Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Mental Health

জীবন সায়াহ্নে

২০৫০ সাল নাগাদ ভারতের মোট জনসংখ্যার ১৯ শতাংশের বয়সই ষাটের অধিক হবে। সুতরাং, এঁদের ভাল রাখার বিষয়টি যেমন রাষ্ট্রের দায়িত্ব, তেমনই সমাজেরও।

—প্রতীকী ছবি।

—প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০২৩ ০৬:১৮
Share: Save:

শরীরের আর পাঁচটা রোগের মতো মনের রোগকেও সমান গুরুত্ব দিতে হবে প্রবীণদের ক্ষেত্রে— অতি জরুরি এই কথাটি সাধারণত আলোচনাতেই উঠে আসে। যেমন উঠে এল সম্প্রতি কলকাতা প্রেস ক্লাবে ‘প্রবীণ জনসংখ্যার ভবিষ্যৎ ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে সচেতনতা’ শীর্ষক আলোচনায়। আলোচিত হল ডিমেনশিয়া-র মতো মূলত বার্ধক্যজনিত রোগের প্রসঙ্গটিও। প্রবীণদের বিষয়ে আধুনিক সমাজের হুঁশ ফেরাতে এবং সতর্ক করতে এই জাতীয় আলোচনার গুরুত্ব অত্যধিক। কিন্তু এটাও ভাবা প্রয়োজন, সমাজ কি আদৌ সচেতন হতে প্রস্তুত? বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রবীণদের কাছে চশমা, লাঠি, রক্তচাপ, ডায়াবিটিসের ওষুধগুলো হয়তো এসে হাজির হয়। কিন্তু তীব্র নিঃসঙ্গতা বা পরিবার-সমাজের কাছে নিজেদের গুরুত্ব কমে যাওয়ার বোধের যথাযথ পরিচর্যা মেলে কি? শুধু প্রয়োজনভিত্তিক সাহায্য নয়, তাঁদের সার্বিক কল্যাণের কথাই বা ভাবে ক’জন?

তথ্য বলছে, ২০৫০ সাল নাগাদ ভারতের মোট জনসংখ্যার ১৯ শতাংশের বয়সই ষাটের অধিক হবে। সুতরাং, এঁদের ভাল রাখার বিষয়টি যেমন রাষ্ট্রের দায়িত্ব, তেমনই সমাজেরও। অথচ, ভারতের মতো দেশে প্রবীণদের স্বাস্থ্য এবং কল্যাণের ক্ষেত্রে উপযুক্ত পরিকাঠামো বা জ্ঞান— উভয়েরই যথেষ্ট অভাব রয়েছে। বিশেষত ক্রমবর্ধমান চিকিৎসার খরচ, আর্থিক সহায়তার অভাব এবং বিচ্ছিন্নতা প্রবীণদের মর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তা ছাড়া বিদেশের মতো এ দেশে আপৎকালীন সাহায্য লাভের পরিকাঠামোটি যথাযথ গড়ে ওঠেনি। ফলে একাকী প্রবীণদের ক্ষেত্রে সময়ে অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা পাওয়া বা হাসপাতালে ভর্তির মতো আপৎকালীন সাহায্য পাওয়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট বিড়ম্বনার সম্মুখীন হতে হয়। খাস কলকাতা শহরেই যদি বদ্ধ ফ্ল্যাটে একাকী প্রবীণের পচন-ধরা মৃতদেহ উদ্ধার হয়, তবে অন্যত্র পরিস্থিতি কী হতে পারে, সহজে অনুমেয়। এর সঙ্গে যুক্ত হবে প্রবীণদের উপর নির্যাতনের ক্রমবর্ধমান হার। নির্যাতন রুখতে আইন থাকা সত্ত্বেও অসুস্থ, অক্ষম প্রবীণরা সেই সুযোগ নিতে অনেক ক্ষেত্রেই অপারগ, কিছু ক্ষেত্রে অনিচ্ছুকও বটে। সুতরাং, স্থানীয় থানা পাশে দাঁড়ালেও বহু ঘটনা অন্তরালেই থেকে যায়।

সমস্যা আরও গুরুতর করে তুলেছে দ্রুত পরিবর্তনশীল আর্থ-সামাজিক কাঠামো। পূর্বের যৌথ-পরিবারে বয়স্কদের দেখাশোনা করা সহজ ছিল। আধুনিক অণু-পরিবারে সে সুযোগ কই? সুতরাং, আগামী দিনের জন্য একটি বহুমুখী পরিকল্পনা করা আবশ্যক। প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্তরেও যাতে বৃদ্ধদের স্বাস্থ্য ও পরিচর্যা সংক্রান্ত বিভাগ গড়ে তোলা হয় এবং পর্যাপ্ত সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প মজুত থাকে, রাষ্ট্রকে তার ব্যবস্থা করতে হবে। পরিসংখ্যানে প্রকাশ, দেশের প্রবীণদের মধ্যে ৬৫ শতাংশ তাঁদের দৈনন্দিন দিনযাপনের জন্য অন্যের উপর নির্ভরশীল। তাই আগামী দিনে প্রবীণদের আয় বৃদ্ধি ও কর ছাড়ের ক্ষেত্রে আরও ভাবনাচিন্তা জরুরি। সমাজ এবং রাষ্ট্র উভয়কেই এ কাজে এগিয়ে আসতে হবে, সচেতন ভাবে, সক্রিয় ভাবে। একদা কলকাতা হাই কোর্ট মন্তব্য করেছিল, প্রবীণ এবং অসুস্থ নাগরিকের যত্ন নিতে না-পারা দেশ আসলে ‘অ-সভ্য’। বলতে বাধা নেই, বেঁধে বেঁধে থাকার প্রাথমিক পাঠটুকু ভুলে সেই অ-সভ্যতারই সযত্ন অনুশীলন চলছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Mental Health Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy