ফিরহাদ হাকিম। —ফাইল চিত্র।
গার্ডেনরিচের বহুতল বিপর্যয় নিয়ে সোমবার বাম আমলের ঘাড়ে দায় চাপিয়েছিলেন মেয়র তথা পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। মঙ্গলবার তাঁর সুর খানিক অন্য খাতে বইল। খানিক অসহায়ত্বের ছায়া। ফিরহাদ বললেন, ‘‘বেআইনি নির্মাণ সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। আমি দূর করতে পারছি না।’’ পাশাপাশি অবশ্য তিনি এ-ও জানিয়েছেন, বেআইনি নির্মাণ ঠেকানার চেষ্টা তিনি চালিয়ে যাবেন, হাল ছাড়বেন না।
যে এলাকায় বহুতল ভেঙে পড়ার ঘটনাটি ঘটেছে তা ফিরহাদের বিধানসভা কলকাতা বন্দর এলাকার মধ্যে পড়ে। মঙ্গলবার ফিরহাদ সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে বলেন, ওই এলাকায় যে এ ভাবে বেআইনি নির্মাণ হচ্ছে, তা তাঁর জানা ছিল না। তখনই তাঁর গলায় ‘অসহায়তা’র সুর শোনা যায়। তবে মঙ্গলবার তিনি কাঠগড়ায় তুলেছেন পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের আধিকারিকদের। ওই এলাকার তৃণমূল কাউন্সিলর শামস ইকবাল। বিরোধীদের অভিযোগ, কাউন্সিলরের মদতেই প্রোমোটারেরা বেআইনি নির্মাণ চালিয়ে যাচ্ছেন। বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলি দাবি করেছে, গার্ডেনরিচ, মোমিনপুর, খিদিরপুর-সহ কলকাতার যেখানে যেখানে বেআইনি নির্মাণে রমরমা চলছে, তা গোটাটাই হচ্ছে কাউন্সিলর, প্রোমোটার, পুলিশ এবং পুর আধিকারিকদের একাংশের গাঁটছড়ায়।
ফিরহাদ বলেন, ‘‘কাউন্সিলর তো পরে। এটা তো দেখার কাজ বিল্ডিং ডিপার্টমেন্টের আধিকারিকদের। যাঁরা মাইনে পান। আমরা তাঁদের শোকজ় করেছি। ভিতের সময়েই যদি ধরা যায় তা হলে এগুলো হয় না।’’ ঘটনা হল, কলকাতা পুরসভায় মেয়র পরিষদে বিল্ডিং বিভাগের দায়িত্ব ফিরহাদেরই। তবে ফিরহাদ কার্যত মেনে নিয়েছেন, তিনি মেয়র হিসাবে বেআইনি নির্মাণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। মেয়রের দাবি, ২০২১ সাল থেকে তিনি বেআইনি নির্মাণ ভাঙার বিষয়ে পদক্ষেপ করছেন। তাঁর সময়ে কলকাতায় ৮০০-র বেশি বেআইনি নির্মাণ ভাঙা হয়েছে বলেও দাবি ফিরহাদের। যার মধ্যে বেশ কিছু নির্মাণ গার্ডেনরিচ এলাকার বলেও জানিয়েছেন মেয়র।
ফিরহাদের এই বক্তব্য নিয়ে বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘নিজের মুখেই নিজের ব্যর্থতা স্বীকার করছেন মেয়র। তা হলে কোন মুখে ভোট চান আপনারা? চক্ষুলজ্জা থাকলে এখনই ইস্তফা দিন।’’ সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী জানতেন না তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যের বান্ধবীর বাড়ির খাটের তলায় নোটের পাহাড় রয়েছে। মেয়র জানতেন না তাঁর এলাকায় বেআইনি নির্মাণ হচ্ছে। এঁরা এতই সহজ-সরল যে আর কী বলব!’’
রবিবার মধ্যরাতে কলকাতা পুরসভার ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে ভেঙে পড়ে একটি নির্মীয়মাণ বহুতল। জানা যায়, তা বেআইনি ভাবে মাথা তুলেছিল। পুরসভার তরফেও স্বীকার করে নেওয়া হয়, ওই বহুতলটি নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অনুমতি ছিল না। প্রোমোটারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ন’জনের মৃত্যু হয়েছে। মাথায় ব্যান্ডেজ নিয়ে অসুস্থ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সোমাবার সকালে অকুস্থলে গিয়েছিলেন। দেখা করেন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জখমদের সঙ্গেও। তবে ভোটের আগে বেআইনি নির্মাণ নিয়ে যখন বিরোধীরা প্রায় একযোগে তৃণমূলকে কাঠগড়ায় তুলতে চাইছে, তখন মঙ্গলবার বেশ অসহায় শোনাল মেয়রের গলা। তিনি কি চাপে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy