—প্রতীকী ছবি।
চলতি রবি মরসুমে ধান, গম ও ডাল, তিনটি প্রধান খাদ্যশস্যেরই জমি কমেছে। এর জেরে উৎপাদন কমবে, তাতে বাড়তে পারে খাদ্যশস্যের দাম। সংবাদটি উদ্বেগজনক, কারণ ভারতে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি কেবল সাধারণ ক্রেতার নয়, কেন্দ্রীয় সরকারেরও মাথাব্যথা বাড়াচ্ছে। ২০১৯ সালের নির্বাচনের আগের মাসগুলিতে খাবারের দাম যে হারে বেড়েছিল, এখন তার চাইতে দামে বৃদ্ধির হার অনেকটাই চড়া। ফলে ২০২৪ সালের নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদী সরকারকে বিপাকে পড়তে হতে পারে। সম্ভবত এই কারণেই— এবং নির্বাচনের আগে জনমোহিনী প্রতিশ্রুতি দেওয়ার ধারা বজায় রেখে— মোদী সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন যে, আগামী পাঁচ বছর রেশনে বিনামূল্যে চাল-গম দেওয়া হবে। পাশাপাশি, বাজারে যাতে চাল-গমের দাম বাড়তে না পারে, তার জন্য নানা ব্যবস্থা করেছে সরকার। দাম চড়ার আভাস পেয়ে এ বছর বাসমতী ভিন্ন অন্য চালের রফতানি নিষিদ্ধ করেছে, সরকারি গুদাম থেকে চাল বিক্রি করেছে বাজারে। এ সবের ফলে যথেষ্ট জোগান বজায় থাকবে, দামে নিয়ন্ত্রণ থাকবে, এমনই আশা করছে সরকার।
কিন্তু খাদ্যের দাম বাড়ার হারে এ সব ব্যবস্থার কতটুকু প্রভাব পড়েছে, সে প্রশ্ন রয়েই যায়। গত অক্টোবরে প্রকাশিত সরকারি পরিসংখ্যানে (কনজ়িউমার প্রাইস ইন্ডেক্স) দেখা গিয়েছে, সামগ্রিক ভাবে খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধির হার কমলেও খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধির হার এখনও চড়া— সেপ্টেম্বরে তা ৬.৫৬ শতাংশ থাকলেও অক্টোবরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬.৬১ শতাংশ। এর একটা কারণ আনাজের দাম— পেঁয়াজ বা টোম্যাটোর দাম মাঝেমাঝেই সাধ্যের বাইরে চলে গিয়েছে। তবে আরও বেশি মাথাব্যথার কারণ খাদ্যশস্য এবং ডালের দাম, কারণ এগুলি এক বার উঠলে সহজে নামতে চায় না। খাদ্যশস্যে মূল্যস্ফীতির হার এখন দশ শতাংশেরও বেশি, ডালে প্রায় উনিশ শতাংশ, যা সাম্প্রতিক কালে সর্বোচ্চ। অথচ, ভাত-ডাল বা রুটি-ডালের উপর ভারতীয়দের নির্ভরতা সব্জি, বা অন্যান্য খাবারের থেকে বেশি। অতএব খুচরো পণ্যে মূল্যবৃদ্ধি রুখতে হলে খাদ্যশস্যের দামে লাগাম পরাতে হবে। সে কাজটা বড়ই দুঃসাধ্য। দুশ্চিন্তা আরও বাড়িয়েছে ইউক্রেনের যুদ্ধ, যার জেরে আফ্রিকা, ইউরোপ-সহ বহু দেশে গম মিলছে না।
ভারতের চাষি বহু যুগ ধরে বহু ক্ষতি সহ্য করে, অপরিমিত ঝুঁকি নিয়েও চাল-গম ফলিয়েছেন। এখন কেন তাঁদের অনেকে সরে যাচ্ছেন খাদ্যশস্যের চাষ থেকে? গমের বীজ বপনের এলাকা গত বারের ৯১.০২ লক্ষ হেক্টর থেকে কমে ৮৬ লক্ষ হেক্টর হয়েছে। ডালে ৬৯.৩৭ লক্ষ থেকে কমে ৬৫.১৬ লক্ষ হেক্টর হয়েছে। এর প্রধান কারণ, চাষ অলাভজনক হয়ে উঠছে। যে মৌলিক কারণগুলি তার জন্য দায়ী, তার নিরসনের কাজটি চটজলদি করা প্রায় অসম্ভব। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বর্ষা আসছে দেরিতে, দীর্ঘ খরার পরে প্রবল বর্ষণে ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। একই সঙ্গে, যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে ভূগর্ভের জল দ্রুত কমে আসছে। অপরিমিত রাসায়নিক সার ব্যবহারে কমছে জমির উর্বরতা। একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, পঞ্জাবের জমিতে কার্বনের মাত্রা কমে গিয়েছে ১৫-২০ শতাংশ। বিশ্ব ব্যাঙ্কের তথ্য অনুসারে, ভারত প্রতি হেক্টরে যত সার ব্যবহার করে, তা বিশ্বের গড় পরিমাণের চাইতে দ্বিগুণেরও বেশি। এই পরিস্থিতিতে সরকারি অনুদান, ভর্তুকি বা সুলভ ঋণই যে যথেষ্ট নয়, তার ইঙ্গিত মিলছে। বিপুল খরচ এবং অনিশ্চিত লাভের মুখে দাঁড়িয়ে চাষি যাতে কৃষিকাজে আগ্রহ না হারান, যাতে বিজ্ঞানসম্মত এবং পরিবেশ-বান্ধব উপায়ে চাষ করে নিরাপদ ফসল ফলাতে পারেন, তার সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে সরকারকেই। চাষি একাই অলাভজনক চাষের ঝুঁকি বয়ে এসেছেন দীর্ঘ দিন। ফসলশূন্য জমির সামনে দাঁড়িয়ে তাঁর বিপন্নতার তীব্রতা অনুভব করছে গোটা দেশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy