E-Paper

প্রতিশ্রুতির পর?

প্রয়োজনক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী রাজনীতির ন্যূনতা সেই আলো আবার নিবিয়েও দেয়।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:৩৫
Share
Save

গত রবিবার, আরও এক বার, ব্রিগেড ভরে উঠল লালরঙা সমাবেশে। ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী)-র পশ্চিমবঙ্গীয় নেতৃত্বের কাছে সে দিনের ব্রিগেড সমাবেশ নিশ্চয়ই বড় সুসংবাদ। তবে, কেবল তাঁদের কাছে নয়— বৈশাখের দাবদাহে কৃষক, শ্রমিক, বস্তি সংগঠনের মানুষ এসে যে ভাবে সে দিন ভিড় জমালেন, নেতানেত্রীদের লড়াইয়ের স্লোগানে সমর্থন জোগালেন, তাতে নিঃসন্দেহে একটি বৃহত্তর সুসংবাদও তৈরি হল— পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যটির জন্য। ধর্ম এবং জাতের জিগিরে অস্থির অশান্ত সঙ্কটপঙ্কিল রাজনীতির মধ্যে আবার ভেসে উঠল সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন যাপন, রোজগার বা সংস্থান নামক বাস্তবের কথা। স্পষ্টতই স্বস্তিদায়ক এই ঘটনা। পশ্চিমবঙ্গ আপাতত এক মহাসঙ্কটে ভাসমান। প্রতি দিন এখানে সামাজিক ঐক্য ও স্থিতি বিপন্ন থেকে বিপন্নতর হচ্ছে— রাজনীতি ও ধর্মের যুগল মেরুকরণে। গ্রামের কৃষিজীবী সমাজ আর শহরের শ্রমজীবী সমাজের সমস্যা নিয়ে কথা বলার প্রবণতাটি ক্রমশই ক্ষীণ হতে হতে অন্তর্হিত হয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আলাদা রাজনৈতিক উচ্চারণের জন্যই দুই গর্জনশীল মেরুর বাইরে একটি তৃতীয় পরিসরের গুরুত্ব সীমাহীন।

রাজনীতির পাঁকে আকণ্ঠ নিমজ্জিত থেকে নেতানেত্রীরা ভুলে যান, পশ্চিমবঙ্গের ভবিষ্যৎ বস্তুটি কিন্তু কেবল ইভিএম যন্ত্রের মধ্যেই অস্তিত্বশীল নয়, তার বাইরেও সেই ‘ভবিষ্যৎ’ নির্মিত হয়ে চলে, প্রত্যহ, দৃষ্টির অন্তরালে। সেই ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে, এক সুস্থ রাজনৈতিক কার্যক্রম সমাজে প্রসারিত হোক, গভীরে ছড়াক: শুভবোধসম্পন্ন নাগরিক এই আশা করেন। তবে সেই আশা মেটানোর কাজটি ব্রিগেডের লোকসমাগম দিয়ে সম্পন্ন হবে না, তার জন্য ভিন্ন পদক্ষেপ, ভিন্ন পরিকল্পনা চাই। ব্রিগেডের এই ভিড় অচেনা নয়। গত বিধানসভা নির্বাচনের আগেও সিপিএম-এর ডাকে ব্রিগেডে বিরাট জনসমাগম দেখা গিয়েছে। পরবর্তী ঘটনাবলিতে বোঝা গিয়েছে যে, ভিড়ের পরিমাপ মোটেই রাজনীতির নির্ভরযোগ্য দ্যোতক নয়। ফলে বাম নেতাদের আত্মতুষ্টির কোনও কারণ থাকতে পারে না। ভিড় নিশ্চয় বলে দেয় মানুষের আগ্রহের কথা। তাই, ভিড় হয় কিন্তু ভোট মেলে না: এই ধাঁধার সামনে দাঁড়িয়ে সিপিএম নেতারা ব্যক্তিকে, দলকে, পদ্ধতিকে, তন্ত্রকে লাগাতার দোষারোপ না করে বরং আসল কথাটা তলিয়ে ভাবতে পারেন। ভাবতে পারেন, সভাসমাবেশে মানুষ তাঁদের যে কথাগুলি শোনেন, সভা ফুরিয়ে গেলে তাঁরা সেই কথাগুলি অনুযায়ী যথেষ্ট কাজ করেন কি না। সরব সনাদ প্রতিশ্রুতি নিশ্চয়ই আশার আলো জ্বালায়। কিন্তু প্রয়োজনক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী রাজনীতির ন্যূনতা সেই আলো আবার নিবিয়েও দেয়।

সে দিনের সমাবেশে মূল দলের বাইরের কর্মপরিসরভিত্তিক সংগঠনগুলিকে যে বহুলাংশে ব্রিগেডমুখী করা গিয়েছিল, এর জন্য নেতারা নিশ্চয় প্রশংসার্হ। কৃষি শ্রম স্বাস্থ্য পুষ্টি শিক্ষা, সকল ক্ষেত্রেই আজ রাজ্যে স্থিতাবস্থাবিরোধী আবেগ যথেষ্ট, অব্যবস্থা এবং অন্যায় ব্যবস্থা গভীরচারী। তবে মূল কাজ তো সংগঠনগুলিকে ডেকে আনা নয়, বিরোধী নেতৃত্বের যে কার্যক্রম প্রত্যাশিত, জরুরি, এই সংগঠনগুলিকে সঙ্গে নিয়ে তাতে মনোনিবেশ করা। সে কাজে কি তাঁরা এগোতে পারছেন? না কি, কেবল বিক্ষিপ্ত ঘটনাভিত্তিক মিছিল বা সমাবেশকেই রাজনীতির একমাত্র অভিজ্ঞান বলে ভাবছেন? প্রশ্নচিহ্নগুলি তৈরি হয় এ জন্যই যে, অন্যান্য দলের মতোই সিপিএম নেতারাও মানুষকে প্রথমত ও শেষত ভোটার হিসাবেই চেনেন, তার অতিরিক্ত কিছু নয়। এবং ভাবেন যে মানুষ ‘ভুল বুঝেছেন’, ভাবতে পারেন না যে তাঁরা নিজেরা কোনও ‘ভুল করেছেন’। ভোট বাড়ুক না বাড়ুক, এই সব ব্যক্তিগত, দলগত ও নীতিগত উপলব্ধি ও অবস্থানের পরিবর্তন ছাড়া সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রতিনিধিত্ব অর্জন করা যাবে না। ব্রিগেডের ময়দান থেকেই সোজাসুজি মানবজমিনের হদিস মিলবে না।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

CPIM

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।