গৌতম গম্ভীর। —ফাইল চিত্র।
নতুন বছরের শুরুটা ভাল হল না ভারতীয় ক্রিকেট দলের। অস্ট্রেলিয়ার কাছে ১-৩ হেরে হাতছাড়া হল বর্ডার-গাওস্কর ট্রফি। শুধু তা-ই নয়, এর ফলে খর্ব হল দ্বিপাক্ষিক টেস্ট প্রতিযোগিতায় অস্ট্রেলিয়ার উপরে এক দশকের ভারতীয় আধিপত্যও। এই পরাজয়ের জেরে টেস্ট র্যাঙ্কিং-এ তৃতীয় স্থানে নেমে এলেন রোহিতরা। গত বছর জুনে আইসিসি টি-২০ প্রতিযোগিতা জয়ের পরে আর কোনও উল্লেখযোগ্য সাফল্য কিন্তু অর্জন করতে পারেনি ভারত। বরং, শ্রীলঙ্কার মাটিতে এক দিনের সিরিজ় হাতছাড়া তো বটেই, দেশের মাটিতে তুখোড় ব্যাটার কেন উইলিয়ামসন-বিহীন নিউ জ়িল্যান্ডের কাছে ৩-০’য় ‘হোয়াইটওয়াশ’ হতাশা বাড়িয়েছে ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের। আইসিসি ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে উঠে মুখরক্ষার যেটুকু সুযোগ ছিল ভারতের কাছে, তা রোহিতরা হারালেন তাঁদের হতাশাজনক পারফরম্যান্সের জেরে।
অস্ট্রেলিয়া সিরিজ়ে ভারত এ ভাবে মুখ থুবড়ে পড়ল কেন? ব্যাখ্যা হতে পারে বিবিধ। যেমন, গোটা সিরিজ়ে ভারতের বোলিং আক্রমণ মূলত নির্ভরশীল ছিল যশপ্রীত বুমরা-র উপরেই। সিরিজ়ে তিনি সর্বাধিক উইকেট সংগ্রহ করলেন বটে, তবে তাঁকে উপযুক্ত সহায়তা দেওয়ার মতো বোলার দলে ছিল না। অথচ, আহত জস হেজ়লউড-এর জায়গায় এসে অস্ট্রেলীয় বোলার স্কট বোলান্ড কিন্তু ভারতীয় ব্যাটারদের ত্রাস হয়ে দাঁড়ালেন। তা ছাড়া, সিরিজ়ের মাঝে অশ্বিনের অবসর কিংবা স্পেশালিস্ট ব্যাটার বা বোলারের জায়গায় অল-রাউন্ডার খেলানো প্রশ্ন তুলে দিয়েছে কোচ গৌতম গম্ভীর-সহ বাকি টিম ম্যানেজমেন্টের ভূমিকার উপরে। তবে সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন ওঠে ভারতীয় ব্যাটারদের খেলার ধরন নিয়ে। টেস্ট ম্যাচের সঙ্গে এক দিন বা টি-২০’র বড় ফারাক হল দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা-সহ ধৈর্য ও পিচ আঁকড়ে পড়ে থাকার মানসিকতার। অথচ, সিরিজ়ে একাধিক ব্যাটারের খেলায় টি-২০’র প্রভাব ছিল তুলনামূলক ভাবে বেশি। তা ছাড়া, প্রয়োজনে দলের পাশে দাঁড়াতে পারেননি বিরাট কোহলি বা রোহিত শর্মার মতো সিনিয়র খেলোয়াড়রা। সাম্প্রতিক কালে ফর্মেও নেই তাঁরা। ভারতীয় ক্রিকেট ঐহিত্যের অন্যতম সমস্যা হল প্রতিষ্ঠিত খেলোয়াড়দের ‘তারকা’-র পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার প্রবণতা। এই ‘তারকা’পুজোর ফলেই প্রথিতযশা খেলোয়াড়দের খারাপ ফর্ম থাকা সত্ত্বেও বিতর্কের ভয়ে তাঁদের দল থেকে বাদ দিতে চান না নির্বাচকরাও। যার প্রভাব আখেরে পড়ে দলের সার্বিক পারফরম্যান্সের উপরে।
ভারতীয় ক্রিকেটে প্রতিষ্ঠিত খেলোয়াড়দের অবদান অনস্বীকার্য হলেও, তাঁরা যে অপরিহার্য নন— মাঠে সাফল্য পেতে হলে বদল চাই এই মানসিকতারই। ব্যক্তিপুজো নয়, ভারতীয় নির্বাচকদের যে কোনও খেলোয়াড়ের দলে নির্বাচনের মাপকাঠি হোক তাঁর পারফরম্যান্স। তবেই ঠিকমতো বিকশিত হওয়ার সুযোগ পাবেন উদীয়মান প্রতিভারা। একই সঙ্গে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন যাতে তিনটি ফরম্যাটেই উপযুক্ত রিজ়ার্ভ বেঞ্চ গড়ে তোলা যায়। তা ছাড়া, বিসিসিআই-এর ক্রিকেট ক্যালেন্ডারও বুঝেশুনে তৈরি করা উচিত যাতে গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্টের আগে নিজেদের প্রস্তুত করার পর্যাপ্ত সুযোগ পান খেলোয়াড়রা। আগামী জুনে ইংল্যান্ডে ভারতের বড় পরীক্ষা। অস্ট্রেলিয়ার পুনরাবৃত্তি যেন তাতে না হয়, সেটাই লক্ষ্য হোক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy