জন্মদিনে নিজেকে নিয়ে, গান নিয়ে থাকতে চান আরতি। ফাইল ছবি
কোনও এক জন্মদিনের সকাল। সালটা আজ আর তাঁর মনে নেই। মনে আছে সাদা গরদের থান পরা এক পরমাসুন্দরী মহিলাকে। হাতে গোড়ের মালা, রুপোর ঘটি, সন্দেশের বাক্স।
তাঁর সামনে এসে বললেন, “আমার পৈতৃক জিনিস আপনাকে জন্মদিনে দিলাম। আপনার কাছেই মানায়!” চমকে উঠেছিলেন সুরের মানুষ আরতি মুখোপাধ্যায়। শনিবার মুম্বইয়ের বাড়িতে গৃহবন্দি জন্মদিনে আনন্দবাজার ডিজিটালের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে সেই চমক লাগা অভিজ্ঞতার কথা বললেন ঋত্বিক ঘটকের ‘সুবর্ণরেখা’র গায়িকা।
গতকাল রাত ১২টা থেকেই আসছে অগুনতি ভক্তের ফোন। জন্মদিনের সকাল প্রত্যেক বারের মতোই গানে গানে ভরিয়ে রাখতে চান আরতি মুখোপাধ্যায়। বললেন, “আজ রবীন্দ্রনাথের গান গাইব। তার পর গজল, ঠুংরি আমার ঈশ্বরকে শোনাব। আমাদের বাড়িতে বরাবর জন্মদিন মানেই গানবাজনা। বাবা হয়তো পিয়ানোতে সুর তুলছেন, মা এস্রাজে গান ধরছেন। আর ঠাকুমা দারুণ সব নিরামিষ রান্না করছেন। সৃজিতের বাবা আমার মামা, উনিও চলে আসতেন এই আসরে। আজ বড্ড পুরনো কথা মনে পড়ছে,” আবেগে ভাসলেন রাহুল দেব বর্মণ থেকে লক্ষ্মীকান্ত প্যারেলালের পছন্দের গায়িকা। ছোটবেলার জন্মদিনকেই সবচেয়ে ভালবেসে ফিরে গেলেন শিল্পী আরতি মুখোপাধ্যায়ের জন্মদিনের কথায়। “বড় হলাম। সময় কঠিন হল। চারিদিকে যেন ইট-কাঠ-পাথরের দেওয়াল। গান গেয়ে রোজগার মুম্বইয়ের মতো শহরে চাট্টিখানি কথা ছিল না। তাঁর মধ্যেও এক দিন রেকর্ড করছি, হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া আছেন, শিবকুমার শর্মা আছেন। ওঁরা আমায় চমকে দিয়ে স্টুডিয়োয় কেক আনালেন। আমি অবাক! কেক কাটার পর হরিজি বললেন, আজ দুপুরে আমার বাড়ি খাওয়া!”
নিজে বরাবর পরিবারের সঙ্গেই জন্মদিন কাটিয়েছেন। ঠাকুমার হাতের পায়েস, শিঙ্গারা আজও ভুলতে পারেন না আরতি। বললেন, “আমার জন্মদিন বলে বাড়িতে পার্টি হবে এটা কোনও দিন চাইনি। বাড়িতে প্রচুর লোক আসত নিজে থেকেই। আমি খেয়াল রাখতাম শুধু, কেউ যেন না খেয়ে ফিরে না যায়। জন্মদিনে নিজেকে নিয়ে, গান নিয়ে থাকতে চাইতাম। তবে সৃজিতের বাবা, বাড়ির লোক খুব হইহই করত।”
আরও পড়ুন: ওটিটি প্ল্যাটফর্মে বিনোদনের লড়াই, কোথায় কী দেখবেন
মুম্বই চলে যান কাজের জন্য, তখন কলকাতায় তাঁর সাজানো সংসার। আপনার প্রথম স্বামী সুবীর হাজরার কথায় আপনার গান তখন অসম্ভব হিট। সংসার-টংসার ফেলে হঠাৎ মুম্বই, অসুবিধে হয়নি?
মহানায়ক উত্তম কুমার অভিনীত বেশ কিছু ছবিতে গান গেয়েছেন আরতি। ফাইল ছবি
পুরনো কথায় ফিরলেন তিনি। “আমি ওঁর গুণের জন্যই প্রেমে পড়েছিলাম। বিয়েও করেছিলাম। কিন্তু দেখলাম, উনি আমাকে একটুও স্পেস দিতে চাইছেন না। আমি কী শাড়ি পরব, কোন সঙ্গীত পরিচালকের সঙ্গে কতটা কথা বলব, সেটাও উনি বলে দিতেন। গানেও তার ছাপ পড়তে লাগল। কলকাতা ছেড়ে বেরিয়ে গেলাম। অনেক মনের জোর লেগেছিল, জানেন। সুধীনদা (দাশগুপ্ত) বলেছিলেন, ‘তুই বম্বে চলে যা।’ আর কার না ইচ্ছে করে বলুন তো, লক্ষ্মীকান্ত-প্যারেলাল, আর ডি বর্মনের মতো সঙ্গীত পরিচালকের সঙ্গে কাজ করতে!” জন্মদিনের সকালে নিজের লড়াইয়ের কথা মনে এলেও সাধারণ মানুষের ভালবাসার স্মৃতি পুরনো ক্ষয়ে যাওয়া স্মৃতিকে ম্লান করে দিচ্ছে।
কথা বলতেই বলতেই পৌঁছে গেলেন হারমোনিয়ামের কাছে... এই ক্ষতি আর ক্ষতর জীবনে ওই হারমোনিয়াম তাঁর একমাত্র শক্তি, সম্বল। বিকেলবেলা স্নান সেরে পরবেন পাট ভাঙা নতুন শাড়ি। রং সাদা। সঙ্গী হবে গান।
আরও পড়ুন: অনলাইন গেমিং স্টেশনের ফাঁদ, লক্ষাধিক টাকা প্রতারণার শিকার অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়
জন্মদিন ফিরে ফিরে আসবে। তবু জানতে ইচ্ছে করে, পরজন্মে কী হয়ে জন্মাতে চান আরতি? “এক সময় যাঁরা বলতেন, আরতি মুখোপাধ্যায় মুম্বইয়ে গিয়ে কল্কে পাচ্ছে না, ও শেষ হয়ে গিয়েছে, তাঁদের আরও গান শোনাতে চাই। এক জীবনে অত গান গেয়ে উঠতে পারব না। তাই আবার আরতি হয়ে জন্মাতে চাই। তবে একটা কথা, নিজের স্বভাবে একটু বদল দেখতে চাই। আবার যদি জন্মাই, তবে যেন একটু ধূর্ত হয়ে জন্মাতে পারি। সারা জীবনে শুধু আঘাত পেয়েই গেলাম। এড়িয়ে যাওয়ার কায়দাটা পরজন্মে শিখে আসব।”
আরও পড়ুন: রণবীর কপূর ও আলিয়া ভট্টকে এগিয়ে রাখলেন পরিচালক
জন্মদিনে ঝলমলিয়ে উঠলেন অষ্টাদশীর আরতি... তাঁর সেই লজ্জা জড়ানো ছন্দে আজও গানের পৃথিবী কম্পমান!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy