(বাঁ দিকে) মহম্মদ সেলিম। অধীর চৌধুরী (ডান দিকে)। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
বাংলায় তৃণমূলের সঙ্গে জোটের সম্ভাবনা কি একেবারে শেষ হয়ে গিয়েছে? বৃহস্পতিবার রাতেও তেমন মনে করেননি প্রদেশ কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব। তবে রাহুল গান্ধীর যাত্রায় মহম্মদ সেলিম এবং সুজন চক্রবর্তীর মতো রাজ্য সিপিএমের প্রথম সারির নেতৃত্বের প্রকাশ্য উপস্থfতি বিধানভবনে আশা জাগিয়েছে। এতটাই যে, তার পর ঘরোয়া আলোচনায় প্রদেশ কংগ্রেসের নেতারা সিপিএমের সঙ্গে সমঝোতার প্রশ্নে আসনভিত্তিক ফর্মুলাও বলে দিচ্ছেন। তবে সিপিএম এবং কংগ্রেস দুই তরফেই স্পষ্ট করা হয়েছে, রাহুলের সঙ্গে সেলিমদের দেখা হলেও বাংলায় জোট নিয়ে একটি শব্দও আলোচনা হয়নি। তার পরিসরও ছিল না।
প্রশ্ন হল, সিপিএমের সঙ্গে জোট হলে কত আসনসংখ্যা দিয়ে দর কষাকষি শুরু করবে কংগ্রেস? প্রদেশ কংগ্রেসের এক প্রথম সারির নেতা অধীর চৌধুরীকে উদ্ধৃত করে বলেন, ‘‘২০টি আসন দিয়ে কথা শুরু করা হবে। কিন্তু দাদা (অধীর) ১২-১৩ আসন পর্যন্ত নামতে রাজি।’’ যে কোনও দুই বা একাধিক দলের আসন বোঝাপড়ায় স্নায়ুর লড়াই থাকে। ভোটের অঙ্ক দেখিয়ে দর কষাকষিও নতুন নয়। তবে কংগ্রেস এবং সিপিএম দুই দলের নেতারাই বলছেন, গোটাটাই সুষ্ঠু ভাবে হোক তাঁরা চাইছেন। পাঁচ বছর আগের লোকসভা ভোটের পুনরাবৃত্তি তাঁরা কেউই চান না। সে বার জোটের আলোচনার মধ্যেই বামেদের একতরফা প্রার্থী ঘোষণা করে দেওয়া সমঝোতা বিগড়ে দিয়েছিল। তৎকালীন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা অধুনাপ্রয়াত সোমেন মিত্রের সঙ্গে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর বাগ্যুদ্ধও রাজনৈতিক মহলের অনেকেরই স্মরণে রয়েছে।
সিপিএম চায় মালদহ উত্তর এবং মুর্শিদাবাদ আসনে দলের প্রতীকে প্রার্থী দাঁড় করাতে। প্রদেশ কংগ্রেস এই দুই আসন ছাড়ার ব্যাপারে নমনীয়। তবে বিধানভবন আবার চায় পুরুলিয়া ও রায়গঞ্জে ‘হাত’ চিহ্নের প্রার্থী। ঘটনাচক্রে, পুরুলিয়া বাম শরিকদের মধ্যে ফরওয়ার্ড ব্লকের পাওনা আসন। ফলে সিপিএম রাজি হলেও শরিক দলকে রাজি করানোর বিষয়ে বিমানকে দায়িত্ব নিতে হবে। এই রকম নানাবিধ ফর্মুলা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে কংগ্রেসের মধ্যে। সিপিএমের মধ্যেও হিসেব কষা চলছে। দার্জিলিং আসনেও নিজেদের প্রতীকে লড়তে চায় কংগ্রেস। এমনকি, বোলপুর অথবা বীরভূমের মধ্যে একটি আসনও কংগ্রেসের অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে।
তবে প্রদেশ কংগ্রেসের এক নেতা শুক্রবার স্পষ্টই বলেন, ‘‘তখনই সিপিএমের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ভাবে আলোচনা শুরু হবে যখন হাইকমান্ড অনুমতি দেবে। তার আগে তা সম্ভব নয়।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘সামনেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিল্লি সফর রয়েছে। আমরা জানি না সেই সফরে কী কী হবে।’’ তাঁর ‘আশঙ্কা’ তৃণমূল নেত্রীর আসন্ন দিল্লি সফরে কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গান্ধীর সাক্ষাৎ হতে পারে। তার পর পরিস্থিতি বদলে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। মমতা ইতিমধ্যেই বলেছেন, গান্ধী পরিবারের সঙ্গে তাঁর ‘পারিবারিক সম্পর্ক’ ভাল। কিন্তু ‘রাজনৈতিক সম্পর্ক’ নেই। অন্য দিকে, রাহুল থেকে শুরু করে জয়রাম রমেশের মতো সর্বভারতীয় কংগ্রেস নেতৃত্ব এখনও তৃণমূল সম্পর্কে কোনও কড়া মন্তব্য করেননি। এমনকি, বাংলা-বিহার সীমান্তে রাহুলের গাড়ির কাচ ভাঙার ঘটনাতেও রাজ্য ও সর্বভারতীয় কংগ্রেস নেতৃত্বের মতের বৈপরীত্য প্রকাশ্যে এসে গিয়েছে। ফলে রাজনীতির সম্ভাবনার খেলার দিকে তাকিয়ে বাংলার কংগ্রেস এবং সিপিএম। তবে প্রদেশ কংগ্রেসের নেতারা বলছেন, বামেদের সঙ্গে জোট হলে অনেক বেশি দরকষাকষির সুযোগ থাকবে। তৃণমূলের সঙ্গে গেলে তা হবে না। তবে সবটাই নির্ভর করছে হাইকমান্ডের উপর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy