‘ভুবন মাঝি’ ছবির একটি দৃশ্যে পরমব্রত।
গড়াই নদীর তীর।
ফরিদার দিকে তাকিয়ে নহির বলে, ‘‘মরতে খুব ভয় করে ফরিদা। যেখানে কিচ্ছু নেই, সেখানে যেতে আমার ইচ্ছে করে না...’’
মৃত্যু, প্রেম আর দেশের চেতনায় মিলেমিশে আছে বাংলার ছবি ‘ভুবন মাঝি’। সেই ‘ভুবন মাঝি’ ভারতের মাল্টিপ্লেক্সে মুক্তি পাচ্ছে ৩ অগস্ট। এ পারের মানুষের কাছে এই ছবি মানে ‘আমি তোমারি নাম গাই...’ কালিকাপ্রসাদ। ‘বিসর্জন’ ছবিতে সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে কাজ করলেও ওই ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর করেছিলেন ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত। ছবির শরীরে যে সুর ছড়িয়ে আছে তার আগাগোড়াই কালিকার স্বপ্ন ভাঙা সুর।
‘‘আমার কাছে ভারতে ‘ভুবন মাঝি’ রিলিজ হওয়া একটা আবেগ ও দায়িত্ববোধের জায়গা। কারণ এই সিনেমা নিয়ে প্রথম থেকেই কালিকা ভাই জড়িত ছিলেন এবং প্রথম সিনেমা হিসেবে এটা তাঁর একটা স্বপ্নের জায়গা ছিল। তিনি বার বার বলতেন, কলকাতায় এই ছবিটা যেন রিলিজ হয়। আমি আশা করি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ভারতের, বিশেষ করে কলকাতার সম্পর্ক কতখানি তা এই চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে নতুন করে মানুষকে ভাবাবে।’’ বাংলাদেশ থেকে আনন্দবাজার ডিজিটালকে বললেন ছবির পরিচালক ফাকরুল আরফিন খান।
আরও পড়ুন, ‘হলের চেয়ে নেটফ্লিক্সে লোকে বাংলা ছবি বেশি দেখে’, বলছেন ইন্দ্রাশিস
সে দিনের কথা স্পষ্ট মনে আছে কালিকার স্ত্রী ঋতচেতা গোস্বামীর। ‘‘আরিফিনের সঙ্গে প্রসাদের পরিচয় করিয়ে দেন বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক কর্মী হাসান আরিফ। তখন আরিফিন পরিকল্পনা করছেন ছবির। প্রসাদের সঙ্গে কথা হয়। তার পর পরমের সঙ্গে যোগাযোগ হয়...,’’ স্মৃতির কথা বলে চলেছেন ঋতচেতা। ‘‘তবে কলকাতার মানুষের জন্য গোর্কি সদনে ভুবন মাঝির স্ক্রিনিং দোহার করেছিল। আমি খুশি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমাদের আবেগ, কলকাতার মানুষের অভিব্যক্তি, এই ছবির মাধ্যমে প্রকাশিত হবে।’’ যোগ করলেন ঋতচেতা। কালিকার মতোই এ ছবির সুরে আছে দোহারের গান। ছবির গানের সিডি থেকে পোস্ট প্রোডাকশনের অনেক কাজই পরবর্তীকালে দোহার করেছে, জানালেন ঋতচেতা।
পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় আর অপর্ণা ষোষের জুটি এ ছবির সম্পদ।
নিজের ছবির কাজ নিয়ে ব্যস্ত অরিন্দম শীল ডাবিং ফ্লোর থেকেই জানালেন, কেন তাঁর প্রোডাকশন ‘নাথিং বিয়ন্ড সিনেমা’ এই ছবিকে ভারতে উপস্থাপনা করছে।
‘‘দুই দেশের সিনেমার আদানপ্রদান হোক, এটা আমরা অনেক দিন ধরেই চাই। তাতে বাংলা ছবির দর্শক বাড়বে। আমার তরফ থেকে এটা সে রকম একটা উদ্যোগ। বাংলাদেশের ‘ভুবন মাঝি’-র মতো ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্মকে আমি কলকাতার মানুষের সামনে নিয়ে আসতে চেয়েছি। ভবিষ্যতে এই ধারার কাজ আরও হবে আশা করি।’’
প্রযোজক কাজী মনসুর উল হক এই উদ্যোগে যারপরনায় উৎসাহিত। ঢাকা থেকে তিনি বললেন, ‘‘ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কের সুন্দরতম সময় ১৯৭১। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের উপর নির্মিত ‘ভুবন মাঝি’ এই সম্পর্ক পুনর্বার দেখার সুযোগ করে দেয় এক সরল প্রেমের গল্প দিয়ে। আমি বিশ্বাস করি এই সিনেমা বাংলাদেশের মতো কলকাতার দর্শক ভীষণ ভাবে গ্রহণ করবে।’’
আরও পড়ুন, বলিউডের এই হোয়াইট বিউটিদের দেখে চোখ ফেরাতে পারবেন না আপনিও
দেশের রক্তঝরা স্মৃতি আর প্রেম এই ছবি জুড়ে। ‘‘প্রসাদ এই ছবির কাজ করতে করতে কেবল বলতো ভারতে এ ছবি নিয়ে যেতেই হবে। ওকে সম্মান জানানোর জন্যই ঢাকা থেকে এই ছবি মাল্টিপ্লেক্সে রিলিজের কথা ভেবেছি আমি। ‘নাথিং বিয়ন্ড সিনেমা’ আর ‘এস ভি এফ’ খুব সহযোগিতা করছে ‘ভুবন মাঝি’-কে। পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় আর অপর্ণা ষোষের জুটি এ ছবির সম্পদ।’’ জানালেন কালিকাপ্রসাদের বন্ধু শুভজিৎ রায়। তিনি দুই বাংলায় ‘ভুবন মাঝি’-র সূত্র স্থাপন করেছেন।
আসলে যে যায় সে যায় না! কালিকার স্বপ্নের মলাট খুলে আরও কয়েকটা দিন পরে ভারতের মাটি ছোঁবে ‘ভুবন মাঝি’। যে ছবি গায় ‘আমি তোমারি নাম গাই/আমার নাম গাও তুমি’।
এই নাম ভুবন মাঝির...যার আর এক নাম কালিকাপ্রসাদ...
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy