চলছে সেনার টহলদারী। —ফাইল চিত্র।
জম্মু ও কাশ্মীরে নির্বাচনে জিতে ন্যাশনাল কনফারেন্স সরকার গড়ার পর এক মাসও পেরোয়নি। আশ্চর্যের ও আতঙ্কের, এই স্বল্প সময়েই কাশ্মীরের নানা এলাকায় অন্তত পাঁচটি জঙ্গি হামলা হয়েছে, শোপিয়ান গন্দেরবল পুলওয়ামা বদগাম-সহ নানা জেলায়। সন্ত্রাসবাদী হানায় জম্মু ও কাশ্মীরের স্থানীয় বাসিন্দা এবং দায়িত্বরত সেনাকর্মীদের প্রাণহানির দীর্ঘ রক্তাক্ত অতীত হয়তো পিছনে ফেলে আসা গেল, এই ভেবে যখন নতুন সময়ের, নতুন মজবুত অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছিল এই ভূখণ্ড, তখনই এল আঘাত। দেখা যাচ্ছে, এ বারের হামলাগুলিতে সুর্নির্দিষ্ট লক্ষ্য করা হচ্ছে পরিযায়ী শ্রমিকদের। গন্দেরবলে হামলায় নিহত পরিযায়ী শ্রমিকেরা কাজ করছিলেন শ্রীনগর-লে হাইওয়ে প্রকল্পের সুড়ঙ্গে, বদগামের আহতরা জলের ট্যাঙ্ক নির্মাণে। এরই মধ্যে নিহত অন্তত ছয় পরিযায়ী শ্রমিক, কয়েক জনের প্রাণ বেঁচেছে কপালজোরে।
এত কাল সেনা বা স্থানীয় বাসিন্দারা ছিলেন যে ‘হিট লিস্ট’-এ, সেখানে পরিযায়ী শ্রমিকদের সংযোজন এক নতুন বিপদসঙ্কেত। তার আসল বার্তাটি হল জম্মু ও কাশ্মীরে পূর্ত, পরিবহণ, সামরিক নির্মাণক্ষেত্র-সহ যে কোনও অর্থনৈতিক পরিকাঠামোর গড়ে ওঠা বা তার অগ্রগতিকে বানচাল করা। শ্রীনগর-লে মহাসড়ক তৈরি হলে বছরভর যে কোনও পরিস্থিতি ও আবহাওয়ায় কাশ্মীর থেকে লাদাখের মধ্যে যোগাযোগ মসৃণ হবে, সামরিক কৌশলগত দিক থেকেও তার প্রভূত গুরুত্ব। আবার রাস্তা, জলের ট্যাঙ্ক থেকে শুরু করে অন্যান্য সরকারি নির্মাণ প্রকল্পগুলি ভাল ভাবে হলে সাধারণ মানুষের যেমন লাভ, তেমনই সুবিধা কাশ্মীরে বেড়াতে আসা পর্যটকদেরও— শীত আসছে, ভ্রমণ-মরসুমও দুয়ারে। ঠিক এই সময়টিতে জঙ্গি হামলায় তাই এই কার্যসিদ্ধির অভিসন্ধি স্পষ্ট: জম্মু ও কাশ্মীরের সামরিক-অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ হতে দেওয়া যাবে না, পর্যটকদের ভ্রমণ বন্ধ হবে, স্থানীয় অর্থনীতিতে লগ্নিতে দাঁড়ি পড়বে। এই সব কিছুরই শিকার হচ্ছেন উত্তরপ্রদেশ বিহার পশ্চিমবঙ্গ-সহ ভারতের নানা প্রান্ত থেকে কাশ্মীরে কাজে আসা সাধারণ দরিদ্র শ্রমিকেরা, মূল্য চোকাচ্ছেন নিজেদের জীবন দিয়ে।
তবে আসল উদ্দেশ্যটি যে জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদ ছড়িয়ে পুরনো দিনের মতো আবারও রাজনৈতিক অস্থিরতা ও আতঙ্ক তৈরি, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলাগুলির দিনক্ষণ দেখলেই পরিষ্কার হবে, জঙ্গিরা যেন নতুন সরকারের শপথটুকু নেওয়ার অপেক্ষাতেই ছিল, নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার দু’দিনের মাথায় শোপিয়ানে হামলায় বিহারের এক পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু দিয়ে তারা তাদের ‘কাজ’ শুরু করেছে। শ্রীনগর-লে সড়ক প্রকল্পে যেখানে জঙ্গি হামলা হয়েছে সেই জায়গাটি খোদ মুখ্যমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকাভুক্ত, বহু বছর যাবৎ সেখানে জঙ্গি হামলার নজির না থাকায় নির্মাণক্ষেত্রে নিরাপত্তা ব্যবস্থা খানিক আলগা ছিল বলে জানা যাচ্ছে। উপরন্তু, এরই মধ্যে এমন বেশ ক’টি জঙ্গি গোষ্ঠীর কথা জানা গিয়েছে যাদের পাক-যোগ প্রমাণিত। এই সবই কি কেন্দ্রের ব্যর্থতা নয়, যেখানে জম্মু ও কাশ্মীরে নজরদারি ও নিরাপত্তার পুরো ব্যবস্থাটিই কেন্দ্রের হাতে? বিদেশমন্ত্রীর সাম্প্রতিক পাকিস্তান সফরও যে উপত্যকায় কোনও ছাপ ফেলতে পারেনি, এতেই স্পষ্ট। মাঝখান থেকে কাজের খোঁজে আসা, খেটে-খাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকদের জীবন ঝরে গেল অকাতরে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy