Advertisement
Back to
Lok Sabha Election 2024

গরম দিলীপ ইদানীং নরম কেন? ‘সায়লেন্ট মোড’ কি কোণঠাসা হয়ে! দিলীপের জবাবে আক্ষেপের আভাস

দিলীপ ঘোষ মানেই গরম গরম কথা। এটাই ছিল বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতির পরিচয়। কিন্তু সে সব এখন অতীত। দিলীপ বড়ই চুপচাপ। কথায় তেমন ঝাঁজ নেই। দলেও কি তিনি কোণঠাসা?

Why BJP leader Dilip Ghosh is in silent mode now

দিলীপ ঘোষ। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০২৪ ১৪:২১
Share: Save:

দিলীপ ঘোষ মানে বাকি রাজনৈতিক নেতারা ঘুম থেকে ওঠার আগেই মন্তব্যের ‘বিস্ফোরণ’ ঘটিয়ে দেওয়া। প্রাতঃর্ভ্রমণে নিয়মিত যাওয়ার মতো নিয়মিত শাসকদল এমনকি, নিজের দলের সমালোচনা করাও তাঁর নিত্যনৈমিত্তিক অভ্যাস ছিল। কিন্তু সে সব এখন অতীত। এখন দিলীপ অনেক শান্ত। ‘গরম’ দিলীপ অনেক ‘নরম’। নিজেই মনে করেন ‘সায়লেন্ট মোড’-এ চলে গিয়েছেন। কিন্তু কেন?

আনন্দবাজার অনলাইনে ‘দিল্লিবাড়ির লড়াই: মুখোমুখি’-র দ্বিতীয় পর্বে মনের কথা বলে দিলেন দিলীপ। সে বক্তব্যে নিজে অনেক যুক্তি সাজালেও তাতে আক্ষেপের সুরও রয়েছে। যা দিলীপ আড়াল করতে চেয়েও পারেননি। দিলীপ নানা রকম কথা বলে রাজ্য নেতৃত্বকে সমস্যায় ফেলছেন— এমন অভিযোগে তাঁকে সতর্ক করেছিলেনন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। মুখ বন্ধ রাখার লিখিত নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। সে সবের পরে ‘চুপ’ হয়ে যাওয়া দিলীপ বলেছেন, ‘‘দলের হয়ে যে কথাগুলো বলার দরকার ছিল, সেগুলো তখন আমি বলে দিয়েছি। কারণ, আমিই ছিলাম দলের মুখিয়া (প্রধান)। এখন অন্য লোকেরা সামনে রয়েছেন। তাঁরা কথা বলছেন। তাঁদের টার্গেট করা হলে তাঁরাই উত্তর দিচ্ছেন।’’

তিনি কি আর মুখ খুলবেন না? লোকসভা নির্বাচনের সময়েও নয়? দিলীপ বলেন, ‘‘যখন প্রয়োজন হয়, তখন গ্যালারির দিকে তাকাতে হয়। নির্বাচন আসছে। সবাইকে নামতে বলা হয়েছে। আমিও করব। আমি সাংসদ হিসাবে যেটা কাজ, সেটা করছি। দলের উপর থেকে নিজের নিজের এলাকায় সংগঠন দেখতে বলা হয়েছে। আমি সেই কাজে লেগে আছি।’’ নিজেকে আপাতত ‘গ্যালারির দর্শক’ মনে করা দিলীপ অনেক দিন ধরেই রাজ্যের কাজে মন না দিয়ে নিজের লোকসভা আসনকেই ‘পাখির চোখ’ করেছেন। এমনকি, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর চারটি জনসভায় মঞ্চের ধারেকাছেও দেখা যায়নি প্রাক্তন তথা বিজেপির সফলতম রাজ্য সভাপতিকে। বারাসতে গেলেও ছিলেন দর্শকের আসনে। কেন? দিলীপের জবাব, ‘‘কোনও দিনই আমি নেতাদের সঙ্গে ছবি তুলতে ভালবাসি না। কোনও দিন কেউ দেখাতে পারবে না। এক বার শুধু আন্দামানে থাকার সময়ে লালকৃষ্ণ আডবাণীর সঙ্গে একটা গ্রুপ ছবিতে ছিলাম। বাকি মঞ্চে থাকলে যে সব ছবি ওঠে সেগুলোই।’’

তিনি ‘চুপচাপ’ যে রয়েছেন এবং তা নিয়ে যে রাজ্য রাজনীতিতে আলোচনা হয়, তা মেনে নিয়ে দিলীপ বলেন, ‘‘এটা ঠিকই। অনেকেই অনুভব করেন সেটা। সবাই বলে, দিলীপ বেশি কথা বলে। কিন্তু দিলীপ যে কথা না বলেও থাকতে পারে, সেটাও তো বোঝানো দরকার!’’ এমনই থাকবেন না বদলাবেন? সে প্রশ্নের উত্তর নিজে থেকেই দিয়েছেন দিলীপ। তিনি বলেন, ‘‘বলব। যখন প্রয়োজন হবে বলব। আমাদের সর্বভারতীয় নেতারা আসছেন। এখানকার নেতারাও রয়েছেন। তাঁরা বলছেন। আমিও জনসভায় দরকার মতো বলব। ভোট এলে মিটিং, মিছিল শুরু হলে অবশ্যই বলব।’’

একটা সময়ে দিলীপ তাঁর মুখের জন্য খ্যাত (সমালোচদের কথায় ‘কুখ্যাত’) হয়ে উঠেছিলেন। বিরোধীদের ‘বুকে পা তুলে দেব’ হুঁশিয়ারি তো রাজ্য রাজনীতিতে দিলীপেরই ‘পেটেন্ট’। তবে সে সবের জন্য তাঁর আক্ষেপ নেই। দাবি করেন, ‘‘দেবতারাও দুষ্টের দমনে বুকে পা তুলেছেন, মহিলা হয়েও ছাড় পাননি পুতনা।’’ তাঁর এমন গরম বক্তৃতা শুনতে ভিড়ও হত। রাজ্য বিজেপিতে অনেকে বলেন, দিলীপের ‘ভোকাল টনিকের’ জোরেই বিজেপির সাংসদ সংখ্যা দুই থেকে বেড়ে ১৮ হয়েছিল। বিধায়ক সংখ্যাও দুই থেকে ৭৭। দিলীপের বক্তব্য, ‘‘আমি তো সাংগঠনিক কাজ করতাম। ভাষণ না দিয়ে পর্দার পিছন থেকে কাজ করতাম। যখন ধাক্কা মেরে পর্দার পিছন থেকে মঞ্চে নিয়ে আসা হল, তখন তো বলতেই হবে। মানুষ হাততালি দেওয়ার জন্য বসে আছেন দেখে বলা শুরু করলাম।’’

সেই লড়াই কম ছিল না দিলীপের কাছে। আরএসএস প্রচারক হিসাবে ৩২ বছর কাটানোর পরে রাজনীতিতে এসে ‘স্বশিক্ষিত’ হয়েছেন তিনি। সেই পর্ব নিয়ে দিলীপ বলেন, ‘‘কর্মীদের সামনে সংগঠন নিয়ে বলতাম। হাততালি ছিল না। প্রেরণা দেওয়ার জন্য বলতাম। পরে কর্মীদের গরম করার জন্য যে বক্তৃতা, সেটা আমায় ধীরে ধীরে শিখতে হয়েছে।’’ অনেকে বক্তৃতা দিয়েই নেতা হয়েছেন বলেও কটাক্ষ করেন দিলীপ। বলেন, ‘‘জীবনে আর কিছু না করে শুধু ভাষণ দিয়েই বড় নেতা হয়ে গিয়েছেন এমন অনেকে আছেন।’’

রাজ্য-রাজনীতিতে সকলেরই এটা জানা যে, দিলীপ এখন বিজেপিতে কোণঠাসা। অনেকে তাঁর সঙ্গে আডবাণীর তুলনাও করেন। দু’জনেই দলের জন্য অনেক লড়াই দেওয়ার পরে ‘মার্গদর্শক’ হয়ে এখন গ্যালারিতে। তবে দিলীপ নিজেকে ‘কোণঠাসা’ বলে মানতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘‘আমি যা চাইনি তা-ও পেয়েছি। রাজনীতিতে এসেই রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক। এক বছরের মধ্যেই রাজ্য সভাপতি। ছ’মাসের মধ্যে আমায় প্রার্থী করে বিধায়ক করা হল। পুরো মেয়াদ থাকার আগেই সাংসদ। রাজ্য সভাপতি পদে প্রথমে মেয়াদবৃদ্ধি পরে আরও এক বার। বিজেপির মতো বিশাল দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি। আর কী চাই?’’

এ সবের মধ্যে নিজের দলেও কি তাঁর শত্রু বেড়েছে। সরাসরি সে জবাব না দিয়ে দিলীপ বলেন, ‘‘অনেকেরই হয় তো ভাল লাগেনি। কিন্তু আমি তো সবই করেছি সাফল্যের জন্য। সেটাই যখন পেয়ে গিয়েছি তখন আর কার কী বলার আছে! সাফল্য যদি এসে যায় তবে গরুর রং দেখার দরকার নেই। লাথি মেরেছে কি না দেখার দরকার নেই। দুধ তো দিচ্ছে!’’

রাজনীতিতে এসেই দিলীপ এগিয়ে গিয়েছেন। প্রথম সাত বছরে পিছন ফিরে তাকানোর সময় পাননি। সেই প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘পর পর যা হয়েছে তা হজম করতে সময় লেগেছে।’’ কিন্তু কী করে এত কিছুর জন্য নিজেকে তৈরি করলেন তা জানাতে নারাজ তিনি। সাক্ষাৎকারে সে প্রশ্ন উঠতেই বলে দেন, ‘‘সেটা আমার সিক্রেট। সবাইকে বলা যাবে না। জানতে হলে আমাদের দলে যোগ দিতে হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2024 Dilip Ghosh BJP Leader
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy