হয় এ নিয়ে সমস্যা করতে হবে।
তা স্বস্তিকা আবার কী করলেন যাতে ‘বিবি’-র গায়ে কাঁচি?
আমি হয়তো সেই ধরনের ছবি করি যেখানে খুব প্রকট ভাবে সমাজের দিকে আঙুল তোলা হয়। সেটাতে সেন্সর বোর্ডের সমস্যা হয়। আর এই ছবিটার শুটিংয়ের সময় প্রতীমের সঙ্গে ইয়ার্কি মেরেছিলাম, যে দেখো এ বার ওরা না বলে বিবিকে বাদ দিয়ে দাও। শুধু সাহেব গোলাম দিয়ে রিলিজ কর। আর সেটাই হল। সারপ্রাইজিং আর শকিং যে জোকটাই রিয়ালিটি হয়ে গেল। তবে এমন চরিত্র, এমন ছবি আমি আবারও করব। মনে হয় না এই কন্ট্রোভার্সি খুব তাড়াতাড়ি পিছু ছাড়বে।
গালাগালি নাকি সেক্সুয়াল ডিজায়ার নিয়ে কথা বলা— কোনটাতে সমস্যা হল সেন্সরে?
সবটাই সমস্যা। কোনও মহিলা সেক্সুয়াল ডিজায়ার নিয়ে কথা বলছে এটা তো বিশাল ব্যাপার। এ সব অনস্ক্রিন বললে তো একেবারে নষ্ট মেয়ের ক্যাটিগরিতে পড়ে যাবে। মহিলা মানেই সারাক্ষণ তাদের একটা সরি মোডে থাকতে হবে এর তো কোনও মানে নেই। তাই এ সব চরিত্র খুব রিস্কি।
কেন রিস্কি বলছেন?
আমাদের এখানে সমস্যাটা কী জানেন, যেভাবে অনস্ক্রিন আমাদের দর্শক দেখেন ব্যক্তিগত ভাবেও সে রকমই ভাবেন। আমাকে অ্যালকোহলিকের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখার পর আত্মীয়স্বজনরা তো ফোন করে বলত আহা রে মেয়েটা সকাল থেকে মদ খেয়ে পড়ে থাকে। বাবা-মা দেখেও না। মা বলত, দেখ এ সব ছবি করিস, আর লোকে এ সব কথা বলছে। আমি বলতাম, কী করব বল? তুমিও বলবে, একদম কথা শোনে না। কী করব বল? তুমি আবার কাউন্টার যুক্তি দিতে যেও না (তুমুল হাসি)। ফলে কোনও একটা সিনে বিকিনি পরে নাচা বা ব্রা-প্যান্টি পরে দাঁড়িয়ে থাকার থেকে এই ধরনের চরিত্রগুলো করা অনেক রিস্কি। গোটা জার্নিটাই সাহসী। সেটা ক্যারি করাটাই আসল।
রেপ সিন নিয়ে কতটা কমফর্টেবল ছিলেন?
প্রতীমকে আমি অনেকদিন চিনি। আর ওর ভাবনায় খুব ক্ল্যারিটি ছিল। রেপ সিনটাকে নর্মাল, রেগুলার সিন হিসেবেই ট্রিট করেছিল। এমনও হয়েছে ধরুন, আমি অনেকক্ষণ ধরে বলছি আমাকে একটা তোয়ালে দাও, আমি এভাবে এখানে পড়ে আছি, আমি একজন মহিলা। ওরা আমাকে ডিঙিয়ে গিয়েই লাইট ঠিক করছে, সেট ঠিক করছে। আমার তখন রাগ হত। কিন্তু যখন দেখলাম ওরা আমাকেও প্রপ হিসেবেই ট্রিট করছে। সেটাতে আমি লেস কনশাস হতে পেরেছিলাম। আর প্রথম একটা সিন হয়ে গেলে সবাই তো সবটা দেখেই নিয়েছে। তার পর আর কে কী দেখল সেটা নিয়ে অত ভাবি না। কঠিন ছিল। কিন্তু মজা করে শুট করেছি।
ট্রেলরেই তো আপনাকে দেখে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
বলছেন? আসলে কি জানেন এই ছবিতে আমি নিজেকে অনেক বেশি এক্সপ্লোর করেছি। নিজের একটা ওয়াইল্ড দিক চিনলাম। আমি এতটা সিডাকটিভ হতে পারি আমার এই দিকটা নিজের কাছেই অপিরিচিত ছিল।
আসলে কি জানেন, টলিউডে সবাই টুইটার, ফেসবুকে বক্তব্য রাখে। তার পরই বেরিয়ে এসে বলে বেশ হয়েছে ওর ছবিটা আটকে গিয়েছে বা বেশ হয়েছে ওর ছবিটা চলছে না। কার ছবিটা চলছে না সেটা নিয়েই টলিউডের উত্সাহ বেশি। এখানে পাবলিক স্পেসে পিঠ চাপড়ানোটাই বেশি দেখেছি।
মেয়েকে (অন্বেষা) ছবিটা দেখতে অ্যালাও করবেন?
ডাবিং করার পর আমি বলেছিলাম দেখো না। কিন্তু সে তো বিদ্রোহ করে বলল, ধুর, একটা বাংলা সিনেমায় তোমরা কী আর দেখাতে পার? তারপর ট্রেলর দেখে ও খুব এক্সাইটেড। বলল, এটা এত বেশি রিয়েল লাগছে, আফটার অল নিজের মা…। আমি এটা হলে গিয়ে দেখব না। আমি সে দিনই প্রতীমকে ফোন করে বলেছিলাম, অভিনেত্রী হিসেবে আমি সাকসেসফুল। কারণ মেয়ে বলছে, এটা এতটাই রিয়েল হয়েছে যে মাকে ওভাবে ও দেখতে চাইছে না।
আপনাকে অত বোল্ডলি দেখে কি মেয়ে লজ্জা পেল?
আমি ঠিক এটাই জিজ্ঞেস করেছিলাম জানেন। তোমার কী লজ্জা লাগছে? ও বলল না! লজ্জা কেন লাগবে? এত রিয়েল লাগছে, সো ইয়োর জব ইজ ডান। ওর আবার পার্নোকে খুব পছন্দ। আমাকে বলল, দেখো পার্নোদিকে কি মিষ্টি লাগছে। তুমি তো এমন রোলও করতে পার যেটা সবাই দেখতে পারে। আমি বলেছিলাম, ওকে। ভেবে দেখব।
দেখুন ট্রেলর
মরাল পুলিশদের সহ্য করেন কী ভাবে?
সহ্য করি না তো! কেন সহ্য করতে যাব? তবে পার্সোনাল জায়গায় তো কোনও সেন্সর নেই। লোকে যা বলার বলে, আমার যা করার আমি করি। আমি তো সব সময় প্যানিক মোডে থাকি। যে গেল গেল…বাদ দিয়ে দিল রে। বাদ পড়ে গেলাম রে। আমি তো বলি ট্রিপল এ দিয়ে দাও। মানুষ দেখুক। না হলে তো ছবিটা করার কোনও মানে থাকে না।
সেন্সর বোর্ডের মেম্বার লিস্টে যাঁরা আছেন, অনেকের সঙ্গেই ফিল্মের কোনও সম্পর্ক নেই। ভেবে খারাপ লাগে না?
না! খারাপ লেগে হবেটা কী?
তাহলে?
আমার বরং রাগ হয়, অসহায় লাগে, হতাশ লাগে, বিরক্ত লাগে। আমি তো অনেক ডিরেক্টরকে বলেছি, সেন্সর বোর্ডে সঙ্গে যাব? প্রতীমকেও বলেছিলাম। ওরা ভয় পায় আমাকে নিয়ে যেতে। ভাবে আমি ওখানে গিয়ে পৌঁছলে গোটা ছবিটা রিলিজ করতে দেবে না হয়তো। (কনফিডেন্টলি) জেদটা বেড়ে যায়। মনে হয় এই ধরনের চরিত্র আরও করা উচিত।
‘সাহেব বিবি গোলাম’ নিয়ে বিতর্কের সময় টলিউডকে পাশে পেয়েছিলেন?
এটা তো ডিরেক্টর ভাল বলতে পারবে।
পার্সোনালি কেউ সাপোর্ট করেনি?
না! তেমন কারও কথা তো মনে পড়ছে না।
‘উড়তা পঞ্জাব’ও সেন্সর আটকেছিল। সে সময় অনুরাগ কাশ্যপ কিন্তু বলিউডকে পাশে পেয়েছিলেন। আপনারা বোধহয়…
আসলে কি জানেন, টলিউডে সবাই টুইটার, ফেসবুকে বক্তব্য রাখে। তার পরই বেরিয়ে এসে বলে বেশ হয়েছে ওর ছবিটা আটকে গিয়েছে বা বেশ হয়েছে ওর ছবিটা চলছে না। কার ছবিটা চলছে না সেটা নিয়েই টলিউডের উত্সাহ বেশি। এখানে পাবলিক স্পেসে পিঠ চাপড়ানোটাই বেশি দেখেছি।
টালিগঞ্জে তাহলে ইউনিটি নেই বলছেন?
তা কেন? ইউনিটি আছে তো। কিন্তু সেটা সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে (মুচকি হাসি)।
মানে স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ের ছবি ভাল চললে টলিউড খুশি হবে না বলছেন?
অন্তত স্বস্তিকার ছবি স্মুদলি রিলিজ করলে খুশি হবে বলে তো মনে হয় না।
আরও পড়ুন, লাল স্বস্তিকার প্রিয় রঙ, কেন জানেন?
উড়তা সেন্সর, কাঁচির কোপে অতিষ্ঠ টালিগঞ্জও
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy