—ফাইল চিত্র।
২০৪৭ সালে ‘বিকশিত ভারত’ তৈরির লক্ষ্য ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার, কিন্তু সেই ‘বিকাশ’ বা উন্নয়ন কী করে আসবে, অন্তর্বর্তী বাজেট থেকে তার কোনও ব্যাখ্যা মিলল না। স্বাস্থ্য, পুষ্টি, শিক্ষার মতো মৌলিক চাহিদার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে বরাদ্দ কমেছে, অথবা যথেষ্ট বাড়েনি। তার ফলে স্বাস্থ্য-শিক্ষার বেশ কিছু প্রকল্পের অধীনে উপযুক্ত নাগরিকদের নিয়ে আসার কাজ যেমন অসম্পূর্ণ থেকে যাবে, তেমনই বিনিয়োগ হবে না উৎকর্ষের পরিকাঠামোতে। এমনকি, স্বাস্থ্য বা শিক্ষায় যে লক্ষ্যগুলি কেন্দ্র গত কয়েক বছরে বহু আড়ম্বরে ঘোষণা করেছিল, তার মধ্যে কয়েকটি গুরুত্ব পায়নি। যেমন, প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য সুরক্ষা যোজনায় মেডিক্যাল শিক্ষা ও গবেষণার জন্য মেডিক্যাল কলেজগুলির পরিকাঠামোর উন্নয়ন করার, এবং দেশের যে সব এলাকায় চিকিৎসা পরিকাঠামো দুর্বল, সেখানে ‘এমস’-এর মতো হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছিল। নরেন্দ্র মোদীর আমলে এমস-এর ধাঁচে কিছু মেডিক্যাল কলেজ তৈরি হলেও, তার কোনওটিরই পূর্ণ কার্যক্ষমতা তৈরি হয়নি। তা সত্ত্বেও এই প্রকল্পে বরাদ্দ কমেছে পাঁচশো কোটি টাকা। একই ভাবে, ২০২১ সালে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মুখে কেন্দ্র ব্লক ও জেলা স্তরে সংক্রামক অসুখ নির্ণয় ও চিকিৎসার পরিকাঠামো বাড়াতে পাঁচ বছরে চৌষট্টি হাজার কোটি টাকা খরচের লক্ষ্য নিয়েছিল। এ বছরের বরাদ্দ গত বছরের তুলনায় কমেছে। সামগ্রিক ভাবে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের বরাদ্দ দেড় হাজার কোটি টাকার মতো বেড়েছে, তবে এক বছরের মূল্যস্ফীতিকে ধরে হিসাব কষলে দেখা যাচ্ছে, হাতে রইল পেনসিল। একই চিত্র পুষ্টিতেও— ‘পোষণ ২’ এবং ‘সক্ষম অঙ্গনওয়াড়ি’ প্রকল্পে হাজার কোটি টাকার মতো বরাদ্দ বাড়লেও মূল্যস্ফীতিতে সে লাভ ক্ষয়ে গিয়েছে।
অবশ্য বড়সড় অঙ্ক ঘোষণা করলেও আশ্বস্ত হওয়া চলে, এমন নয়। বিরোধীরা অভিযোগ তুলেছেন, গত বাজেটে শিক্ষা, স্বাস্থ্যের মতো ক্ষেত্রে যে পরিমাণ টাকা খরচের কথা বলা হয়েছিল, তার অল্পই খরচ হয়েছে। সংশোধিত বাজেটে সেই খরচের অঙ্কটিকে সামনে রেখে নতুন বরাদ্দের অঙ্ক কমানো হচ্ছে। প্রশ্ন হল, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জনজাতি কল্যাণের মতো ক্ষেত্রে ব্যয়সঙ্কোচের অর্থ মানবসম্পদের হানি। সেই ঘাটতি কী করে পূরণ হবে? এ প্রশ্ন সংসদে ওঠাই প্রত্যাশিত। কিন্তু ভারতের রাজনীতির যা চরিত্র, তাতে সে আশা বহু আগেই মিলিয়ে গিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার নিজের কৃতিত্ব ও বদান্যতা নিয়ে বড়াই করতে ব্যবহার করছে সংসদকে। ফলে দেশবাসীর হাতে থেকে যায় কেবল কিছু প্রশ্ন। যেমন, ডিম্বাশয়ের ক্যানসার প্রতিরোধে ৯-১৪ বছরের মেয়েদের ‘উৎসাহ দেবে’ সরকার, বললেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। কিন্তু ওই টিকা নিয়মিত টিকাকরণ প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত হবে কি? সেই বাড়তি খরচ সরকার বহন করবে কি না, জানা যায়নি।
আন্তর্জাতিক ক্ষুধা সূচকে ভারতের স্থান ক্রমাগত পিছানো সত্ত্বেও কেন শিশুপুষ্টি প্রকল্পে এমন কার্পণ্য, সে প্রশ্নটাও থেকে যায়। সে ভাবেই, যে সময়ে ভারতের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা তিন থেকে চার বছর স্নাতক পাঠক্রমের দিকে এগোচ্ছে, কৃত্রিম মেধার মোকাবিলা করছে, সে সময়ে উচ্চশিক্ষা খাতে ন’হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ কমানো হল কেন, ব্যাখ্যা মেলে না। বিশেষ ভাবে ছাঁটা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের বরাদ্দ। আশঙ্কা, এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি টাকার বিনিময়ে পাঠক্রম চালু করবে, যা ছাত্রদের উপর চাপ বাড়াবে। বরাদ্দ কমেছে আইআইটি, আইআইএম-এর মতো শীর্ষ স্থানীয় প্রতিষ্ঠানে। কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলির বরাদ্দ কিছু বেড়েছে, কিন্তু উচ্চশিক্ষার প্রসারে সেগুলির ভূমিকা কতটুকু? অর্থমন্ত্রী বর্তমান যুবা প্রজন্মের (অমৃত পীড়ি) প্রতি বিনিয়োগের গুরুত্বের কথা ঘোষণা করেছেন বাজেট-বক্তৃতায়, কিন্তু তাঁর বাজেট ‘অমৃত’ প্রজন্মের অধিকাংশকে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির দর্শক করে রাখল কেবল, অংশীদার করল না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy