শহরের এক প্রান্তে পার্পল মুভি টাউন স্টুডিয়ো। সারা দিন-রাত সেখানে পর পর ধারাবাহিকের শুটিং হয়। সেখানে শুক্রবার একটি সেটে উদ্যাপনের আমেজ। বসন্তের মিঠে বাতাসে গ্রীষ্মের ঝাঁঝ। দত্ত বাড়ির প্রত্যেকে এ দিন গোলাপি পোশাকে অন্য রকম। ব্যাপার কী? খোঁজ নিতে জানা গেল, সূর্য-দীপা ২০ বছরের দাম্পত্যে পা রেখেছে। তারই উদ্যাপনে মেতেছেন সকলে। উল্লাসের রং যে নরম গোলাপি।
শুধু পরিবারের সদস্যেরা? গোটা বাড়ি ওই রঙের ফুলে, আলোয় সেজেছে সে দিন। শুটিংয়ে কারও মন নেই। সকলে তিন বছর আগের দিনে ফিরে গিয়েছেন। দত্ত বাড়ির গল্পের সূত্রপাত ওই দিনই তো হয়েছিল। মঙ্গলবার ছোট পর্দার ‘অনুরাগের ছোঁয়া’ হাজার পর্ব ছুঁয়ে ফেলল। গল্পে দু-দুটো নতুন চমক। এক, ধারাবাহিকের নায়ক-নায়িকা ২০ বছরের দাম্পত্যে পা রেখেছে। দুই, তাদের দুই মেয়ে সোনা-রূপা একই পুরুষের প্রেমে পাগল। কৃষ্ণকে দুই বোন ভালবেসেছে! সূর্য-দীপার জীবনে কি নতুন ঝড় উঠতে চলেছে?
ধারাবাহিকের মূল আকর্ষণ সূর্য-দীপা আর খলনায়িকা মিশকা। এই তিন ভূমিকায় যথাক্রমে দিব্যজ্যোতি দত্ত, স্বস্তিকা ঘোষ, অহনা দত্ত। হাজার পর্ব পেরিয়ে কী অনুভূতি তাঁদের? আনন্দবাজার ডট কম তিন জনের সঙ্গেই আলাদা করে কথা বলেছিল।
দিব্যজ্যোতি এর আগেও জনপ্রিয় ধারাবাহিকে নায়কের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তার পরেও তাঁর দাবি, “ধারাবাহিকের গল্প, টানটান চিত্রনাট্য আর আমার চরিত্র— এত নিটোল ভাবে লেখা হয়েছে যে দর্শক সূর্যের সুখে-দুঃখে, ভালমন্দে হেসেছেন, কেঁদেছেন। আমার অভিনীত প্রতিটি চরিত্রের সঙ্গে নিজেদের একাত্ম করেছেন। ওঁদের ভালবাসাতেই ধারাবাহিকের এত জনপ্রিয়তা।” তিনি এ-ও জানাতে ভোলেননি, অন্য ধারাবাহিক ইদানীং কত তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাচ্ছে। এই ফলাফল একজোট না হলে সম্ভব নয়। ২০ বছরের দাম্পত্য, মানে সূর্য আগের তুলনায় অনেক পরিণত। তার ছাপ কি চেহারায় পড়বে? ছোট পর্দায় দিব্যজ্যোতিকে এই প্রথম বয়স্ক দেখানো হবে!

ছোট পর্দার সফল জুটি স্বস্তিকা ঘোষ, দিব্যজ্যোতি দত্ত। ছবি: সংগৃহীত।
প্রসঙ্গ তুলতেই ছোট পর্দার নায়কের দাবি, “ঈশ্বর করুন, যেমন এখন দেখানো হচ্ছে তেমনই শেষ পর্যন্ত যেন আমাকে দেখানো হয়। আমাকে যেন বয়স্ক না দেখানো হয়।” তিন বছর ধরে একটা চরিত্রে অভিনয় মানে অভিনেতার মনে সেই চরিত্রের কিছু না কিছু ছাপ রেখে যাওয়া। কিছু না কিছু শেখা। দিব্যজ্যোতির অভিজ্ঞতাও কি একই কথা বলছে? একটু থেমে নায়ক বললেন, “সূর্য শিখিয়েছে, কারও উপর অন্ধ বিশ্বাস করতে নেই! তা হলে ঠকতে হয়।” একটা সময় পর্দার স্ত্রী স্বস্তিকার সঙ্গে নাম জড়িয়েছিল দিব্যজ্যোতির। সে প্রসঙ্গেই কি এই উপলব্ধি? প্রশ্ন শেষ হওয়ার আগেই তড়িঘড়ি জবাব তাঁর, “কোনও ব্যক্তি অভিনেতা নন, ধারাবাহিকের খলনায়িকা ‘মিশকা’ চরিত্রটি আমাকে এই শিক্ষা দিয়েছে। সূর্য মিশকাকে অন্ধ ভাবে বিশ্বাস করত।”
খলনায়িকাকে নিয়ে নায়কের এই উপলব্ধি। নিজের অভিনীত চরিত্র সম্পর্কে ‘মিশকা’ ওরফে অহনার কী বক্তব্য?
প্রশ্ন শুনে অহনা দু’সেকেন্ড ভেবেছেন। তার পর বলেছেন, “এটি আমার প্রথম ধারাবাহিক। ভাবতেই পারিনি এত জনপ্রিয়তা পাব! দর্শক আমাকে গালমন্দ করেছেন। তখনই বুঝতে পেরেছি, ওঁরা আমাকে সত্যি ভেবেছেন বলেই এত কুকথা বলছেন। ওঁদের কটাক্ষ আমার আশীর্বাদ।” তা বলে শুরুতেই খলনায়িকার তকমা? সকলে যে নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন! আবেগে বুজে এসেছে গলা। নিজেকে সামলাতে সামলাতে অহনার পাল্টা যুক্তি, “অভিনয় করতে করতে বুঝেছি, মিশকা খলনায়িকা নয়। ভালবাসার কাঙাল। যার কাছ থেকে সেটা পায় তার কেনা হয়ে থাকে। এই ভালবাসা পেতে যত দূর যাওয়া দরকার ততটা সে যেতে পারে।” একটু থেমে যোগ করেছেন, “অনেকটা আমার মতো।”
অহনার মতো ‘অনুরাগের ছোঁয়া’ দিয়ে অভিনয় দুনিয়ায় পা রেখেছেন স্বস্তিকাও। তিন বছরে প্রথম ধারাবাহিক থেকে কী পেলেন?
আরও পড়ুন:
ছোট পর্দার ‘দীপা’ ওরফে স্বস্তিকা যেন অভিনীত চরিত্রের প্রতিনিধি! শান্ত ভাবে বললেন, “বলুন কী পাইনি। দর্শকের মনে, তাঁদের অন্দরমহলে ঢুকে গিয়েছি। দীপা কাঁদলে তাঁরা কষ্ট পান! সমাজমাধ্যমে নিজেদের মতামত জানিয়ে দীপাকে লড়াই করার শক্তি জুগিয়েছেন। ওঁদের ভালবাসা না পেলে আমি কিচ্ছু না।” জীবনে কোনটা বদলে গেল? এ বার রসিকতার ঢঙে জানালেন, গায়ের রং সকলের আগে বদলে গিয়েছে। গৌরবর্ণা স্বস্তিকা রূপটানের ছোঁয়ায় শ্যামবর্ণা ‘দীপা’র কারণে। তার পরেই রসিকতা সরিয়ে রেখে ফের গম্ভীর। বললেন, “দীপার লড়াই দেখতে দেখতে অনেকটা পরিণত হয়ে গিয়েছি। এখন আমার জীবনেও এ রকম পরিস্থিতি তৈরি হলে সামলে নিতে পারব।”