Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Central Government

শ্রেষ্ঠ আসন?

নরেন্দ্র মোদী সরকারের সাফল্য হিসাবে দাগিয়ে না দিয়ে, ভারতের জি২০’র এক বছরের দায়িত্বভারকে দেশের গণতন্ত্র ও সংবিধানের আলোয় তুলে ধরাটাই দরকার ছিল।

Picture of PM Narendra Modi.

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৫:৩০
Share: Save:

ভারত এ বছর জি২০ গোষ্ঠীর সভাপতিত্ব করছে, এ তথ্য এখন আর নতুন নয়। তবে এই ঘটনা ঘিরে জাতীয় স্তরে আগ্রহ ও প্রচারের যে ঢেউ উঠেছে সেটি নতুন। প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রাক্কালে রাষ্ট্রপতির বক্তৃতাতেও উঠে এসেছে এই প্রসঙ্গ: বিশ্বমঞ্চে ভারত যে সম্মান অর্জন করেছে, তারই ফলস্বরূপ তার উপর ন্যস্ত হয়েছে বড় দায়িত্ব, যেমন জি২০ গোষ্ঠীর সভাপতিত্ব। নরেন্দ্র মোদীর বক্তব্যেও জি২০ দায়িত্বলাভের গৌরবগাথা ফুটে উঠছে বারংবার। মনে হতেই পারে এ ভারতের ‘বিশেষ কৃতিত্ব’, কেন্দ্রের তরফে সে ভাবেই তাকে দেখানো হচ্ছে। অথচ জি২০ নিয়ে বিদেশ মন্ত্রকের আনুষ্ঠানিক প্রেস বিবৃতিটি পড়লেই জানা যায়, এ হল এক বছরের সভাপতিত্ব, ২০২২-এর ১ ডিসেম্বর থেকে ২০২৩-এর ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। জি২০ গোষ্ঠীর সদস্য দেশগুলি ঘুরেফিরে প্রত্যেকেই এই এক বছরের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে থাকে, ভারতের আগে সভাপতি ছিল ইন্দোনেশিয়া। এ বছর ডিসেম্বরে ভারতের হাত থেকে দায়িত্ব নেবে ব্রাজ়িল, তার পরে দক্ষিণ আফ্রিকা— এই সবই পূর্বনির্ধারিত, জি২০’র নিয়ম মেনেই। বিরোধী দলগুলি সরব—জি২০’র সভাপতিত্বকে দেশের তথা কেন্দ্রীয় সরকারের ‘সাফল্য’ বলে প্রচার আসলে লোকসভা নির্বাচনে ভোট কুড়োনোর ফন্দি।

এর আগের অন্য দেশগুলির মতোই, ভারতের এই পদপ্রাপ্তিও সম্মানের। সম্মানের সঙ্গেই আসে দায়িত্ব, যে সময়ে ভারত এই দায়িত্ব পেল তা অন্য রকম বলেই— আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতির টানাপড়েনে দীর্ণ, অতিমারি-উত্তর অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর সময় বলেই— তার গুরুত্বও সমধিক। এই সময়ে দরকার ‘বহু’কে এক সূত্রে গেঁথে পথ চলা, যে দর্শন ভারতের সংবিধানেই অনুস্যূত। রাষ্ট্রপতির প্রজাতন্ত্র দিবসের ভাষণেও উঠে এসেছে সে কথা— ভাষা-ধর্ম-সম্প্রদায়-সংস্কৃতির বিপুল বিভিন্নতা সত্ত্বেও ভারত কখনও বিচ্ছিন্ন হয়নি, এখানেই তার গণতন্ত্রের শক্তি। দক্ষিণ এশিয়ার অন্য বহু েদশের শাসনতন্ত্র গণতান্ত্রিক হলেও ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বহুত্ব লালনে তাদের অনেকেই ব্যর্থ; অন্য দিকে অজস্র মত পথ ও জীবনধারার প্রত্যেকটিকে সমান গুরুত্ব দিয়ে এসেছে বলেই ভারত আজও বিশ্বের চোখে স্বতন্ত্র। এই মুহূর্তের বিশ্ব-অর্থনীতিতে, বিশেষত কোভিড-পরবর্তী অর্থব্যবস্থায় ভারতের ‘কৃতিত্ব’ প্রবল ভাবে অনুভূত, কিন্তু তা অনেকাংশেই বাদবাকি বিশ্বের অর্থনৈতিক ওঠাপড়ার উপর নির্ভর। তা বাদে, বিশ্ব স্তরে সুদূরপ্রসারী সাফল্য বলতে ভারতের যদি কিছুমাত্র থাকে, তবে তা প্রশ্নাতীত ভাবে এই সাংবিধানিক, গণতান্ত্রিক বহুত্বের উদ্‌যাপন। নরেন্দ্র মোদী সরকারের সাফল্য হিসাবে দাগিয়ে না দিয়ে, ভারতের জি২০’র এক বছরের দায়িত্বভারকে দেশের গণতন্ত্র ও সংবিধানের আলোয় তুলে ধরাটাই দরকার ছিল। তবে সত্যিকারের দরকারি কাজগুলি এই সরকার আর কবেই বা করেছে, রাষ্ট্রযন্ত্রের ঢক্কানিনাদে প্রচারের সবটুকু আলো শুষে রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধিই তার আসল উদ্দেশ্য। অবশ্য আর একটা কথাও আছে: বিজেপির আমলে ভারতের সংবিধান এমনই ভূলুণ্ঠিত, জাতপাতের বিভেদ ও ধর্মীয় মেরুকরণের আঘাতে বহুত্ববাদ এতটাই আক্রান্ত যে, ভারতীয় গণতন্ত্রের গৌরবচিহ্ন বলে তাদের আর তুলে ধরার সাধ্য নেই, সাধ বহুকালই অন্তর্হিত। রাষ্ট্রপতির ভাষণে উল্লিখিত ভারতের বহুত্ববাদী আত্মাটির কথা তাদের সইবে কেন।

অন্য বিষয়গুলি:

Central Government G20 summit India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy