Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Yash Dasgupta

WB election: নায়ক-নায়িকার ‘রিয়েল’ প্রেমে বড়ফুল আর ছোটফুল কি বিঁধছে আপসের ‘কাঁটা’ হয়ে

রাজনীতির জীবনে উল্টোপথে। নায়িকারা ‘দিদি’র অনুগামী। নায়করা ‘মোদী’র। আপাতত এই বিপরীতমুখী স্রোত দেখছে বাংলার বিধানসভা ভোট। 

যশ-নুসরত এবং বনি-কৌশানী

যশ-নুসরত এবং বনি-কৌশানী

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০২১ ১৫:৪৭
Share: Save:

কৌশানী মুখোপাধ্যায়-বনি সেনগুপ্ত। নুসরত জাহান-যশ দাশগুপ্ত। বাস্তব জীবনে প্রেমিক-প্রেমিকা বা বিশেষ বন্ধু। রাজনীতির জীবনে উল্টোপথে। নায়িকারা ‘দিদি’র অনুগামী। নায়করা ‘মোদী’র। আপাতত এই বিপরীতমুখী স্রোত দেখছে বাংলার বিধানসভা ভোট।

প্রেমিকা কৌশানীর রাজনৈতিক চিন্তাধারা থেকে বেরিয়ে বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন প্রেমিক বনি। কিছু দিন আগে যেমন ‘বিশেষ বান্ধবী’ তৃণমূলের সাংসদ নুসরতের বিরোধী বিজেপি-তে যোগ দিয়েছিলেন নায়ক যশ। মনের সঙ্গীর সঙ্গে এই রাজনৈতিক বিভাজন কি আসলে ভোটের রাজনৈতিক চরিত্রকেই বদলে দিচ্ছে? হতে পারে। কারণ, এই ভোট দেখাচ্ছে, এখন আর ‘পতির পুণ্যে সতীর পুণ্য’ হয় না। বরং সংসার ভাঙে। টাটকা উদাহরণ সৌমিত্র খাঁ আর সুজাতা মণ্ডলের বিচ্ছেদ। গত ডিসেম্বরে আচমকা বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন বিজেপি সাংসদ সৌমিত্রের স্ত্রী সুজাতা। সেদিনই সাংবাদিক বৈঠক করে স্ত্রীকে ডিভোর্স দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন সৌমিত্র। সাংবাদিক বৈঠক চলাকালীন কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন সৌমিত্র। পরদিনই সুজাতাকে ডিভোর্সের নোটিস পাঠান সৌমিত্র। আর সুজাতা সৌমিত্রকে পাল্টা চিঠি পাঠিয়ে বিবৃতি দিয়েছিলেন, “বিজেপি ছাড়তেই সৌমিত্র কান্নাকাটি করল। বলল, তৃণমূল ওর ঘরের লক্ষ্মীকে চুরি করেছে। আবার বিচ্ছেদের নোটিসও পাঠাল।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘যদি সত্যিই আমাকে ঘরের লক্ষ্মী মনে করত, তবে কি পারত বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিতে?’’

ফুল সকলেরই প্রিয়। কিন্তু বড়ফুল (আকারে বড় পদ্ম) না ছোটফুল (আকারে ছোট ঘাসফুল) নিয়ে বিরোধিতা পারিবারিক স্তরে গিয়ে পৌঁছেছে। ঘরের ভিতরের রাজনীতি নিয়ে এই বিবাদ অভিনেতা-রাজনীতিবিদ জয় বন্দ্যোপাধ্যায়-অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যেও দেখা গিয়েছিল। জয় বিজেপি-র। স্ত্রী অনন্যা তৃণমূলে। অতঃপর অবনিবনা। আনন্দবাজার ডিজিটালকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জয় বলেছিলেন, ‘‘আমাদের বিচ্ছেদের কারণ শুনলে অবাক হবেন সবাই। আমার আর অনন্যার মধ্যে কোনও বিষয় নিয়ে মতভেদ ছিল না। আমিই ওঁকে নিজে নিয়ে গিয়েছিলাম মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। তার পর থেকেই ও শাসকদলের সমর্থক।’’ জয়ের দাবি, হঠাৎই একদিন অনন্যা তাঁকে বলেছিলেন, দুই রাজনৈতিক বিরোধী এক ছাদের নীচে বসবাস করতে পারে না। জয়ের স্ত্রী-র যুক্তি ছিল, ‘‘দিনে একে অন্যকে রাজনৈতিক মঞ্চে গালাগালি দেব। রাতে আবার এক ছাদের নীচে। এটা আমি মেনে নিতে পারছি না।’’ জয়ের দাবি, তিনি অনন্যাকে বুঝিয়েছিলেন, যাবতীয় বিরোধ রাজনীতির মঞ্চে। দিনের শেষে তাঁরা স্বামী-স্ত্রী। তার পরেও টেকেনি বিয়ে। জয়ের দাবি, এক যুগেরও বেশি দাম্পত্য ভেঙেছিল রাজনীতিকে কেন্দ্র করে।

তা হলে কী রাজনীতির জন্য ভাঙবে যশ-নুসরতের ‘অঘোষিত প্রেম’? সূত্রের খবর, যশ তাঁর বান্ধবী পুনমের উৎসাহেই পদ্মশিবিরে নাম লেখান। নুসরতের কাছে নাকি যশের বিজেপি-তে যোগদান নিয়ে কোনও খবরই ছিল না। উল্টে যশ আনন্দবাজার ডিজিটালকে জানান নুসরত তাঁর বান্ধবী। সিনেমা করতে গিয়েই সেই বন্ধুত্ব। রাজনৈতিক মত আলাদা হলেও তাঁরা আবার ছবি করবেন। বন্ধুত্বও থাকবে। অনেকে ভেবেছিলেন, যশের পর নুসরতও বিজেপি-তে যাবেন। কিন্তু ভোটের প্রচারে এখনও দলনেত্রী মমতার কাছাকাছিই আছেন নুসরত। বিজেপি-বিরোধী চোখা চোখা টুইটও করছেন। ফলে আপাতত বসিরহাটের তৃণমূল সাংসদের বিজেপি-যোগের জল্পনায় খানিকটা ভাটা পড়েছে।

তবে যা রটে, তা যে ঘটে, তা প্রমাণ করে দিলেন অভিনেতা বনি। গত ৩ মার্চ বনি আনন্দবাজার ডিজিটালের কাছে দাবি করেছিলেন, ‘‘পুরোটাই গুঞ্জন। আমি দিদির পাশেই আছি। বিজেপি-তে যাবই না।’’ অথচ সেই বনিকেই বুধবার দেখা গেল গেরুয়া শিবিরের পতাকা হাতে। বনির মা পিয়া সেনগুপ্ত সদ্য যোগ দিয়েছেন শাসকদলে। প্রেমিকা কৌশানী কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্রে শাসকদলের প্রার্থী। পরিবার ও প্রেমে এর প্রভাব পড়বে না? আনন্দবাজার ডিজিটালকে বনি এখন বলছেন, ‘‘কয়েকদিন ধরে যা দেখলাম, সেই হিসেবেই বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। এটাও পেশা। সিনেমায় যেমন কৌশানী অন্য নায়কের সঙ্গে আর আমি অন্য নায়িকার সঙ্গে কাজ করি, তেমনই এখানে ও অন্য দলের হয়ে লড়বে। আমি অন্য দল। রাজনীতিও তো একটা প্রফেশন।’’ বনির আরও দাবি, এই প্রজন্ম রাজনীতি থেকে সিনেমা— সব বিষয়ে অন্যরকম ভাবতে পারে। তাতে সম্পর্ক তাতে ভাঙে না। বরং বন্ধন দৃঢ় হয়।

ইতিহাস বলছে, স্বাধীনতা-পূর্ব সময়ে দেশের এক নামজাদা শিল্পগোষ্ঠীর পরিবারের এক ভাই থাকতেন কংগ্রেস শিবিরে। অন্য ভাই ব্রিটিশ শাসকদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে চলতেন। অর্থাৎ, উভয় শিবিরেই যোগাযোগ থাকে। যাতে কোনও পরিস্থিতিতেই ঝামেলায় পড়তে না হয়। দেশের রাশ যারই হাতে থাকুক না কেন। অর্থাৎ, পুরোটাই নিজেদের মধ্যে ‘আপস’। সেই পথেই কি হাঁটছেন এখনকার নামজাদারাও? এই বিরোধিতা কি আসলে ‘আপসের কাঁটা’? প্রত্যেকেই অবশ্য সে কথা উড়িয়ে দিচ্ছেন। তাঁদের ঘনিষ্ঠদের দাবি, এ আদর্শের লড়াই। কোনও আপসের প্রশ্নই ওঠে না। এবং এর সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের কোনও যোগাযোগই নেই।

বিচিত্র রসায়ন। বিচিত্র মনন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy