অবৈধ বাজি।
দীপাবলি আলোর উৎসব। দীপাবলি শব্দের উৎসবও। বিগত কয়েক বছরে আদালতের নির্দেশ, পুলিশি ধরপাকড়েও এই প্রবণতায় লাগাম পরানো যায়নি। সম্প্রতি পরিবেশবান্ধব বাজি ছাড়া অন্য কোনও বাজি পোড়ানো যাবে না বলে নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। তা সত্ত্বেও নিশ্চিন্ত থাকার উপায় নেই। কেন নেই, তার প্রমাণ মিলেছে কিছু দিন পূর্বে শহরের বৈধ বাজি বাজারে উদ্ধার হওয়া অবৈধ বাজির ঘটনায়। গোড়ার চিত্রই যদি এমন হয়, তবে কালীপুজোর সন্ধ্যা এবং পরের দিনের অবস্থা নিয়ে বিশেষ সংশয় থাকার কথা নয়। বস্তুত, গত দুই বছরেও বাজি পোড়ানোর ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞা ছিল। অথচ, শহরের বিভিন্ন প্রান্তে এবং জেলায় নিষিদ্ধ বাজি ফেটেছে। এই বছর এখনও অবধি নিষিদ্ধ বাজি উদ্ধার, অবৈধ বাজি ব্যবসায়ীদের আটকের ঘটনা চোখে পড়ছে। কিন্তু দীপাবলির প্রদীপের তলার অন্ধকারটুকু এত সুবিশাল এবং পরিব্যাপ্ত যে, নাগাল পেতে বছরভর যে কঠোরতার প্রয়োজন, তা দেখা যায়নি। ফলত, কালীপুজোর ঢের আগে থেকেই নিষিদ্ধ বাজির শব্দ কর্ণকুহরে প্রবেশ করেছে। তার ডেসিবল যে নির্ধারিত মাত্রার কয়েক গুণ বেশি, বুঝতে যন্ত্রের প্রয়োজন পড়ে না।
কেন অবৈধ বাজিতে রাশ টানা যাচ্ছে না, বুঝতে গেলে ব্যবসায়ী এবং এক শ্রেণির ক্রেতাদের অসৎ মানসিকতার প্রসঙ্গটি উল্লেখযোগ্য। আদালত কালীপুজোর রাত আটটা থেকে দশটা পর্যন্ত শুধুমাত্র সবুজ বাজি ফাটানোর ছাড়পত্র দিয়েছিল। কিন্তু সবুজ বাজির মোড়কেই নিষিদ্ধ বাজি চালান করা হয়েছে বলে অভিযোগ। নিয়ম অনুযায়ী, বাজির প্যাকেটের গায়ে ‘কিউ আর’ কোড স্ক্যান করলে প্রস্তুতকারক সংস্থার নাম, লাইসেন্স নম্বর এবং নিরি-র শংসাপত্র দেখতে পাওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে হয় সেই কোড অনুপস্থিত থাকছে, নয়তো শংসাপত্র বার হচ্ছে না। মহামান্য আদালতের রায় শিরোধার্য মেনেও প্রশ্ন তোলা অন্যায় হবে না, যে রাজ্যে অ-নিয়মই নিয়ম, সেখানে ‘সবুজ বাজি’র ফাঁকটি রাখার প্রয়োজন ছিল কি? বিশেষত, যেখানে খোদ রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদই জানিয়েছে, সবুজ বাজিতেও ৭০ শতাংশ দূষণ হতে পারে? পরিবেশই বিচার্য হলে, সব ধরনের বাজিতে নিষেধাজ্ঞা একান্ত কাম্য ছিল। অভিজ্ঞতা বলছে, কালসর্প এক বার প্রবেশ করলে তাকে উৎখাত করার মতো শক্তি এবং সদিচ্ছা— কোনওটাই রাজ্য সরকারের থাকে না। প্রতি বছর সেই চিত্রই রাজ্যে দেখা যায়।
বাজি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে অনেক সময়ই এর নির্মাণের সঙ্গে যুক্তদের রুজিরোজগারের প্রসঙ্গ ওঠে। পেশার অধিকার ছিনিয়ে নেওয়া অনুচিত। কিন্তু যে পেশায় অবৈধতার ছড়াছড়ি, গোপনে নির্মাণের সময় প্রায়শই শিশুদেরও প্রাণসংশয় ঘটে, সর্বোপরি পরিবেশ দূষণ মাত্রাছাড়া বৃদ্ধি পায়, সেই পেশা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া জরুরি। বৃহত্তর স্বার্থেই জরুরি। কালীপুজোর আগের এবং পরের কয়েক দিনে বাতাসে যে পরিমাণ বিষ মেশে, তা জনস্বাস্থ্যের পক্ষে চরম ক্ষতিকর। প্রবল শব্দদূষণে শুধুমাত্র বৃদ্ধ, অসুস্থ এবং শিশুরাই নয়, অসহায় প্রাণীরাও বিপন্ন বোধ করে। উৎকট আনন্দ প্রকাশ করে অন্যকে উত্ত্যক্ত করা কখনও উৎসব হতে পারে না। যুগপৎ বায়ু ও শব্দ দূষণের মাত্রা কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়ে দীপাবলি উৎসবের অন্যায্যতা বিষয়ে পুলিশ-প্রশাসনের পাশাপাশি নাগরিককেও সচেতন ও সতর্ক হতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy