শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র
সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে বিজেপির ‘চক্রান্তের’ বিষয়টি তুলে ধরতে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হতে চলেছে তৃণমূল। বৃহস্পতিবার দলের রাজ্যসভার সাংসদ সাগরিকা ঘোষ দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের সদর দফতর নির্বাচন সদনে যাচ্ছেন। রাজ্যের শাসকদল সূত্রে খবর, সন্দেশখালি নিয়ে সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া একাধিক ভিডিয়ো নিয়ে কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন তিনি। এর পাশাপাশি রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে যে অপশব্দ প্রয়োগের অভিযোগ উঠেছে, তা-ও কমিশনের গোচরে আনা হচ্ছে বলে তৃণমূল সূত্রে খবর।
নির্বাচন কমিশনে এই দু’টি বিষয়ে অভিযোগ জানানোর পরে দুপুর ৩টে নাগাদ কমিশনের সদর দফতরের মূল ফটকের সামনে সাংবাদিক বৈঠক করেন সাগরিকা। তিনি বলেন, “বাংলার ভাবমূর্তি নষ্ট করতে, ভোটারদের কাছে তৃণমূল সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করতে সন্দেশখালি নিয়ে ষড়যন্ত্র করেছিল বিজেপি। ২০০০ টাকা, ৩০০০ টাকার বিনিময়ে মহিলাদের অভিযোগ করানো হয়েছিল। আমরা মনে করছি, এটার পরিকল্পনা করেছিলেন শুভেন্দু। তাই তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে পদক্ষেপ করার জন্য কমিশনকে অনুরোধ জানিয়েছি।” রাজ্যে প্রচারে এসে নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহদের ‘ক্ষমা চাওয়া উচিত’ বলেও জানিয়েছেন সাগরিকা।
সন্দেশখালি নিয়ে ৩২ মিনিট ৪২ সেকেন্ডের একটি স্টিং ভিডিয়োকে ঘিরে গত শনিবার থেকে তোলপাড় শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। ওই ভাইরাল ভিডিয়োয় বিজেপি নেতা গঙ্গাধর কয়ালকে বলতে শোনা গিয়েছে যে, সন্দেশখালিতে টাকার বিনিময়ে ধর্ষণের ‘মিথ্যে’ অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে। বসিরহাট আসনে বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্রও দু’হাজার টাকার বিনিময়ে ধর্ষণের ‘মিথ্যে’ অভিযোগ দায়ের করেছিলেন বলে দাবি করেছিলেন ওই পদ্মনেতা। বিজেপি অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করে ওই ভিডিয়োকে ‘সাজানো’ এবং ‘বিকৃত’ বলেছে। গঙ্গাধরও কণ্ঠস্বর বিকৃতির অভিযোগ তুলেছেন। যদিও ওই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন। এই নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই সন্দেশখালির এক মহিলার বক্তব্যের ভিডিয়ো বুধবার প্রকাশ্যে আসে। সেই ভিডিয়োয় মহিলার দাবি, তাঁকেও ধর্ষণ করা হয়েছে বলে মিথ্যে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল থানায়। না জানিয়ে সাদা কাগজে সই করানো হয়েছিল। এক সপ্তাহ পর তিনি সবটা জানতে পারেন। মহিলার আরও দাবি, পরে যখন তিনি মামলা তুলতে চান, তাঁকে ‘হুমকি’ দেওয়া হয়। ভিডিয়োয় অভিযোগকারিণীর দাবি, এ সবের নেপথ্যে ছিলেন মাম্পি দাস এবং পিয়ালি দাস। তবে এই ভিডিয়োটির সত্যতাও যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন।
বৃহস্পতিবার সকালে নতুন আরও একটি ভিডিয়োয় দেখা যায় রাষ্ট্রপতি ভবনে গিয়ে দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে দেখা করা নির্যাতিতাদের পরিচয় নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন বসিরহাটের বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্র। তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে একই প্রশ্ন তুলেছেন সন্দেশখালির আর এক আন্দোলনকারিণী মাম্পি দাসও। তবে এই ভিডিয়োটিরও সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন। ভিডিয়োগুলি প্রকাশ্যে আসার পরেই তৃণমূলের তরফে অভিযোগ করা হচ্ছে যে, রাজনৈতিক স্বার্থে মিথ্যা অভিযোগ করিয়ে আদতে সন্দেশখালির মা-বোনেদেরই অপমান করছে বিজেপি।
অন্য দিকে, সন্দেশখালির প্রসঙ্গ উঠতেই মেজাজ হারিয়ে শুভেন্দু অপশব্দ প্রয়োগ করেন বলে অভিযোগ। বুধবার বাঁকুড়ার সারেঙ্গায় নির্বাচনী প্রচারে গিয়েছিলেন শুভেন্দু। সেখান থেকে ফেরার পথে তাঁর উদ্দেশে কেউ বা কারা স্লোগান দিতে শুরু করেন। অভিযোগ, কাছেই তৃণমূলের একটি জনসভা চলছিল। শুভেন্দু গাড়িতে ওঠার সময় সেখান থেকেই তাঁকে উদ্দেশ করে সন্দেশখালি প্রসঙ্গে মাইকে মন্তব্য করা হয়। যা শুনে তিনি মেজাজ হারান। তার পরেই অশালীন শব্দ প্রয়োগ করার অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। বুধবার রাতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সেই ভিডিয়ো এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে পোস্ট করেন। যদিও এই ভিডিয়োরও সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন।
আগামী সোমবার রাজ্যে চতুর্থ দফার নির্বাচন। এখনও ৩২টি লোকসভা কেন্দ্রে ভোট বাকি রয়েছে। তার আগে সন্দেশখালির ভিডিয়ো, অভিযোগকারিণীদের অভিযোগ প্রত্যাহার এবং শুভেন্দুর ‘অপশব্দ’— সব মিলিয়ে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলকে তৃণমূল চাপে রাখার কৌশল নিচ্ছে বলেই মনে করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রী এবং অন্য জনপ্রতিনিধিরা এক্স হ্যান্ডলে সন্দেশখালির ওই সমস্ত ভিডিয়ো (যেগুলির সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন) পোস্ট করে বিজেপিকে ‘বাংলাবিরোধী’ এবং ‘নারীবিরোধী’ বলে তোপ দাগা শুরু করে দিয়েছেন। ইতিমধ্যেই এক্স (সাবেক টুইটার) পোস্ট করেছেন রাজ্যের মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়, বিরবাহা হাঁসদা, রাজ্যসভার সাংসদ তথা তৃণমূল মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy