বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক জগতে শোকের ছায়া। প্রয়াত হলেন সে দেশের বর্ষীয়ান সঙ্গীতত্ত্ববিদ তথা ‘ছায়ানট’-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সন্জীদা খাতুন। মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকার একটি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যকালে বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে সন্জীদার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন শিল্পীর পুত্রবধূ ও সংস্কৃতিচর্চা কেন্দ্র ‘ছায়ানট’-এর সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ লিসা। পরিবার সূত্রে খবর, দীর্ঘ দিন ধরে সন্জীদা ডায়াবিটিস, নিউমোনিয়া এবং কিডনির অসুখে ভুগছিলেন। গত এক সপ্তাহ ধরে সন্জীদা হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।
সন্জীদা খাতুনের কর্মজীবন বহুমুখী। কবি শঙ্খ ঘোষ তাঁর সম্পর্কে লিখেছিলেন, ‘‘গান তাঁর জীবিকা নয়, গান তাঁর জীবন, চারপাশের মানুষজনের সঙ্গে মিশে যাওয়া এক জীবন। ধর্মতলা স্ট্রিটের প্রথম পরিচয়ে জেনেছিলাম যে দেশের আত্মপরিচয় খুঁজছেন তিনি রবীন্দ্রনাথের গানে, আর আজ জানি যে সে-গানে তিনি খুঁজে বেড়াচ্ছেন নিজেরই আত্মপরিচয়।’’ বাংলাদেশে প্রতিবাদের মুখ হিসেবে পরিচিত ছিলেন সন্জীদা খাতুন। জন্ম ১৯৩৩ সালের ৪ এপ্রিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও তিনি ছিলেন বিশ্বভারতীর প্রাক্তনী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার মাধ্যমের তাঁর কর্মজীবনের সূত্রপাত। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। উল্লেখ্য, ‘ছায়ানট’-এর অন্যতম অভিমুখ ছিলেন সন্জীদা। বাংলাদেশে নববর্ষ বরণের উৎসবে এই সংগঠনের ভূমিকা ছিল প্রধান।
আরও পড়ুন:
শিক্ষকতার পাশাপাশি সঙ্গীতশিল্পী হিসেবেও সন্জীদা বংলাদেশের বিশিষ্টদের মধ্যে অন্যতম। তাঁর প্রথম গানের গুরু ছিলেন সোহরাব হোসেন। তাঁর কাছে তিনি নজরুলগীতি, আধুনিক বাংলা গান ও লোকসঙ্গীতের তালিম নেন। হুসনে বানু খানমের কাছে শিখেছিলেন রবীন্দ্রসঙ্গীত। এ ছাড়াও তিনি শৈলজারঞ্জন মজুমদার, আবদুল আহাদ, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, নীলিমা সেনের মতো বিখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীতশিল্পীদের কাছ থেকে তালিম নেন। সন্জীদা খাতুন বাংলাদেশের একাধিক সম্মানে ভূষিত। ২০২১ সালে ভারত সরকার তাঁকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করে। পেয়েছেন এ পার বাংলা থেকে রবীন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার, দেশিকোত্তম সম্মান। লিখেছেন রবীন্দ্রনাথ ও আত্মস্মৃতি বিষয়ক বেশ কিছু গ্রন্থও।
সন্জীদা খাতুনের পুত্র পার্থ তানভীর নভেদ জানিয়েছেন, অনুরাগীদের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় বাংলাদেশের ধানমন্ডির ‘ছায়ানট’ সংস্কৃতি ভবনে তাঁর মরদেহ শায়িত থাকবে।