Advertisement
২৯ নভেম্বর ২০২৪
Economy

মন্দ দিন

অর্থব্যবস্থার স্বাস্থ্য ভাল হলে সাধারণ মানুষ ব্যক্তিগত ঋণ করে, বা টাকা সঞ্চয় না করে তা ব্যয় করে মূলত কনজ়িউমার ডিউরেবলস বা দীর্ঘমেয়াদি ভোগ্যপণ্যের উপরে।

money.

—প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২৩ ০৬:০৩
Share: Save:

আরও একটি অর্থনৈতিক প্রশ্নকে রাজনীতির পরিসরে নিয়ে এল কংগ্রেস। ভারতীয় রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান উল্লেখ করে অভিযোগ করল, দেশে সঞ্চয়ের বৃদ্ধির হার প্রায় অর্ধ শতকের মধ্যে সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছেছে, অন্য দিকে, ব্যাঙ্কে ‘পার্সোনাল লোন’ বা ব্যক্তিগত ঋণের পরিমাণ হুহু করে বাড়ছে। কংগ্রেসের অভিযোগ, নরেন্দ্র মোদীর জমানায় ভারতীয় অর্থব্যবস্থার যে গতিভঙ্গ ঘটেছে, এই পরিসংখ্যানগুলি তারই প্রমাণ। অর্থশাস্ত্রের ছাত্রমাত্রেই জানবেন, সঞ্চয়ের হার হ্রাস এবং ব্যাঙ্কে ব্যক্তিগত ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি, শুধুমাত্র এই দু’টি পরিসংখ্যানের ভরসায় অর্থব্যবস্থার স্বাস্থ্যের রোগনির্ণয় করা বিপজ্জনক। কোনও অর্থব্যবস্থায় এমনও ঘটতে পারে যে— বস্তুত উন্নত দেশগুলিতে হরহামেশা ঘটে থাকে— সাধারণ মানুষ দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে নিশ্চিন্ত; তাঁরা জানেন, এক দিকে অর্থব্যবস্থার সুস্থায়ী বৃদ্ধি ঘটবে, এবং অন্য দিকে, বার্ধক্য বা অসুস্থতার সময় সামাজিক সুরক্ষা জালের নিরাপত্তা মিলবে। এ-হেন নিশ্চয়তা থাকলে মানুষ ভবিষ্যতের কথা না ভেবে বর্তমানে ভোগব্যয়ের পরিমাণ বাড়ায়। তাতে সঞ্চয়ের হারও কমে, ব্যাঙ্কে ব্যক্তিগত ঋণও হয়— কিন্তু তা অর্থব্যবস্থার সুস্বাস্থ্যের সূচক, স্বাস্থ্যহানির নয়। ফলে, ভারতে কী ঘটছে, তা জানার জন্য আরও কিছু পরিসংখ্যান দেখা বিধেয়।

অর্থব্যবস্থার স্বাস্থ্য ভাল হলে সাধারণ মানুষ ব্যক্তিগত ঋণ করে, বা টাকা সঞ্চয় না করে তা ব্যয় করে মূলত কনজ়িউমার ডিউরেবলস বা দীর্ঘমেয়াদি ভোগ্যপণ্যের উপরে। পরিসংখ্যান বলছে, গত এক বছরে এই গোত্রের ভোগ্যপণ্যের ক্ষেত্রে বৃদ্ধির পরিমাণ ঋণের বৃদ্ধির পরিমাণের সঙ্গে আদৌ তুলনীয় নয়। ফাস্ট মুভিং কনজ়িউমার গুডস-এর ক্ষেত্রেও বৃদ্ধির হার তথৈবচ। অর্থাৎ, অর্থব্যবস্থার সুদিনে মানুষ যে খাতে খরচ করে, ভারতে এখন সেই ঘটনা ঘটছে না। তা হলে ভারতীয় বাজারে কী ঘটছে, তার একটি নির্দেশ পাওয়া যেতে পারে এমন দু’টি পণ্যের ক্ষেত্রে, যা অতিধনী থেকে মধ্যবিত্ত, সব শ্রেণির মানুষই কেনেন, কিন্তু সেই ক্রয় ভিন্ন মূল্যস্তরের। পণ্য দু’টি যথাক্রমে বাড়ি ও গাড়ি। ভারতে বিলাসবহুল বাড়ি এবং গাড়ি, অর্থাৎ এই পণ্যক্ষেত্র দু’টিতে উচ্চবিত্তের ক্রয়ের বৃদ্ধির হার ঊর্ধ্বমুখী; এবং দু’টি পণ্যেরই ‘বাজেট সেগমেন্ট’-এ বৃদ্ধি অতি শ্লথ। ভারতে আর্থিক অসাম্য বৃদ্ধি, মোট সম্পদের নিরিখে উচ্চতম দশ শতাংশ ও নিম্নতম পঞ্চাশ শতাংশের আয়বৃদ্ধির হারের বিপুল পার্থক্য ইত্যাদি বাস্তবের সঙ্গে পণ্যের বাজারের এই ছবিটি সঙ্গতিপূর্ণ। সব মেলালে যে বাস্তবটি উঠে আসে, তা এই রকম— ভারতে মুষ্টিমেয় অতিধনী শ্রেণির মানুষের বিপুল আর্থিক বৃদ্ধি ঘটছে, তাঁদের ব্যয়ও বাড়ছে তাল মিলিয়ে; কিন্তু অধিকাংশ মানুষই ভাল নেই। তাঁদের মৌলিক চাহিদাগুলি পূরণ করাও ক্রমে কঠিনতর হয়ে উঠছে।

অতএব, অনুমান করা চলে যে, সাধারণ মানুষ সঞ্চয় না করে, বা ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে সুখের সন্ধান করছেন না— তাঁরা কোনও রকমে ভেসে থাকার চেষ্টা করছেন। সঞ্চয়ের পরিমাণ কমছে, কারণ প্রকৃত আয় বৃদ্ধি কার্যত হচ্ছে না বললেই চলে: টাকার অঙ্কে যদিও বা আয় বাড়ে, সেটুকু খেয়ে যাচ্ছে মূল্যবৃদ্ধিতেই। ফলে, নিত্য প্রয়োজন মেটাতেই আয়ের টাকা ফুরোচ্ছে। অনুমান করা চলে, ঋণ হচ্ছে তুলনায় বড় খরচগুলির ধাক্কায়। যেমন, হাসপাতালে ভর্তির খরচ, সন্তানের শিক্ষার জন্য এককালীন ব্যয়, বাড়ির জরুরি মেরামতি, বিবাহ বা তেমন কোনও পারিবারিক অনুষ্ঠান ইত্যাদি। আগে যে খরচের জন্য মানুষের টাকা আলাদা করে রাখা থাকত, এখন সেই প্রয়োজন মেটাতে হচ্ছে ধার করে। অমিতব্যয়িতা নয়, ভাল থাকার চেষ্টাও নয়, মানুষ ঋণের জালে জড়াচ্ছেন শুধু দিনাতিপাত করতে। সত্যিই যদি পরিস্থিতি এমন হয়, তবে তা এক প্রবল দুঃসংবাদ। এমন মন্দ দিন বহু কাল আসেনি।

অন্য বিষয়গুলি:

Economy Congress
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy