Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
Hami

‘হামি’ সিকুয়েল নয়, বরং স্বতন্ত্র, বিশিষ্ট এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ

আর ছিল বাস্তবানুগ, সঙ্গত সংলাপ। মানুষের বাক্য ও ব্যবহারের নানা মুদ্রাদোষ সমেত। বলা যায়, ‘হামি’ সেই ছবিটিরই একটি ক্রম।

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৮ ০০:৪৫
Share: Save:

নন্দিতা এবং শিবপ্রসাদের জুটি ইতিমধ্যেই বাংলা চলচ্চিত্র শিল্পের হৃৎস্পন্দনে নতুন গতির সঞ্চার করেছে বলে শুনতে পাই। তাঁরা বাঙালি জীবনের নানা আবেগ, হতাশা, সমস্যা-সঙ্কট, হার-জিত নিয়ে ছবি তৈরি করেন। বাংলা ও বাঙালিকে অনুপুঙ্খ চেনেন বলেই তাঁদের ছবিতে বাঙালিয়ানার স্পর্শ ও গন্ধ আছে। আর সেই জন্যই তাঁদের ছবি মুক্তি পেলে বাঙালি দর্শকও হামলে পড়েন। তাঁদের সাম্প্রতিকতম ছবি ‘হামি’ দেখার পরে আমার মনে হয়েছে, তাঁদের সম্পর্কে উচ্চারিত প্রশংসাবাক্যগুলি কোনও অতিরেক নয়। এর আগে আমি ঘটনাক্রমে নন্দিতা-শিবপ্রসাদের ‘রামধনু’ নামে একটি ছবি টেলিভিশনে আংশিক দেখেছিলাম। স্কুলে বাচ্চাকে ভর্তি করানোর নৈমিত্তিক সমস্যা নিয়ে গল্প। ছবিটি আমার বেশ ভাল লেগেছিল। নির্মাণে ক্ষুরধার বুদ্ধিমত্তার ছাপ ছিল।

আর ছিল বাস্তবানুগ, সঙ্গত সংলাপ। মানুষের বাক্য ও ব্যবহারের নানা মুদ্রাদোষ সমেত। বলা যায়, ‘হামি’ সেই ছবিটিরই একটি ক্রম।

কিন্তু ‘হামি’ সিকুয়েল নয়, বরং স্বতন্ত্র, বিশিষ্ট এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ। অত্যন্ত সাম্প্রতিক, সংবাদমাধ্যমে বহুল প্রচারিত কয়েকটি ঘটনা থেকে এর নানা উপাদান সংগৃহীত হয়েছে। পরিবেশটিও রচিত হয়েছে হালফিলের শহর কলকাতা নিয়েই, আর গল্পাংশে রয়েছে সমসময়ের শিশু-অভিভাবক-বিদ্যালয়ের সম্পর্কের ত্রিমুখী জটিলতা। অভিনব নয়, কিন্তু বড় আধুনিক। এ রকম বিষয় নিয়ে ছবি করতে যাওয়া অতিশয় কঠিন, কেননা ঘটমান বর্তমানকে অনুধাবন করতে গেলে বিভ্রান্তি ঘটে যেতেই পারে। নন্দিতা-শিবপ্রসাদ যে এই সাহসে ভর করেছেন, সেটাই সাধুবাদযোগ্য।

প্রথমেই যে কথাটি বলা দরকার, সেটা হল অভিনয়। এই ছবিতে প্রায় প্রত্যেকের অভিনয় এমন এক মানে পৌঁছেছে, যেমনটা বাংলা ছবিতে সচরাচর দেখা যায় না। কোনও পরিস্থিতিতে এক জনের অভিনয় ঝুলে গেলেই গোটা দৃশ্যটা মার খেয়ে যায়, আর এমনটা সচরাচর হয়েই থাকে। এই ছবির অভিনয় এমন সূক্ষ্ম বোঝাপড়ার উপরে দৃশ্যায়িত হয়েছে যে, সমবেত অভিনয় হয়েছে অনেকটা অর্কেস্ট্রার মতো। আর তার মধ্যে স্বয়ং শিবপ্রসাদকে আমার মনে হয়েছে সবচেয়ে সহজাত অভিনেতা। তাঁর অভিব্যক্তি, বাঙ্ময় চোখ ও মুখমণ্ডল এমনই বাস্তবানুগ যে, অবাক মানতে হয়। এক জন ভিতু, উদ্বিগ্ন, দুর্বল মধ্যবিত্ত বাঙালি মূর্ত হয়েছে তাঁর মধ্যে। তিনি হয়তো ভাল পরিচালক, কিন্তু ততোধিক শক্তিশালী এক জন অভিনেতাও।

হামি পরিচালনা: নন্দিতা রায়, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় অভিনয়: ব্রত, তিয়াষা, কনীনিকা ৭/১০

পটভূমি একটি ঘ্যামা ইংরেজি মাধ্যম স্কুল। এবং সংশ্লিষ্ট অঞ্চল। যে সব চরিত্রকে দেখতে পাই, তারা আমাদের নিত্য দিনের দেখা এবং চেনা মানুষজন। এমনকী, বাচ্চাগুলোকেও আমরা যেন রোজই ইতিউতি দেখতে পাই। সেই স্কুলে একই ক্লাসে পড়ে বোধিসত্ত্ব আর তনুরুচি, যাদের বয়স সাত বছর। নবাগতা তনুর সঙ্গে বোধিসত্ত্বের ভারী ভাব হয়ে যায় আর সেখানেই পাকিয়ে ওঠে নানা গন্ডগোল। সমস্যা বাচ্চাদের মধ্যে নয়, তাদের অভিভাবকদের মধ্যে। আর শিশুদের সামান্য সামান্য আচরণও অভিভাবকদের চোখে কতটা গর্হিত হয়ে উঠতে পারে, তা নিবিষ্ট হয়ে দেখার মতো। অনেক মানুষই এই ছবিটির মধ্যে আত্মদর্শন করবেন। পুরসভার কাউন্সিলরের বউয়ের ভূমিকায় কনীনিকার দাপুটে অভিনয় ভোলার মতো নয়।

অন্য বিষয়গুলি:

Haami Bengali Movie Tollywood Celebrities
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE