Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Hunger Strike of Junior Doctors

অবিলম্বে জট খুলুন

গণতন্ত্র দাবি করে যে, আলোচনার মাধ্যমেই এই জটিলতা দূর করে পরিস্থিতিকে স্বাভাবিকতার পথে ফেরানোর চেষ্টা করতে হবে। কিন্তু সার্থক আলোচনার জন্য যে পরিবেশ দরকার, তা ক্রমশই নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।

শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০২৪ ০৬:২১
Share: Save:

কথিত আছে, জট যখন এমন ভাবে পাকিয়ে যায় যে তাকে খোলা অসম্ভব হয়ে ওঠে, তখন সেই জট কাটতে হয়। প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে আলেকজ়ান্ডার নাকি ‘গর্ডিয়ান নট’ খোলার বদলে কেটে দিয়ে সমস্যার সমাধান করেছিলেন। আর জি কর হাসপাতালের ভয়াবহ ঘটনা উপলক্ষে চিকিৎসকদের আন্দোলন, নাগরিক সমাজের প্রতিবাদী কর্মকাণ্ড এবং রাজ্য প্রশাসনের গয়ংগচ্ছ আচরণের ত্র্যহস্পর্শে যে জটের সৃষ্টি হয়েছে, তা কেটে ফেলা সম্ভব নয়, তেমন চেষ্টা করতে গেলে পরিণাম আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে। গণতন্ত্র দাবি করে যে, আলোচনার মাধ্যমেই এই জটিলতা দূর করে পরিস্থিতিকে স্বাভাবিকতার পথে ফেরানোর চেষ্টা করতে হবে। কিন্তু সার্থক আলোচনার জন্য যে পরিবেশ দরকার, তা ক্রমশই নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। রাজ্য প্রশাসন এবং আন্দোলনকারীদের সম্পর্ক উত্তরোত্তর জটিলতর হয়ে উঠছে। শারদোৎসব শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মুখ্যসচিবের ডাকা বৈঠকের পর দুই তরফের প্রতিক্রিয়া শুনে বোঝা গেল, পারস্পরিক আস্থার বিপুল ঘাটতিই এখন কঠোর বাস্তব।

অথচ অবিলম্বে, সমস্ত বাধা দূরে সরিয়ে রেখে এই ভয়ঙ্কর এবং অভূতপূর্ব সঙ্কটের অবসান ঘটাতে তৎপর হওয়াই দুই তরফের, তথা সংশ্লিষ্ট সমস্ত শিবিরের, প্রথম এবং প্রধান কর্তব্য। প্রথমত, জুনিয়র চিকিৎসকদের আমরণ অনশনের প্রক্রিয়াটি ইতিমধ্যেই গভীর আশঙ্কা ও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কালক্ষেপ না করে এই পর্বের অবসান ঘটানো দরকার। দ্বিতীয়ত, সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে অব্যবস্থা কোনও যুক্তিতেই মেনে নেওয়া চলে না, বিশেষত যে রাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ সেই ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল। বস্তুত, সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থার ঘাটতি, অনাচার ও দুর্নীতি রোধের দাবিতে চিকিৎসকরা আন্দোলন করছেন, কিন্তু সেই আন্দোলনের পরিণামে স্বাস্থ্য পরিষেবার পরিকাঠামোই বেহাল হয়ে পড়ছে— এই স্ববিরোধ কি তাঁরা নিজেরা দেখতে পাচ্ছেন, দেখতে চাইছেন? তাঁদের প্রতি নাগরিক সমাজের সমর্থন মূল্যবান, এক অর্থে যুগান্তকারী, কিন্তু সেই সমর্থন তাঁদের নিজেদের কর্তব্য এবং দায়িত্বের বোধকে আচ্ছন্ন করছে না তো? আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা বারংবার বলছেন, তাঁরা স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে রাজ্য সরকারের ‘অস্পষ্ট’ আশ্বাসে আস্থা রাখতে পারছেন না। ক্রমশ সিবিআইয়ের তদন্তের উপরেও তাঁদের অনাস্থা প্রবল এবং প্রকট হচ্ছে। এই অনাস্থা অবশ্যই অহেতুক নয়। কিন্তু তদন্ত এবং সংস্কার, দুই-ই নিজস্ব প্রক্রিয়া অনুসরণ করে অগ্রসর হবে। প্রক্রিয়াগুলিকে যথেষ্ট গতিশীল ও যথাযথ করে তোলা অত্যন্ত জরুরি, সে জন্য প্রশাসনের উপর চাপ রাখা অত্যাবশ্যক। কিন্তু প্রক্রিয়াকেই কার্যত অবান্তর বলে উড়িয়ে দেওয়ার প্রবণতা কেবল আশঙ্কাজনকই নয়, বিপজ্জনকও বটে।

ঠিক এখানেই রাজ্য প্রশাসনের দায় ও দায়িত্ব। আর জি করের হত্যাকাণ্ডের পরে, বিশেষত প্রথম পর্বে, তাঁদের আচরণ নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন উঠেছে। সর্বোচ্চ আদালত একাধিক বার এ ব্যাপারে কার্যত কঠোর সমালোচনা করেছে। অন্য দিকে, জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনের মোকাবিলায় তাঁদের কথায় ও কাজে দেখা গিয়েছে বিচিত্র অসঙ্গতি। কখনও তাঁরা সহৃদয়তার পরাকাষ্ঠা সেজেছেন, কখনও সম্পূর্ণ উদাসীন থেকেছেন। গত দশ দিনে, আমরণ অনশনের পর্বটিতে, যখন কেবল মানবিকতার কারণেও শাসকদের সমস্যা নিরসনে সর্বতোভাবে সক্রিয় হওয়া উচিত ছিল, ঠিক তখনই দেখা গেল তাঁরা উদাসীন। যে মুখ্যমন্ত্রী সমস্ত উপলক্ষে সর্বত্র কারণে অকারণে নিজে ‘মুশকিল আসান’-এর ভূমিকায় এগিয়ে আসেন, শারদোৎসবের দিনগুলিতে তিনি কার্যত অদৃশ্য হয়ে পড়লেন! প্রশাসনের সর্বাধিনায়িকা হিসাবে তাঁকেই শেষ অবধি এই সঙ্কটের দায় নিতে হবে। বার্ষিক কার্নিভালের দৃশ্য রচনার থেকে এই ভয়ঙ্কর জট খোলার কাজটি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy