Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
Editorial News

এই অভূতপূর্ব সঙ্কট অবিলম্বে কাটানো জরুরি

বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা সংক্রান্ত কেলেঙ্কারির তদন্তের নামে সিবিআই কর্তারা পৌঁছলেন কলকাতা পুলিশ কমিশনারের বাংলোর সামনে। কিন্তু কমিশনারের বাংলোয় সিবিআইকে ঢুকতেই দিল না কলকাতা পুলিশ। প্রকাশ্য রাজপথে বেনজির ধ্বস্তাধস্তি চলল দুই সরকারি বাহিনীর মধ্যে।

আটক সিবিআই কর্তারা।—ছবি পিটিআই।

আটক সিবিআই কর্তারা।—ছবি পিটিআই।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:১৯
Share: Save:

অভূতপূর্ব ঘটনাপ্রবাহের সাক্ষী হলাম আমরা। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই এবং রাজ্যের নিয়ন্ত্রণাধীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কলকাতা পুলিশের মধ্যে যে বেনজির দ্বৈরথের ছবি রবিবার সন্ধ্যায় দেখা গেল এবং তাকে কেন্দ্র করে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক জল যত দূর গড়িয়ে গেল, কোনও গণতান্ত্রিক কাঠামোর পক্ষে তা মোটেই স্বাস্থ্যকর নয়।

বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা সংক্রান্ত কেলেঙ্কারির তদন্তের নামে সিবিআই কর্তারা পৌঁছলেন কলকাতা পুলিশ কমিশনারের বাংলোর সামনে। কিন্তু কমিশনারের বাংলোয় সিবিআইকে ঢুকতেই দিল না কলকাতা পুলিশ। প্রকাশ্য রাজপথে বেনজির ধস্তাধস্তি চলল দুই সরকারি বাহিনীর মধ্যে। সিবিআই কর্তাদের ঢুকিয়ে দেওয়া হল পুলিশের গাড়িতে। পুলিশ কমিশনারের বাংলোর সামনে থেকে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে তাঁদের বসিয়ে রাখা হল থানায়। পুলিশের দাবি, পুলিশ কমিশনারের বাংলোয় ঢোকার জন্য উপযুক্ত নথিপত্র ছিল না সিবিআইয়ের কাছে। সিবিআইয়ের দাবি, আইনানুগ পথেই পুলিশ কমিশনারের বাংলোয় গিয়েছিলেন তাঁরা। কারা সত্য বলছেন, কারা মিথ্যা, তা স্পষ্ট নয়। বিষয়টি সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়াতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টে হয়তো সত্যাসত্য সামনে আসবে। কিন্তু তার আগে যে কাণ্ড ঘটে গেল কলকাতায়, তাতে জনসাধারণ স্তম্ভিত।

ভারতের অন্যতম গর্বের শহর কলকাতায় রবিবার সন্ধ্যার ঘটনাপ্রবাহ শুধু কলকাতাবাসী বা বঙ্গবাসীকে স্তম্ভিত করেনি, স্তম্ভিত করেছে গোটা দেশকে। কেন্দ্রীয় সরকার এবং কোনও একটি অঙ্গরাজ্যের সরকার পরস্পরের সঙ্গে এই রকম অভাবনীয় দ্বৈরথে জড়াচ্ছে, এমন ছবি ভারত আগে কখনও দেখেনি। পুলিশ কমিশনারের বাড়িতে সিবিআই হানা, তা রুখতে পুলিশের পাল্টা পদক্ষেপ সিবিআই কর্তাদের বিরুদ্ধে, পুলিশ কমিশনারের বাংলোকে দুর্গে পরিণত করা, সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর এবং রাজ্য পুলিশের শীর্ষ কর্তাদের ছুটে যাওয়া, পুলিশ কমিশনারের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সাংবাদিক সম্মেলন, কলকাতায় এবং বিধাননগরে সিবিআইয়ের দফতর এবং সিবিআই কর্তার বাড়ি পুলিশ দিয়ে ঘিরে ফেলা, পাল্টা আসরে নামা কেন্দ্রীয় বাহিনীর এবং সিবিআই দফতরের নিয়ন্ত্রণ হাতে নেওয়া, রাত থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্নায় বসা মুখ্যমন্ত্রীর— মাত্র কয়েকটা ঘণ্টার মধ্যে উপর্যপরি ঘটে গেল এ রকম একটার পর একটা বেনজির ঘটনা। ঘটনাপ্রবাহের অভিঘাত সামলে ওঠা মুশকিল হয়ে দাঁড়াচ্ছে জনসাধারণের পক্ষে। এই সব ঘটনার তাৎপর্য কী, এমন চূড়ান্ত প্রশাসনিক অস্থিরতার অন্তিম ফলাফল কী হতে পারে, কোন পথে এগচ্ছে দেশ, রাজ্যের পরিস্থিতি কী হতে চলেছে— তা নিয়ে অগাধ অন্ধকারে নাগরিকরা। তাই অস্থিরতা দ্রুত কাটা দরকার, এই অন্ধকার থেকে নাগরিকদের বার করে আনাও দরকার। সেই দায়িত্ব কেন্দ্রের এবং রাজ্যের সরকারকেই নিতে হবে। কারণ দুই সরকারের সংঘাতেই এই অন্ধকার তৈরি হল।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

আবার বলছি, যে ঘটনা ঘটল, তা অত্যন্ত ব্যতিক্রমী তো বটেই, গভীর উদ্বেগজনকও। সুসংহত একটা রাষ্ট্র ব্যবস্থায়, দীর্ঘ দিন ধরে গণতন্ত্রে অভ্যস্ত একটা দেশে এই রকম ঘটনা ঘটতে পারে, তা কল্পনারও অতীত ছিল। কেউ বলছেন সাংবিধানিক সঙ্কট, কেউ বলছেন অভ্যুত্থানের চেষ্টা, কেউ বলছেন যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ভেঙে পড়ার উপক্রম। আর ক্রমশ আশঙ্কায় এবং উদ্বেগে নিমজ্জিত হচ্ছেন সাধারণ জনতা। এর পরে আর কী অপেক্ষায় রয়েছে, কত দূর গড়াবে এই সংঘাত, জনজীবনে স্বাভাবিকতা বজায় থাকবে কি না, এ রাজ্য বা এই দেশ কোনও অকল্পনীয় ক্ষতির সম্মুখীন হবে কি না— আশঙ্কার এমনই সব প্রশ্নচিহ্ন ভেসে বেড়াতে শুরু করেছে সাধারণ্যে। অতএব এই পরিস্থিতির দ্রুত নিরসন দরকার। দায়িত্বটা সরকারকেই নিতে হবে।

আরও পড়ুন: রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ লোপাটের প্রমাণ আছে, বললেন অন্তর্বতী সিবিআই প্রধান

আরও পড়ুন: ধর্নায় মমতা, পাশে থেকে কেন্দ্রের নিন্দায় চন্দ্রবাবু-দেবগৌড়া-অখিলেশ-কেজরী

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE