ভ্লাদিমির পুতিন। —ফাইল চিত্র।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ৬৬৭ দিন অতিক্রান্ত। বিশেষজ্ঞদের অনুমান, ইউক্রেনের পক্ষে নতুন বছর তেমন আশাব্যঞ্জক হবে না— বিশেষত, গত জুনে তাদের প্রত্যাঘাতের কৌশলটি বিফল হওয়ায়। ২০২২-এর ফেব্রুয়ারিতে রুশ আগ্রাসনের ধাক্কা, গোড়ার বিপত্তি এবং তৎপরবর্তী কয়েকটি সামরিক জয় ইউক্রেনবাসীর মনে কিছু আশা জুগিয়েছিল যুদ্ধ পরিণতি নিয়ে। জল্পনা ছিল, পশ্চিমি সহায়তায় রাশিয়াকে শেষ পর্যন্ত হয়তো আপসের পথে আনা সম্ভব হবে। কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি। বরং প্রত্যাঘাতের পথ নিয়ে শেষ পর্যন্ত সামরিক এবং আর্থিক— দু’ক্ষেত্রেই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যার জেরে শুধু যুদ্ধক্ষেত্রেই নয়, এক অনিশ্চয়তার আবহ সৃষ্টি হয়েছে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি তথা মিত্রশক্তির সঙ্গে সম্পর্কেও। এত দিন আমেরিকা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইউক্রেনের পাশে থেকেছে। কিন্তু যুদ্ধপরিস্থিতির কারণে সহায়তার দুই ক্ষেত্রেই মিত্রশক্তির বিলম্বিত সিদ্ধান্তের জেরে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ায় প্রচেষ্টা ব্যাহত হতে পারে তাদের। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বাইডেন-এর ইজ়রায়েল এবং তাইওয়ানকে সহায়তা-সহ ইউক্রেনকে আরও অর্থসাহায্য করার আবেদনকে কংগ্রেসে রিপাবলিকানরা এই শর্তে আটকে দিয়েছেন যে, দেশের অভিবাসন এবং সীমান্ত সুরক্ষার নীতিগুলি পাল্টানো না হলে তাঁরা এই সহায়তায় সমর্থন দেবেন না। তা ছাড়া, আগামী বছর সে দেশে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনও। অন্য দিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়নেরও একাধিক বছরের আর্থিক সাহায্যের সিদ্ধান্ত জানুয়ারি পর্যন্ত বিলম্বিত হয়েছে হাঙ্গেরির বিরোধিতার কারণে। কাজেই প্রশ্ন, যুদ্ধ যত দিন চলবে, তত দিন প্রেসিডেন্ট জ়েলেনস্কি মিত্রশক্তির পূর্ণ মদত পাবেন কি?
প্রেসিডেন্ট পুতিনের পক্ষে পরিস্থিতি সুবিধাজনক করে দিয়েছে ইজ়রায়েল-হামাসের যুদ্ধ, যা গোটা বিশ্বের নজর ঘুরিয়ে দিয়েছে পশ্চিম এশিয়ার দিকে। প্যালেস্টাইনের মানবিক সঙ্কটের প্রভাব যে পড়বে ইউক্রেন যুদ্ধের উপরে, বিশেষত পশ্চিমি সহায়তার ক্ষেত্রে, তা বিলক্ষণ জানেন রুশ প্রেসিডেন্ট। এমতাবস্থায় চাপ বাড়বে ইউক্রেনের উপরেই। দু’তরফই এ-যাবৎ যুদ্ধবিরতির পক্ষে সায় দিয়ে এসেছে— কিন্তু নিজেদের শর্তানুসারে, যা কারও কাছেই গ্রহণযোগ্য হয়নি। ইউক্রেন জানে এই অবস্থায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করলে, রাশিয়া তা শক্তি সংগ্রহের সুযোগ হিসাবে ব্যবহার করবে। ফলে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া ছাড়া তাদের গত্যন্তর নেই। পরিস্থিতি যা, তাতে রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ বর্তমানে এক অচলাবস্থার পর্বে পৌঁছেছে। আগামী বছরও কোনও তরফই যদি উল্লেখযোগ্য কোনও সাফল্য অর্জন করতে না পারে, তবে এই যুদ্ধ নির্ধারিত হবে যুদ্ধক্ষেত্র-বহির্ভূত কিছু বিষয় দিয়ে। সে ক্ষেত্রে গুরুত্ব বাড়বে কৃষ্ণ সাগর অঞ্চলের, যেখানে রাশিয়া আক্রমণ করছে ইউক্রেনের মালবাহী জাহাজগুলিকে। তার প্রত্যুত্তরে ইউক্রেন আঘাত হানছে রুশ নৌবাহিনীর উপরে। রাশিয়ার রণকৌশল সহজ— যুদ্ধ চালিয়ে যাও, যত ক্ষণ না ইউক্রেন তার সমর্থন হারায়। যদিও এতে রাশিয়ারও রাজনৈতিক ক্ষয় হওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল। অন্য দিকে, পশ্চিম তাদের সমর্থন বজায় রাখতেই আগ্রহী। এক দিকে রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ, অন্য দিকে প্যালেস্টাইন সঙ্কট— রক্তক্ষয় চলবে বলেই আশঙ্কা। বিশ শতকের দ্বিতীয় দশকে ফরাসি প্রধানমন্ত্রী জর্জ ক্লেমোঁসো বলেছিলেন, শান্তি স্থাপন করার তুলনায় যুদ্ধ করা অনেক সহজ। কথাটি মর্মান্তিক রকমের সত্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy