ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
দুপুরে একটা শো, রাতে আরও একটা। তার মধ্যে সাক্ষাৎকার দিতে এলেন সাদা লিনেন শার্ট আর কাঁচা-পাকা দাঁড়ি, কালো ফ্রেমের মোটা চশমার রূপঙ্কর। বেশ এক রকস্টার লুক। এই লুকের জন্যই কি কলকাতায় অন্য গায়কদের তুলনায় অনুষ্ঠানের সংখ্যা ইদানীং এত বেশি? হেসে বললেন,‘‘আমার গানে রক আছে, রবীন্দ্রসংগীত আছে, প্রচণ্ড ফান লাভিং এলিমেন্টও আছে। আমি এ প্রজন্মের নই, আবার আগের প্রজন্মেরও নই। সব মিলিয়ে কেমন একটা জগাখিচুড়ি হয়ে আছি। সেই কারণেই বোধ হয় লোকে চাইছে আমায়।’’ বরাবরই চাঁচাছোলা কথা বলেন তিনি। জানিয়ে দিলেন তাঁর ইমেজ নিয়ে তিনি আদৌ সন্তুষ্ট নন। বললেন,‘‘রূপঙ্কর মানেই প্রেমিক। তার বাবা চলে যাক, মা চলে যাক। দাঙ্গা হোক। ভূমিকম্প হোক। সারা জীবন সে প্রেমের গান গেয়ে যাবে। আমি ফেসবুকে কোনও রাজনৈতিক মত প্রকাশ করলে, কোনও কড়া রক গান গাইলে লোকে রেগে গিয়ে লিখবে, তুমি আবার এ সবে কেন?’’ শিল্পীদের ইমেজে বেঁধে রাখায় তাঁর আপত্তি। যেমন, জয়তী চক্রবর্তী শুধুই রবীন্দ্রনাথের গান গাইবে? কালিকাপ্রসাদকে কেউ ফোকের বাইরে অন্য কিছু তো গাওয়ালই না! উত্তেজিত হয়ে বললেন, ‘‘ফেসবুকে কবীর সুমন প্রতিবাদ জানান, তার মানে তিনি কোনও দিন যদি লেখেন ‘আমি ঘুগনি খাব’ সেটা কি ভুল?’’
নিজে গানের লেবেল খুলেছেন। ইউ টিউব চ্যানেলেও নতুন গান ছড়াচ্ছেন। তবুও অনেক প্রশ্ন তাঁর। সদ্যই তিনি আর ইমন চক্রবর্তী ইউ টিউবে রবীন্দ্রনাথের গান গেয়েছেন, যার এক সপ্তাহেই পঞ্চাশ হাজার ভিউ হয়েছে। প্রশ্ন করলেন,‘‘ইমনকে বললাম অনুষ্ঠানে কি কেউ এই গানের অনুরোধ করেছে?’’ খানিক থেমে নিজেই বললেন, ‘‘আমায় তো কেউ করেনি! তা হলে লাভ কী হল?’’ এক সময়ে ‘ভো কাট্টা’, ‘বউদিমনি কাগজওয়ালা’, ‘আজ শ্রাবণের বাতাস বুকে’ অ্যালবাম বেরনোর পর লোকের মুখে তাঁর গান ফিরত। আজ নতুন গান ফেরে না। ‘‘প্লিজ লিখুন না একটু, রেডিয়ো-চ্যানেলে যাতে প্রাইভেট অ্যালবাম প্রাইম আওয়ারে বাজে। কাহাতক ফিল্ম মিউজিক, হিন্দি মিউজিকের সঙ্গে লড়াই করা যায়?’’ আফসোস তাঁর গলায়। এক সময় রেডিয়োর অনুরোধের আসর থেকে বাংলা গান জনপ্রিয় হতো বলে তাঁর বিশ্বাস। খবর দিলেন তিনি, ‘‘সম্প্রতি ওড়িশায় আন্দোলন হয়েছে, রেডিয়ো স্টেশনে ৭০ শতাংশ ওড়িয়া গান না চালালে রেডিয়ো স্টেশনে ভাঙচুর করা হবে। মুম্বইতে রেডিয়োয় যাতে সব চেয়ে বেশি মরাঠি গান বাজে, তার জন্য লতা মঙ্গেশকর নিজে উদ্যোগী হয়েছিলেন, আর আমরা এখানে সব্বাই ইগো নিয়ে বসে আছি। আমার সমসাময়িক শিল্পীরা প্রত্যেকে অনিশ্চয়তায় ভোগে। কিন্তু কেউ স্বীকার করবে না।’’
আরও পড়ুন: নারী কাহিনি
ফিরে গেলেন আগের সময়ে। ‘‘আমি মনোময়, রাঘব, লোপামুদ্রা, শুভমিতা, ভূমি, চন্দ্রবিন্দু, ক্যাকটাস, ফসিল সকলের গান রেডিয়োর মাধ্যমেই এত ছড়িয়েছিল। আজ ২২ বছর পরেও রেডিয়ো চ্যানেলে গিয়ে আমায় নতুন গান বাজানোর জন্য বলতে হয়। হোয়াটস অ্যাপে মেসেজ আসে, তোমার গান আসল জায়গায় নির্বাচিত হয়নি। সরি! কে করছেন নির্বাচন? উত্তর আসে না…’’
সমসাময়িকদের চেয়ে তাঁর ফিল্মে হিট গানের সংখ্যা অনেক বেশি। সেই কারণেই শো-তে নিজের গান গাইতে পারেন। সদ্যই ‘বীরপুরুষ’ আর ‘মাইকেল’ ছবির জন্য গান রেকর্ড করেছেন। প্রাইভেট আ্যালবামেও বেশ কিছু গান জনপ্রিয়, যা আজও অনুষ্ঠানে শ্রোতারা বারবার শুনতে চান। অনুপম রায় বা রূপম ইসলাম এঁদের গান কিন্তু রেডিয়োয় বাজে, কথাটা বলতেই বললেন, ‘‘নিশ্চয় খুব ভাল খবর। কিন্তু রূপম এমনিই খুব জনপ্রিয় নতুন অ্যালবামের পর তাঁর বাড়তি কী লাভ হল, সেটা জানতে চাই।’’ এই মন্তব্যের সঙ্গে এটাও পরিষ্কার জানালেন যে, অনুপমের সংগীত পরিচালনায় ছবিতে গাওয়া, বড় প্রযোজকের ঘর থেকে ছবির গানে ডাক পাওয়া... এই ধরনের সুযোগ থাকলে হয়তো আরও সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারতেন তিনি। ‘‘রেডিয়োতে তখন রূপম বা অনুপমের মতো আমার অ্যালবামের গান বাজত।’’
কোথাও নিজেকে দায়ী করতে ইচ্ছে করে না? জানালেন, তাঁর পিআর খুব খারাপ। মুম্বইয়ের মিউজিক ডিরেক্টর মধ্যরাতে মদ খেতে ডাকলে, ওখানে প্লে-ব্যাকের আবদার নিয়ে যেতে পারবেন না। প্রায় দু’মাস তাঁর সুরের আঙুল গিটারের তার ছোঁয়নি। তাঁর কোথাও যাওয়ার নেই। কিচ্ছু করার নেই। তিনি কেবল নতুন গান ফোটার অপেক্ষায়!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy