Advertisement
E-Paper

যস্মিন্ দেশে

দুর্ঘটনার পিছনে প্রাথমিক অভিযোগ ছিল ইভটিজ়িং-এর। তা সত্ত্বেও ঘটনার অব্যবহিত পরেই পুলিশ সূত্রে জানা গেল, ইভটিজ়িং নয়, বরং দুই গাড়ির মধ্যে রেষারেষির কারণেই এমন দুর্ঘটনা।

শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৫:২৫
Share
Save

কোনও দুর্ঘটনায় কারও মৃত্যু ঘটলে, অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে সমস্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখে যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে সত্য প্রকাশ্যে আনা এবং ভবিষ্যৎ-দুর্ঘটনা রোধে আগাম ব্যবস্থা করাই দায়িত্বশীল প্রশাসনের কর্তব্য। কিন্তু বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের ব্যাপারই আলাদা। এ রাজ্য সে লাইনে হাঁটে না। দুর্ঘটনা ঘটলে— বিশেষত সেই ঘটনায় নিহত বা আহত মানুষটি মহিলা হলে— যে কোনও প্রকারে দুর্ঘটনাগ্রস্তের উপরে দায় চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টাই এখানে দস্তুর, দুর্ঘটনায় গ্রস্ত হওয়ার আগে যে কত ‘বে-চাল’ ছিল, তদন্তের প্রিয় উপজীব্য সেটিই। দস্তুর হল, পুলিশ ও প্রশাসনের যাবতীয় ব্যর্থতা এবং উদাসীনতা আড়াল করে দেওয়া। বারংবার এই ঘটনা দেখে পশ্চিমবঙ্গবাসী অভ্যস্ত, ফলে তাঁরা মোটেই অবাক হননি যে ঠিক সেই পদ্ধতিতেই চলতে শুরু করেছে পানাগড়ের কাছে সাম্প্রতিক দুর্ঘটনাটির তদন্ত— যেখানে এক নৃত্যশিল্পী এবং ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থার কর্ণধারের অকালমৃত্যু হয়েছে। এই দুর্ঘটনার পিছনে প্রাথমিক অভিযোগ ছিল ইভটিজ়িং-এর। তা সত্ত্বেও ঘটনার অব্যবহিত পরেই পুলিশ সূত্রে জানা গেল, ইভটিজ়িং নয়, বরং দুই গাড়ির মধ্যে রেষারেষির কারণেই এমন দুর্ঘটনা।

আপাতত দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়ির আরোহীদের পরস্পরবিরোধী বয়ান চলছে, সঙ্গে সঙ্গে চলছে নানা জল্পনা। তদন্ত শুরুর আগেই কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছে যাওয়া অত্যন্ত অনুচিত, তবে তা আর ভাবে কে। প্রাথমিক অভিযোগে বলা হয়েছিল, অপ্রকৃতিস্থ অবস্থায় অশালীন মন্তব্য করতে করতে জনাকয়েক যুবক ছোট গাড়িটিকে ধাওয়া করেছিল। বেপরোয়া ধাবমান গাড়ির ধাক্কাতেই দুর্ঘটনা। এ-হেন প্রাথমিক অভিযোগে উঠে এসেছিল দু’টি বিষয়, প্রথমত হাইওয়ের নিরাপত্তা, দ্বিতীয়ত নারী-নিরাপত্তা। তৃতীয় বিষয়টি তৈরি হল যখন গাড়ির অন্য আরোহীরা প্রথমে হেনস্থার অভিযোগ করেও পরে তা প্রত্যাহার করে নিলেন। এবং আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার সাংবাদিক সম্মেলনে ইভটিজ়িং-এর তত্ত্ব উড়িয়ে ‘রেষারেষি’র তত্ত্ব সামনে আনলেন, তদন্ত যেটুকুই হোক না কেন, তার দায়িত্বজ্ঞান এবং সংবেদনশীলতার বিষয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলে দিলেন। রেষারেষিই যদি হয়, এবং দুর্ঘটনার মূল দায় যদি ছোট গাড়িটিরই হয়ে থাকে, তবে এসইউভি-র আরোহীরা গাড়ি ফেলে পালালেন কেন, এ-হেন জরুরি প্রশ্নের উত্তর না মিললেও পুলিশের পক্ষে সিদ্ধান্ত জানাতে কোনও বিলম্ব হল না। জাতীয় সড়কের মতো গুরুত্বপূর্ণ অকুস্থলে, যেখানে দু’শো মিটার অন্তর সিসি ক্যামেরা থাকার কথা, সেখানে দুর্ঘটনার তিন দিন পরেও আরোহীদের সন্ধান মিলল না কেন, সে প্রশ্ন তো বাহুল্য মাত্র। নারী-নিরাপত্তায় এই রাজ্যের অবস্থান কেমন, আর জি কর কাণ্ডের পর সেই তথ্য এখন বিশ্ববিশ্রুত। এই পরিস্থিতিতে যে কোনও হেনস্থার অভিযোগে পুলিশ-প্রশাসনের অনেক বেশি দায়িত্বশীল, সংবেদনশীল আচরণ প্রত্যাশিত ছিল।

সুতরাং, আপাতত, পুনরায়— অন্তহীন রাজনৈতিক কুনাট্য। বিরোধীরা পশ্চিমবঙ্গকে দুষ্কৃতীদের মুক্তাঞ্চল দাবি করেছেন। ২০২২ সালে ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো-র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মেয়েদের বিরুদ্ধে সর্বাধিক অপরাধ নথিভুক্ত হয়েছে বিজেপিশাসিত উত্তরপ্রদেশে, তার পরই মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, পশ্চিমবঙ্গ এবং মধ্যপ্রদেশের নাম। অথচ শাসক দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক যখন-তখন বাম আমলের উদাহরণ টেনে বুঝিয়ে দেন, যা হচ্ছে তা নিয়ে উদ্বেগ অসঙ্গত, রাজনৈতিক অভিসন্ধিপরায়ণ। কেন জাতীয় সড়ক সংলগ্ন স্থানে নজরদারি যথেষ্ট নেই, জাতীয় সড়কে বিপদে সাহায্যের জন্য প্রতি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে টোল ফ্রি নম্বরের বোর্ড থাকার কথা বলা হলেও বাস্তবে কেন তা থাকে না, এ সব প্রশ্নের উত্তর চাইলে তা নিশ্চয়ই বিরোধী পক্ষের ষড়যন্ত্র বলেই ভাবা হবে। যে কোনও ঘটনা এবং দুর্ঘটনা শেষ পর্যন্ত রাজনীতিবিধৌত হয়ে ওঠে, উঠবেই: এই হল পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যটির প্রধান অভিজ্ঞান।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

panagarh Accident

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}