লঙ্কা ও রাবণের মধ্যে যে অবধারিত সম্পর্কটি প্রবাদবাক্যে প্রচলিত, তারই প্রমাণ পাওয়া গেল আমেরিকায়। ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিগত শাসনকাল পরিকীর্ণ ছিল ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’দের দেশে ফেরত পাঠানোর অতিসক্রিয়তায়, তাঁর আমল কার্যত হয়ে দাঁড়িয়েছিল কঠোরতম অনুপ্রবেশ নীতির সমশব্দ: মেক্সিকো সীমান্তে পাঁচিল তোলা, আমেরিকার ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই বা আইস)-এর চূড়ান্ত কড়াকড়ি ও হেনস্থা, এই সবই আমেরিকাবাসী দেখেছেন চোখের সামনে। কিন্তু অতি সম্প্রতি জানা গেল আরও বেশি অবাক করা তথ্য— সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গত এক বছরে আমেরিকা যত সংখ্যক অনুপ্রবেশকারী ফেরত পাঠিয়েছে তা গত এক দশকে সর্বোচ্চ, এমনকি ট্রাম্প জমানার যে কোনও বছরের চেয়েও বেশি! এ নিশ্চয়ই বলে দিতে হবে না যে, এ ঘটনা ঘটেছে জো বাইডেনের শাসনে।
অনুপ্রবেশ নীতি নিয়ে যাঁর মনোভাব ও নীতি ভাবা হচ্ছিল সহানুভূতিশীল, তাঁর আমলে শুধু একটি বছরের হিসাবই বুঝিয়ে দিচ্ছে, বাস্তবচিত্র ভিন্ন। তথ্য ভুল বলে না, আর এ তো খোদ সরকারি তথ্য। এই পরিস্থিতিতে আমেরিকার জনমানসে, বিশেষত ডেমোক্র্যাট-মহলে বিভ্রান্তি ও স্বপ্নভঙ্গের যুগপৎ অনুভূতি আশ্চর্যের নয়। তার উপরে দল নির্বাচনে পরাজিত, নতুন বছরে ফের বিরোধী আসনে বসতে হবে। ভাবী প্রেসিডেন্ট যেখানে ভোটে জেতার পরই ঘোষণা করে দিয়েছেন যে ২০২৫ সালের মধ্যেই বিরাট সংখ্যক অনুপ্রবেশকারীদের তিনি আমেরিকা থেকে ‘বিতাড়িত করবেন’, সেই পরিস্থিতিতে বিরোধী অবস্থান থেকে এই কট্টর নীতির বিরুদ্ধতা ডেমোক্র্যাটদের থেকে প্রত্যাশিত ছিল। নতুন বছরে নতুন সরকারের অনুপ্রবেশ নীতির ‘অমানবিকতা’ হয়ে উঠতে পারত রাজনৈতিক লড়াইয়ের অস্ত্র। কিন্তু সব কিছুতেই জল ঢেলে দিল এই সাম্প্রতিক তথ্য— অদূর ভবিষ্যতে ডেমোক্র্যাটরা শোরগোল তুললেই ট্রাম্প সরকার ও তার সমর্থকেরা চোখের সামনে তুলে ধরবেন বাইডেন শাসনের শুধু একটি বছরের সত্য: ১৯২টি দেশের ২,৭০,০০০ অনুপ্রবেশকারীকে ফেরত পাঠিয়েছে ‘আইস’। বাইডেন সরকার গোড়ায় নরম ছিল, পরে পরিস্থিতির চাপে বাধ্য হয়েছে কঠোর হতে— এই যুক্তি তখন ধোপে টিকবে কি?
রাজনীতির বিশ্লেষকরা বলছেন, সহানুভূতির নীতি নিশ্চয়ই ভাল, কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তার প্রয়োগ এক ভিন্ন চ্যালেঞ্জ। বাইডেন সরকারের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের অভিযোগ ছিল, এই সরকারের শাসনে বেআইনি অনুপ্রবেশ চরমে উঠেছে, ভবিষ্যতে তার মূল্য দিতে হবে। এখন কথা উঠছে, বাইডেন শাসনের শেষ বছরটিতে বিপুল ‘অনুপ্রবেশকারী-বিতাড়ন’ই কি সেই চরম মূল্য? যাঁদের ফেরত পাঠানো হল তাঁদের ছাড়াও, এই মুহূর্তে আমেরিকার মাটিতে বৈধ মর্যাদা বা স্থায়ী সুরক্ষাহীন অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা হিসাবমতে প্রায় দেড় কোটির কাছাকাছি। ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর এঁদের কী হবে তা নিয়ে যথেষ্ট চিন্তার কারণ থাকছে। তবে ট্রাম্পের কাজ কেবল নীতির দিক থেকে নয়, পরিকাঠামোর দিক থেকেও সহজ হবে: বাইডেন সরকার শেষ বছরে দেশ জুড়ে অসরকারি ‘ইমিগ্রেশন জেল’ ব্যবস্থার হাতও শক্ত করেছে বলে জানা যাচ্ছে। রক্ষক ও ভক্ষক, মুখ ও মুখোশ গুলিয়ে যাওয়ার এই দিনকাল— নতুন বছরে বহু আমেরিকাবাসীর কাছে দুঃস্বপ্ন বয়ে আনবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy