Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
Editorial News

ভাবমূর্তি কলঙ্কিত হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়

কংগ্রেসের অভিযোগ, নির্বাচন কমিশন ‘নির্ধারিত’ সময়ে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করেনি শনিবার মূলত একটাই কারণে, বিজেপিকে সুবিধা করে দেওয়ার জন্য। নির্বাচন কমিশন তাদের পূর্বনির্ধারিত সময় পিছিয়ে ৩টে নাগাদ দিনক্ষণ ঘোষণা করে।

পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা করল মুখ্য নির্বাচন কমিশন। — ফাইল চিত্র।

পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা করল মুখ্য নির্বাচন কমিশন। — ফাইল চিত্র।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৮ ০০:২৭
Share: Save:

লোকসভা নির্বাচনের আগে প্রাক-ফাইনাল ভোটদামামা বেজে গেল। মধ্যপ্রদেশ, মিজোরাম, ছত্তীসগঢ়, রাজস্থান ও তেলঙ্গানা— এই পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা করলেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ও পি রাওয়াত। কিন্তু তার আগে নির্বাচন কমিশনের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের মর্যাদায় কালিমার ছায়াকে দূর করতে ব্যর্থ হলেন তিনি। নির্বাচন কমিশনের উপরে কি শাসক দল, বিজেপি কি সুপার ইলেকশন কমিশন— দেশের প্রধান বিরোধী দলের তরফে এই খোঁচাটা এড়ানো গেল না। সার্বিক নিরপেক্ষতার সাংবিধানিক কবচ থাকা সত্ত্বেও এই সংশয়ের ন্যূনতম অস্তিত্ব আমাদের দেশের গণতান্ত্রিক পরম্পরার জন্য যে গৌরবজনক নয়, তা না বোঝার মতো অর্বাচীন বোধহয়, আমরা কেউই নই।

কংগ্রেসের অভিযোগ, নির্বাচন কমিশন ‘নির্ধারিত’ সময়ে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করেনি শনিবার মূলত একটাই কারণে, বিজেপিকে সুবিধা করে দেওয়ার জন্য। নির্বাচন কমিশন তাদের পূর্বনির্ধারিত সময় পিছিয়ে ৩টে নাগাদ দিনক্ষণ ঘোষণা করে। কংগ্রেসের বক্তব্য সেই সময় নরেন্দ্র মোদী-সহ মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়ের রাজ্যসরকারগুলোকেও শেষ মুহূর্তে সরকারি কিছু ঘোষণা করার সুযোগ দেওয়ার জন্য, দিন ঘোষণা হয়ে গেলে নির্বাচনী আওতায় যেটা করা সম্ভব নয়। এবং কী আশ্চর্য, ৩টে বাজার কিছুক্ষণ আগে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়া জনসভায় ঘোষণা করে বসলেন কৃষকদের বিনামূল্যে বিদ্যুত্ দেওয়া হবে। যে ঘোষণা গত পাঁচ বছরে করা যায়নি, সেটাই যদি একেবারে শেষ মুহূর্তে ‘কিছুক্ষণ ছাড় পাওয়া’র সময়ে ঘোষিত হয়, তা হলে একটু সন্দেহ হয় বই কি, কংগ্রেস ঠিক এখানেই আরও একবার তাদের অভিযোগের তর্জনী তুলেছে।

এ কথা ঠিক নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে এই অভিযোগের সত্যাসত্য বিচারসাপেক্ষ। এবং কংগ্রেস অভিযোগ করছে মানে এই নয় যে সত্যের কষ্ঠিপাথরে তা মাজাঘষা করেই এসেছে। এবং এও সত্যি যে নির্বাচন কমিশন দিনক্ষণ ঘোষণার সময়ের পরিবর্তনের একটা ব্যাখা দিয়েছে। সে ব্যাখার যুক্তিও বিচারের অতীত তা নয়। তা হলেও একটা কোথাও ক্ষতি হয়ে যায়। ভাবমূর্তিতে কোথাও দাগ পড়লে তা যে বাঞ্ছনীয় হয় না সেটা বলাই বাহুল্য। পুলিশ-প্রশাসন থেকে সরকারি নানা সংস্থা তো বটেই এমনকি সাংবিধানিক অনেক প্রতিষ্ঠানকেও যে শাসক দল নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে চায় তার ভুরি ভুরি উদাহরণ এ দেশে রয়েছে। এবং রয়েছে কেন্দ্র-রাজ্য নির্বিশেষে। কলঙ্ক যদি লাগে তবে তা মোচনেরও দায় উভয়েরই, যার গায়ে লাগছে সে তো বটেই, যে লাগাচ্ছে তারও। আমাদের এ দেশ কিন্তু বারংবার এই ক্ষেত্রগুলোতে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। উঠে দাঁড়িয়েছে অন্ধকারের গুহা-অভ্যন্তর থেকে। এটা হয়েছে বলেই কিনারায় দাঁড়িয়ে পড়া গণতন্ত্র পুনর্জীবিত হয়েছে আবার। অব্যাহত থেকেছে গণতন্ত্রের চর্চা, কিছু অভিযোগ নিয়েই না হয়।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

আরও পড়ুন: বর্ষশেষে পরীক্ষায় মোদী-শাহ, ৫ রাজ্যের ভোট ঘোষণা

আরও পড়ুন: ঘোষণার সময় পিছিয়ে গুরুতর প্রশ্নে নির্বাচন কমিশন

আমরা আশা রাখি এখনও তার অন্যথা হওয়ার কোনও কারণ ঘটেনি।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE