লোকসভা ভোটের ফলের নিরিখে সংগঠনে রদবদল হবে। গত বছর ২১ জুলাইয়ের সভায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওই মন্তব্যের পরে পুরুলিয়ায় জেলা সভাপতি বদল ঘিরে চর্চা শুরু হয় দলের অন্দরেই। পুরুলিয়া লোকসভা কেন্দ্রে ১৭ হাজার ভোটের ব্যবধানে বিজেপির কাছে হেরেছে তৃণমূল। তা হলে কি ‘ব্যর্থতার’ দায় নিয়ে সরতে হবে জেলা সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়াকে, গুঞ্জন জোরদার হচ্ছিল দলে। তাঁর ‘বিরোধী’ শিবিরেরও দাবি ছিল, সম্ভাবনা থাকলেও প্রত্যাশিত জয় আনতে পারেননি জেলা সভাপতি।
এমন যখন পরিস্থিতি, ভোটার তালিকা ‘পর্যবেক্ষণ’ কর্মসূচিতে অভিষেকের ‘ভাল কাজের’ মন্তব্য যেন বাড়তি অক্সিজেন জোগাল সৌমেনের ‘অনুগামীদের’। শনিবার কলকাতায় ওই বৈঠকে অভিষেক বলেন, “আমি মনে করি, পুরুলিয়ার কয়েকটি বিধানসভা বিশেষ করে পুরশহরগুলিতে যদি আমরা ভাল ফল করতাম, পুরুলিয়া লোকসভায় জিততাম। পুরুলিয়া, ঝালদা শহরে অত্যন্ত খারাপ ফলের জন্য আমরা হেরেছি।” তাঁর সংযোজন, তুলনামূলক ভাবে ভাল ফল হয়েছে বান্দোয়ান, মানবাজার, বলরামপুর ও কাশীপুরে। সবাই খুব ভাল কাজ করেছেন। ওই প্রসঙ্গে অভিষেক জানিয়েছেন, পুরুলিয়া বিধানসভার ২৭৪টি বুথের মধ্যে ১৬২টিতে
তৃণমূল প্রার্থী পঞ্চাশের বেশি ভোটে পিছিয়ে ছিলেন।
‘ভার্চুয়াল’ ওই বৈঠকে দলের রাজ্য স্তরের নেতৃত্ব ও জনপ্রতিনিধিদের সামনে অভিষেকের এমন পর্যবেক্ষণ সামনে আসার পরে স্বভাবতই উল্লসিত সৌমেনের ঘনিষ্ঠেরা। তাঁদের দাবি, দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তাঁর বক্তব্যে কোনও ক্ষেত্রেই লোকসভায় দলের পরাজয়ের জন্য জেলা সভাপতিকে দায়ী করেননি। বরং বিজেপির দখলে থাকা বিধানসভাগুলিতে দলের সাফল্য তুলে ধরেছেন। সৌমেনের দক্ষ নেতৃত্বেই তা সম্ভব হয়েছিল বলে এর আগেও বারেবারে দাবি করেছেন তাঁর ঘনিষ্ঠেরা।
সৌমেনের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে জানা যায়, দুই পুরসভায় দলের শোচনীয় ফলের কারণেই যে পুরুলিয়া আসন তাদের হারাতে হয়েছে এই তত্ত্ব আগেই দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে পাঠানো রিপোর্টে বিশেষ ভাবে উল্লেখ করা হয়েছিল। তাদের যুক্তি, ফলে দেখা গিয়েছে পুরুলিয়ায় কম-বেশি ২২ হাজার ও ঝালদায় প্রায় ৬ হাজার ভোটে পিছিয়ে গিয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী শান্তিরাম মাহাতো। ওই দুই পুরসভাতেই ব্যবধান ২৮ হাজারের মতো আর গোটা লোকসভার নিরিখে বিজেপির জয়ের ব্যবধান ১৭ হাজার। পাশাপাশি, বিজেপির দখলে থাকা পুরুলিয়া লোকসভার বলরামপুর, কাশীপুর, জয়পুর এবং বাঁকুড়া লোকসভার আওতায় থাকা রঘুনাথপুর বিধানসভায় লোকসভার ফলের নিরিখে বিজেপিকে পিছনে ফেলেছে তৃণমূল। তাই জেলা সভাপতি যে পুরুলিয়ায় দলের জয়ের জন্য চেষ্টার কসুর রাখেননি, সেই বিষয়ে ওয়াকিবহাল দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। জেলা সভাপতি বদলের ভিত্তিহীন কথাবার্তা চাউর করেও লাভ হবে না।
তবে সৌমেন বলেন, “দলই স্থির করে দেবে, আগামী বিধানসভায় কার নেতৃত্বে জেলার নেতা-কর্মীরা মাঠে নামবেন। আমাদের দলে কোনও বিরোধ নেই। সকলে ঐক্যবদ্ধ
ভাবে কাজ করেন। এ সবই
বিরোধীদের রটনা।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)