আলুর ‘বন্ড’ নিয়ে কালোবাজারি রুখতে নজরদারি শুরু করল প্রশাসন। কোথাও ‘আগে এলে আগে মিলবে’ নিয়ম চালু করা হয়েছে। কোথাও বন্ড বিলির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নিয়ম মানা হচ্ছে কি না, সে দিকেও রাখা হচ্ছে নজর। উত্তরবঙ্গ জুড়ে এ বার এমনই কড়া অবস্থান নেওয়া হয়েছে। তার পরেও অবশ্য বন্ড বিলির ক্ষেত্রে যে কোনও অভিযোগ উঠবে না, তা নিয়ে একশো শতাংশ নিশ্চিত নন অনেকেই।
কৃষি বিপণন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বার জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, মালদহের একটি অংশে বন্ড বিলির কাজ শুরু হয়েছে। দিন কয়েকের মধ্যে উত্তরবঙ্গের সর্বত্রই বন্ড বিলির কাজ শুরু করা হবে। কোচবিহারের মাথাভাঙা ও দিনহাটায় ‘আগে এলে আগে মিলবে’ নিয়ম চালু করা হয়েছে। অর্থাৎ, যিনি আলু নিয়ে আগে হিমঘরে পৌঁছতে পারবেন, তাঁকে আগে বন্ড দেওয়া হবে। আগাম কোনও বন্ড দেওয়া হবে না।
কৃষি বিপণন দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘বন্ড বিলি নিয়ে প্ৰতি বছর কালোবাজারির অভিযোগ ওঠে। সে জন্য যে এলাকায় যে ভাবে বন্ড বিলি করলে কারও কোনও অভিযোগ থাকবে না, সে ভাবেই নিয়ম করা হয়েছে। মহকুমা ভিত্তিতে প্রশাসনিক কর্তাদের উপস্থিতিতে আলোচনা করে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’ কোচবিহার জেলা কৃষি বিপণন দফতরের আধিকারিক সাব্বির আলি বলেন, ‘‘এ বার আমাদের পর্যাপ্ত হিমঘর রয়েছে। কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’’
উত্তরবঙ্গের জেলাগুলির মধ্যে কোচবিহার ও জলপাইগুড়িতে সব থেকে বেশি আলু চাষ হয়। দুই জেলা মিলিয়ে এ বার প্রায় ৭৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। এর পরেই রয়েছে উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, আলিপুরদুয়ার ও মালদহ। শিলিগুড়িতেও এক হাজার হেক্টরের মতো জমিতে আলু চাষ হয়। জলপাইগুড়িতে হিমঘর রয়েছে ২৭টি, কোচবিহারে ২২টি। এ ছাড়াও অন্য জেলাগুলিতেও হিমঘর রয়েছে।
মার্চ মাসের শুরু থেকেই হিমঘরগুলি খুলতে শুরু করবে। ৭ মার্চের মধ্যে সমস্ত হিমঘর খুলে যাবে। অভিযোগ, হিমঘরে আলু রাখার ক্ষেত্রে দৌরাত্ম্য রয়েছে ‘ফড়ে’দের। এর বাইরে একাংশ প্রভাবশালী ব্যক্তিও আলুর বন্ড কিনে নেন। কেউ কেউ আগাম আলুর বন্ড কিনে তা কালোবাজারে বিক্রি করেন। তাতেই সমস্যা তৈরি হয়। গত বছর জলপাইগুড়ি ও কোচবিহারের একাধিক হিমঘরের সামনে তা নিয়ে বিক্ষোভ দেখান কৃষকেরা। অবস্থা সামলাতে পুলিশ নামাতে হয়। এ বছর অবশ্য আগে থেকেই ক্ষুদ্র কৃষকদের জন্য ৩০ শতাংশ সংরক্ষণের কথা ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার।
দক্ষিণ দিনাজপুর কৃষি বিপণন দফতরের জেলা আধিকারিক সুব্রত দে বলেন, ‘‘জেলার চারটি হিমঘর মিলিয়ে ৩২ হাজার ৯৫ মেট্রিক টন আলু সংরক্ষণ করার মতো ক্ষমতা রয়েছে। তবে হিমঘরের সংখ্যা আরও একটু বাড়লে ভাল হত।’’ উত্তর দিনাজপুরের ক্ষেত্রে অবশ্য একটি সুবিধা রয়েছে। সংলগ্ন বিহারে কিছু হিমঘর রয়েছে। যেখানে আলু রাখার সুযোগ পান কৃষকদের একটি অংশ। মালদহ হিমঘর মালিক সংগঠনের সভাপতি উজ্জ্বল সাহা বলেন, ‘‘সরকারি নিয়ম মেনেহিমঘরগুলিতে আলুর বন্ড বিলি চলছে। মার্চ মাসের প্রথম দিন থেকে আলু রাখা শুরু হবে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)