পিলার ঠেলে ঢুকে এসেছে কার্নিশ। কোথাও বা বাড়ির মাথায় মাথায় ঠোকাঠুকিতে ভেঙে গিয়েছে দেওয়াল। গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
একটির গায়ে হেলে পড়েছে আরেকটি বহুতল। পাঁচতলা দু’টি বাড়ি পাশাপাশি। তবে সোজা নয়, মাথায় মাথা ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কার ঘাড়ে কোনটা এসে পড়েছে, এক ঝলক দেখে বোঝা দায়! তবে ভাল করে নজর করলে বোঝা যায়, আসলে বাঁদিকের বাড়ির গায়েই হেলান দিয়েছ ডানদিকেরটি। হেলে পড়া বহুতলের চাপে পাশের বাড়ির জানলা থেকে শুরু করে কার্নিশ এমনকি, পিলারও ভেঙে তাল তুবড়ে গিয়েছে। ফাটল ধরেছে দেওয়ালেও। সেই ফাটল ভেদ করে ভিতরে ঢুকে এসেছে হেলান দেওয়া বাড়ির কার্নিশ। আর এই দুই হেলান দেওয়া বহুতলের ঠিকানা সেই গার্ডেনরিচেরই পাহাড়পুর রোড!
ঠিক একটা গলি পেরিয়েই এখনও ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে ভেঙে পড়া বেআইনি বহুতলের ধ্বংসস্তূপ। যার নীচে চাপা পড়ে বেঘোরে প্রাণ গিয়েছে ন’জনের। মঙ্গলবার বিকেলেও সেই কংক্রিটের স্তূপের নীচে প্রাণের সন্ধান চলেছে। যদিও তাতে এই হেলান দেওয়া বাড়ির বাসিন্দাদের বিশেষ হেলদোল নেই। উল্টে তাঁদের দাবি, হেলে পড়লেও তাঁদের বাড়ির ভেঙে পড়ার কোনও অবকাশ নেই। কারণ, তাঁদের বাড়ির ভিত শক্ত!
পাহাড়পুর রোডের এই দু’টি বাড়ি তৈরি হয়েছে পুরনো বাড়ি ভেঙে। দু’টি বাড়ির মাঝে আইন মেনে দূরত্ব রাখা হলেও সেই ফাঁক বজায় থেকেছে বড়জোর দোতলা পর্যন্ত তিন তলা থেকে ধীরে ধীরে সীমা ছাড়াতে শুরু করেছে বারান্দা, জানলা। পাঁচতলায় বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ঘরের মেঝেও। ফলে দু’টি বাড়ির মধ্যে পাঁচ ফুটের দূরত্ব তো দূর অস্ত্ এক আঙুলের ফাঁকও থাকেনি আর। বিশেষ করে এই দু’টি বাড়িতে দৃশ্যতই মাথায় মাথায় ঠোকাঠুকি লেগেছে।
এখান থেকে দু’পা এগোলেই দেখা যাবে গার্ডেনরিচের ভেঙে পড়া বহুতল। দুর্ঘটনাস্থলে গিয়েছেন? দেখেছেন কী হয়েছে? পাহাড়পুরের ‘হেলা-বাড়ি’র বাসিন্দাদের কাছে জানতে চাওয়া হলে দু’বাড়ির মানুষ দু’রকম কথা বলেছেন। হেলে পড়া বাড়ির এক বাসিন্দার দাবি, ‘‘আমাদের বাড়ির ভিত অনেক শক্ত ভেঙে পড়বে না। তা ছাড়া আমাদের বাড়ি হেলে পড়েনি। পাশের বাড়িই হেলে এই বাড়ির উপর এসে পড়েছে।’’ আর অন্য বাড়িটির বাসিন্দা এক তরুণ বলছেন, ‘‘জানি হেলে পড়েছে। কিন্তু ভাঙলে তো পাশের অংশ ভাঙবে। আমি তো বাড়ির অন্য প্রান্তে থাকি। সেখানটা ঠিক থাকবে। তাই এ সব নিয়ে ভাবছি না।’’
দু’টি বাড়িরই নীচে রয়েছে অজস্র দোকানপাট। জামা কাপড়ের দোকান থেকে শুরু করে রেশন দোকান— সবই আছে। গায়ে গায়ে লোগে রয়েছে ছোট খাট অন্য বাড়িও। দুর্ঘটনা ঘটলে তার প্রভাব পড়বে সেই সব বাড়িতেও। তবে সে কথা জেনেও বেআইনি নির্মাণ নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ এলাকার মানুষ।
বলতে গেলে, গার্ডেনরিচে এমন বাড়ির ছড়াছড়ি। অদ্ভুত ভাবে কোনও বাড়িরই গায়ে রঙের পোঁচ পড়েনি। অথচ তৈরি হওয়ার পর বছর পাঁচেক কেটে গিয়েছে। বাড়ির প্রতিটি তলে থাকেও বহু পরিবার। পাহাড়পুর থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে আজহার মোল্লা বাগান লেনে রয়েছে আরও দু’টি এমন মাথায় মাথা লেগে যাওয়া বহুতল। পাঁচতলা সেই জোড়া বহুতলের একটিতে আবার রয়েছে প্রোমোটার মহম্মদ ওয়াসিম ওরফে ওয়াসিরই ফ্ল্যাট। যে ওয়াসিকে গার্ডেনরিচের ভেঙে পড়া বহুতলের প্রোমোটারির জন্য সোমবার গ্রেফতার করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ওই ফ্ল্যাটে পরিবার নিয়েই থাকতেন ওয়াসি। তাঁর ফ্ল্যাট গ্রাউন্ড ফ্লোরে। তবে এর বেশি আর ওয়াসির কাজ নিয়ে খুব বেশি মুখ খুলতে চাননি কেউই। বরং প্রশ্ন করলে এড়িয়েই যেতে চেয়েছেন বেশি। কেউ বা মুখ ঘুরিয়ে চলে গিয়েছেন সেখান থেকে।
এর মধ্যেই মঙ্গলবার শহরের মেয়র ফিরহাদ হাকিম একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন বেআইনি নির্মাণ একটি সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। একে আটকাতে হবে তিনি জানেন, কিন্তু কী ভাবে আটকাবেন, তা এখনও তাঁর কাছে স্পষ্ট নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy