অধীর চৌধুরী। —ফাইল চিত্র।
শুধু একটা লোকসভা কেন্দ্র থেকে পাঁচ বারের সাংসদই নন। তিনি একাধারে লোকসভায় বৃহত্তম বিরোধী দলের নেতা, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি, এআইসিসি-র ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য এবং সংসদের পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির (পিএসি) চেয়ারম্যান। দলের এমন গুরুত্বপূর্ণ নেতা যখন নির্বাচনে কঠিন লড়াইয়ের ময়দানে, আগাগোড়া উদাসীন থাকল এআইসিসি! বহরমপুরে অধীর চৌধুরী লড়ে গেলেন একা কুম্ভ হয়েই!
নিজের প্রচারে কোনও কালেই দলের সর্বভারতীয় নেতাদের আমন্ত্রণ করেন না কংগ্রেস সাংসদ অধীর। এ বারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে ভোটের মাত্র মাসদুয়েক আগে মুর্শিদাবাদ জেলা এবং বহরমপুর হয়ে ‘ন্যায় যাত্রা’ করে গিয়েছিলেন রাহুল গান্ধী। সেই সময়ে জেলা জুড়ে কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকদের উদ্দীপনা এবং ভিড় কারওরই চোখ এড়ায়নি। তার পরেও অধীরের ভোটে কংগ্রেসের সর্বভারতীয় নেতারা কেউ প্রচারে আসেননি তো বটেই, ভোটের ব্যাপারে কোনও খেীঁজও নেননি। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের এমন মনোভাবে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে রাজ্যের কংগ্রেস শিবিরে। বিজেপির প্রার্থীদের জন্য নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহদের পরিশ্রমের সঙ্গে তাঁরা নিজেদের দলের কাণ্ড-কারখানা তুলনা করে দেখছেন এবং ক্ষুব্ধ হচ্ছেন।
এই প্রশ্নে স্বয়ং অধীরের বক্তব্য, ‘‘আমার লড়াই আমিই লড়েছি। কেউ কিছু জানতে চায়নি। খোঁজ নেয়নি। আমাদের রাজ্যে যিনি এআইসিসি পর্যবেক্ষক (গুলাম আহমেদ মির) তিনিও খোঁজ করেননি ভোটে কোথাও কোনও সমস্যা হল কি না। কী আর বলব? দুর্ভাগ্যজনক!’’
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির সঙ্গে ‘বিজেপির আঁতাঁতে’র অ্ভিযোগ এনে গোটা নির্বাচনে সরব তৃণমূল কংগ্রেস। অধীরের ভোটে এআইসিসি-র দূরে থাকা নিয়ে তারা ‘অধীর কংগ্রেস’কে কটাক্ষও করেছে। বাইরে যখন এমন আক্রমণ, ঘরেও কংগ্রেসের এক নেতা বলছেন, ‘‘অধীরদা না হয় কাউকে আমন্ত্রণ করেননি। কিন্তু লোকসভায় যিনি গত পাঁচ বছরে দলের নেতা, সংসদে মোদীর বিরুদ্ধে লড়েন, তাঁর জন্য দলের কোনও দায়িত্ব নেই?’’
প্রচার চলাকালীন অধীরের একটি বক্তব্যের আগে-পরের অংশ বাদ দিয়ে একটি কথাকে তুলে সরব হয়েছিল তৃণমূল। অভিযোগ পেয়ে প্রাথমিক তদন্তের পরে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছিল, ওই ‘ভিডিয়ো’ বিকৃত করা হয়েছে। অথচ কমিশনের সেই রায় আসার আগেই ইঙ্গিতপূর্ণ বার্তা দিয়ে বসেছিলেন এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) কে সি বেণুগোপাল। প্রদেশ সভাপতির কাছে তিনি এই ব্যাপারে খোঁজও নেননি। এর পরে সন্দেশখালি-কাণ্ডে এআইসিসি-র মুখপাত্র পবন খেরা তৃণমূলের সুরে মন্তব্য করায় ক্ষুব্ধ অধীর বলেছেন, রাজ্যের বিষয়ে কিছু বলার আগে সর্বভারতীয় নেতারা যেন দলের রাজ্য নেতৃত্বের কাছে একটু জেনে নেন! সেই রেশই বজায় রয়েছে রাজ্যের কংগ্রেস শিবিরে।
একলা লড়াইয়ে অবশ্য অধীর অভ্যস্ত বহু কালই। এ বারও সালারের কয়েকটা বুথে পুনর্নির্বাচন দাবি করলেও বহরমপুর আসন ধরে রাখার ব্যাপারে তিনি ও দল আত্মবিশ্বাসী। অধীরের কথায়, ‘‘কংগ্রেস ১৯৯৮ সালে এই আসন এক লক্ষ ৯৮ হাজার ভোটে হেরেছিল। সেই আসনে ১৯৯৯ সালে জিতে শুরু করেছিলাম। চতুর্মুখী লড়াইয়ে এই আসনে সাড়ে তিন লক্ষ ভোটে জিতেছি। বিজেপি এবং তৃণমূল দু’পক্ষকেই হারিয়ে জয়ী হয়েছি। এ বার সিপিএম সঙ্গে আছে। কিন্তু এখানে নিজের জোরে বারবার জেতার ইতিহাস আছে!’’
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমও ইতিমধ্যেই বলে রেখেছেন, ‘‘বহরমপুরে অধীরবাবু একাই কাফি!’’ তবে ভোটের দিনে বহরমপুর লোকসভার বিভিন্ন বিধানসভা কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থীর হয়ে বুথে লড়াই করেছেন সিপিএমের কর্মী-সমর্থকেরা। যেমন মুর্শিদাবাদে করেছিলেন কংগ্রেস কর্মীরা।
নিজের আসনে ভোট মিটে যাওয়ার পরেই আবার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির ভূমিকায় নেমে পড়ছেন বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদ। কলকাতায় তাঁর কাল, বৃহস্পতিবার দলীয় কর্মসূচিতে থাকার কথা। পঞ্চম দফার ভোটের আগে সিপিএমের আমন্ত্রণে প্রচারে যাওয়ার কথা ব্যারাকপুরে। অধীর বলছেন, ‘‘যাঁরা যেমন ভাবে বলবেন, সেই মতো যাওয়ার চেষ্টা করব নিশ্চয়ই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy