—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
দিল্লি ও ঢাকার মধ্যেকার চাপা টেনশন বাড়ছে। বাস্তবিক, আর এই টেনশনকে ‘চাপা’ বলা যায় কি না, সেটাই এখন প্রশ্ন। যে ভাবে একাধিক বার বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বা আইসিটি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করছে, এবং হাসিনাকে তাদের হাতে প্রত্যর্পণের জন্য ভারতের উপর চাপ দিচ্ছে, এবং উল্টো দিকে ভারতীয় সরকার শেখ হাসিনার ভারতবাসের মেয়াদ এক ধাপে বাড়িয়ে দিয়েছে, তাতে এটা এখন আর কোনও চাপা বা প্রচ্ছন্ন উত্তেজনায় সীমিত নেই, প্রায় লড়াইয়ে পর্যবসিত হয়েছে— কূটনৈতিক ও স্নায়বিক লড়াই। ঢাকার এই উপর্যুপরি ঘোষণাকে দিল্লি দেখছে— চাপ বাড়ানোর কৌশল হিসাবে, এবং সেই কারণেই কোনও ভাবে নতি স্বীকার না করে পাল্টা কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে মোদী সরকার। স্পষ্ট ভাবে জানানো হয়েছে দিল্লির তরফে যে, হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর প্রশ্নটি কোনও কূটনৈতিক বিষয় নয়, বরং আইনি বিষয়। আন্তর্জাতিক আইন যা বলে, সেই অনুযায়ীই কাজ করবে ভারত। আইন অনুযায়ী, কোনও অন্তর্বর্তী সরকার অন্য রাষ্ট্রের স্থায়ী সরকারের কাছে কোনও রাজনৈতিক নেতার প্রত্যর্পণ দাবি করলে তার মধ্যে ‘রাজনৈতিক’ দিকটি খতিয়ে দেখা জরুরি। কেননা, যদিও প্রত্যর্পণ চুক্তিতে কাউকে ফেরত পাঠানোই যায়, রাজনৈতিক কারণ সেই প্রত্যর্পণ দাবির পিছনে থাকলে অনুরুদ্ধ রাষ্ট্র তা নিজের মতো করে বিবেচনা করতেই পারে, তার সেই অধিকার আছে। বিশেষ করে এমন কোনও বিদেশি নেতা যাঁর শাসনকালে ভারতের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সদ্ভাব ছিল, শত্রুপক্ষের হাতে তাঁকে তুলে দেওয়ার পিছনে নৈতিক যুক্তিটিও কূটনৈতিক যুক্তির মতো পোক্ত। সুতরাং, আন্তর্জাতিক দুনিয়াও জানে ভারত সরকারের তরফে হাসিনাকে মুহাম্মদ ইউনূস-পরিচালিত বাংলাদেশি অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে তুলে দেওয়ার সমস্যা কোথায়।
আন্তর্জাতিক মান্যতার বিষয়টি এই প্রসঙ্গে কম গুরুতর নয়। এখনও অবধি বিশ্বের অন্যতম সম্মানিত গণতন্ত্র, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রধান শক্তি ভারতের বিতর্কাতীত ঐতিহ্য— আন্তর্জাতিক বিধিবিধান মেনে চলা। বিপরীতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এখনও অস্থির পর্বের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, বিশেষত যখন এই সরকারের পিছনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সহায়ক ইসলামি মৌলবাদী শক্তিসমূহ একাধারে হিন্দুবিরোধী ও ভারতবিরোধী কার্যকলাপে লাগামছাড়া অবিবেচনা দেখাচ্ছে। ইউনূস সরকারের বার্তা এই বছরেই সে দেশে নির্বাচন হবে। ধরে নেওয়া যায়, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন কেমন ভাবে সংঘটিত হয়, এবং নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এসে ভারতের সঙ্গে ঠিক কোন তারে সম্পর্কসুর বাঁধে, তার উপরই নির্ভর করবে দিল্লির পরবর্তী বিবেচনা।
বিভিন্ন দিকে কানাঘুষো যে, ভারত সরকার হাসিনা-প্রিয় ও হাসিনার আশ্রয়দাতা বলেই ভারতের সঙ্গে অগস্ট আন্দোলন পরবর্তী বাংলাদেশ সরকারের সুসম্পর্ক তৈরি হতে পারছে না। কথাটি যদি সত্যও হয়, মাত্র আংশিক ভাবে সত্য। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন বন্ধ করা এবং অত্যধিক ভারতবিরোধী আবহাওয়া সামাল দেওয়া, এই দু’টি কাজ অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে, কার্যত যা সম্পূর্ণত অস্বীকার করা হচ্ছে। ভারতবিরোধী প্রচারে রাশ না টেনে ভারতকে পাশে পাওয়ার সম্ভাবনা স্বল্প। একই ভাবে ভারতেও অকারণ বাংলাদেশ-নিন্দা ও মুসলমান-বিদ্বেষের স্রোত পরিস্থিতিকে বিশেষ ভাবে বিপন্ন করছে। ভারত সরকারেরও দায়িত্ব, নিজে সঠিক পথে চলার সঙ্গে সঙ্গে দ্বেষপূর্ণ সামাজিক পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করা। আশা রইল, সুস্থ কূটনীতির স্বার্থে দুই দিকে রাজনৈতিক নেতারা ঘরোয়া রাজনীতি ও সঙ্কীর্ণ ধর্মরাজনীতির হিসাব সরিয়ে বেরিয়ে আসবেন, এবং বিদ্বেষবিষ সেবন ও প্রচার থেকে পারস্পরিক সহন ও শুভবুদ্ধির দিকে নাগরিক এগিয়ে যাবেন। এই উপমহাদেশ অনেক ক্ষত ও ক্ষতি সয়েছে। আর নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy