Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Insurance

দায়বদ্ধ

শুধু স্বাস্থ্য বিমাই নয়, বাজারে এ ধরনের আরও যে অজস্র বিনিয়োগ প্রকল্প রয়েছে, সেগুলির ক্ষেত্রেও একই বিধি চালু করা দরকার।

—প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২৩ ০৬:২৯
Share: Save:

রোগ-অসুখে বা সঙ্কটে যাতে কাজে লাগে, সে কারণে স্বাস্থ্য বিমা করান মানুষ। বিশেষত কোভিড-উত্তর স্বাস্থ্য বিমার গুরুত্ব বেশি মালুম হচ্ছে। বেশির ভাগ সময়েই দেখা যায়, গ্রাহককে বিমা করানোর সময় বিমা সংস্থাগুলি ধরিয়ে দেয় একগুচ্ছ কাগজ, যাতে বিমা প্রকল্পের খুঁটিনাটি তথ্য লেখা থাকে অতি ক্ষুদ্র অক্ষরে, তা পড়ার বা বুঝে ওঠার সময় ও সামর্থ্য গ্রাহকের থাকে না। বিমাকর্মীই মূল কথাগুলি বলে বা বুঝিয়ে দেন, ফর্মে একটি জায়গায় গ্রাহককে সই করতে বলেন, গ্রাহকও মেনে নেন বিনা বাক্যে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে অনেক সময় দেখা যায় বিমার টাকা না পেয়ে নাকাল হচ্ছেন গ্রাহক, কারণ ওই খুঁটিনাটি শর্তাবলি পড়া ও বোঝায় গলদ থেকে গেছে। এই সমস্যার সমাধানেই বিমা নিয়ামক কেন্দ্রীয় সংস্থা আইআরডিএআই এ বার জানাল, আগামী জানুয়ারি থেকে বিমার তথ্যাদি গ্রাহককে জানাতে হবে সহজ ভাষায় ও স্পষ্ট ভাবে, কোনও লুকোচুরি ছাড়া। ‘কাস্টমার ইনফর্মেশন শিট’-এ লিখে দিতে হবে বিমার নাম, ধরন, সুবিধা, সময়সীমা, কী কী পাওয়া যাবে এবং যাবে না তা-ও, প্রকল্প বাতিল বা অন্য প্রকল্পে যাওয়ার সুযোগ, টাকা দাবির পদ্ধতি, যোগাযোগ-তথ্য— গ্রাহক যে ভাষায় স্বচ্ছন্দ বা যে ভাষায় চাইছেন, তাতেই।

এই পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। এত কাল যে কেন তা করা হয়নি, সে প্রশ্নটিও জাগে। বাজার-অর্থনীতির তত্ত্বে রয়েছে ‘ইনফরমেশন অ্যাসিমেট্রি’র কথা, যে ব্যবস্থায় বিক্রেতা ও ক্রেতার মধ্যে কোনও এক পক্ষের কাছে বেশি অথবা বেশি কার্যকর তথ্য থাকে, অন্য পক্ষের থাকে কম। স্বাভাবিক ভাবেই, যার কাছে বেশি তথ্য থাকে সে লেনদেনের ক্ষেত্রে সুবিধা পায় বেশি। স্বাস্থ্য বিমার ক্ষেত্রে বেশি সুবিধাভোগী পক্ষটি নিঃসন্দেহে বিমা সংস্থাগুলি, তারাই প্রকল্পের যাবতীয় শর্ত, সুবিধা-অসুবিধা, পরিস্থিতির নিয়ামক, ক্রেতা তথা গ্রাহক থাকেন তুলনায় কম সুবিধাজনক অবস্থায়। প্রকল্পের শর্তাবলির বহুলাংশ থাকে আইনি পরিভাষায় কণ্টকিত, ক্রেতার তরফে তা বোঝার বা বিক্রেতার তরফে বোঝানোর দায় থাকে না। তথ্যের ভারসাম্যের এই উচ্চ-নীচ অবস্থান থেকেই আসে বৈষম্য, যার জেরে কার্যকালে ক্রেতা বা গ্রাহককে পড়তে হয় আর্থিক ক্ষতি বা হয়রানির মুখে, আর বিক্রেতা সংস্থাগুলি প্রকল্পের ওই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র শর্তাবলির ‘ফাইন প্রিন্ট’-এর ঢাল দেখিয়ে পার পেয়ে যায়। এই অসাম্য দূর করার প্রয়াস যে এত দিনে হতে চলেছে, সেখানেই তার গুরুত্ব।

শুধু স্বাস্থ্য বিমাই নয়, বাজারে এ ধরনের আরও যে অজস্র বিনিয়োগ প্রকল্প রয়েছে, সেগুলির ক্ষেত্রেও একই বিধি চালু করা দরকার। টিভিতে ‘মিউচুয়াল ফান্ড’-এর বিজ্ঞাপন মনে পড়তে পারে, তার শেষে সবচেয়ে জরুরি ও কাজের কথাটুকু এত দ্রুতগতিতে বলে দেওয়া হয় যে তা কানেই ঢোকে না, মরমে তো দূরস্থান। ভারতে এই মুহূর্তে আর্থিক বিনিয়োগ ও বিমা প্রকল্পের যে বিরাট বাজার, সেখানে দেশি-বিদেশি বহু অসরকারি সংস্থা ব্যবসা করছে, তাদের লাভের অঙ্কটিও বিপুল। সংস্থাগুলির বোঝা দরকার, ক্রেতা বা গ্রাহককে তারা পরিষেবা ‘বিক্রি’ করছে, ‘অনুগ্রহ’ করছে না। ক্রেতাকে পরিষেবা ক্রয় বা উপভোগের তাবৎ সুবিধা-অসুবিধা বুঝিয়ে দিতে তারা প্রথম থেকে শেষাবধি দায়বদ্ধ। স্বাস্থ্য বিমা পথ দেখাল, এখনও অনেক পথ হাঁটা বাকি।

অন্য বিষয়গুলি:

Insurance Customers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy