(বাঁ দিকে) জেমি ম্যাকলারেন এবং দিমিত্রিয়স দিয়ামানতাকোস। — ফাইল চিত্র।
২০২০-২১ মরসুম থেকে আইএসএলে খেলছে মোহনবাগান এবং ইস্টবেঙ্গল। মাঝের পাঁচ বছরে গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। অনেক কিছু বদলেছে। পাল্টায়নি একটাই জিনিস। কলকাতা ডার্বিতে ইস্টবেঙ্গলের পারফরম্যান্স। শনিবার আইএসএলের দশম কলকাতা ডার্বি হতে চলেছে। আগের ন’টি ম্যাচে ইস্টবেঙ্গল এক বারও জিততে পারেনি। শনিবারও তারা জিতবে, এমন আশা অতি বড় সমর্থকও করছেন না। তবে ডার্বি যে হেতু পঞ্চাশ-পঞ্চাশ, তাই ক্ষীণ হলেও একটা আশা রয়েছে লাল-হলুদ সমর্থকদের মনে।
ডার্বি মানে মোহনবাগান এগিয়ে, এ কথা গত পাঁচ বছরে অনেক বার লেখা হয়েছে। এত দিন পরেও সেটা বদলায়নি। কার্লেস কুয়াদ্রাতের আমলে আইএসএলে না হোক, তবু দু’বার মোহনবাগানকে হারিয়েছে ইস্টবেঙ্গল। তা ছাড়া ডার্বি মানে শুধু মোহনবাগানই। অস্কার ব্রুজ়োর কোচিংয়ে ইস্টবেঙ্গল তা বদলাতে পারে কি না সেটাই দেখার।
তবে বদলানোর জন্য হাতে অস্ত্র চাই। ব্রুজ়োর হাতে অস্ত্র কই? ডার্বির ঠিক আগের ম্যাচেই চোট পেলেন দলের সেরা অস্ত্র আনোয়ার আলি। কে আটকাবেন জেমি ম্যাকলারেন, গ্রেগ স্টুয়ার্টদের? হয়তো জানেন না অস্কার। কুয়াদ্রাতের মতো তিনি খেলোয়াড় না থাকা নিয়ে অনুযোগ করেন না ঠিকই, কিন্তু ভিতরে ভিতরে তাঁর মাথাতেও নিশ্চয়ই চোরা টেনশন চলতে থাকে।
শনিবার অনিরুদ্ধ থাপা ছাড়া প্রায় পুরো দলই পাচ্ছে মোহনবাগান। অনিরুদ্ধের জায়গায় খেলানোর মতো ফুটবলারও রয়েছে একাধিক। বাকিরাও বাড়তি দায়িত্ব নিতে পিছপা হবেন না। সেখানে ইস্টবেঙ্গলে আনোয়ার না থাকা মানে রক্ষণ অর্ধেক হয়ে যাওয়া। আগের ম্যাচে যে ভাবে গোল খাইয়েছেন, তাতে হিজাজি মাহেরের উপর বেশি ভরসা না থাকাই ভাল। হেক্টর ইয়ুস্তে এক বছর আগে মোহনবাগানে যা খেলেছেন তা ইস্টবেঙ্গলে খেলতে পারছেন না। লাল-হলুদ রক্ষণ কোন দিন বাঁচাবে আর কোন দিন ডুবিয়ে দেবে কেউ জানে না।
কেরলের হয়ে ফুল ফোটালেও ইস্টবেঙ্গলে দিমিত্রিয়স দিয়ামানতাকোসের পা থেকে গোল আসছে না। বয়সের প্রভাব ক্লেটন সিলভার খেলায় পড়লেও তিনি মাঠে নামলে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন কোনও না কোনও অবদান রাখার। পিভি বিষ্ণু এবং নাওরেম মহেশ প্রতিভাবান। কিন্তু ডার্বির চাপ নিতে পারার মতো তৈরি এখনও তাঁরা হতে পারেননি।
সেখানে মোহনবাগানে ঠিক ডার্বির আগেই ফিট হয়ে গিয়েছেন স্টুয়ার্ট। তৈরি আছেন ম্যাকলারেন, জেসন কামিংস। দ্বিতীয় জন হয়তো প্রথম একাদশে থাকবেনও না। ভারতীয় ফুটবলে বিদেশি বিশ্বকাপার এসে রিজ়ার্ভ বেঞ্চে থাকছে এ জিনিস কে কবে দেখেছে? মোহনবাগান দলের গভীরতা ঠিক এতটাই। তাই একজন চোট পেলেও কোচ হোসে মোলিনার বিশেষ ভাবনা থাকে না। তিনি অনায়াসে বিকল্প একাধিক ফুটবলারকে খেলিয়ে দিতে পারেন। ডার্বিতেও তাঁর ব্যতিক্রম হওয়ার কথা নয়।
খাতায়কলমে নিশ্চিত ভাবেই এগিয়ে মোহনবাগান। তবে খেলাটা ডার্বি। তাই পাশা পাল্টে যেতে পারে যে কোনও মুহূর্তে।
মুখোমুখি সাক্ষাৎ
আইএসএলে দশম বার মুখোমুখি দুই দল। এর আগের ন’টি ম্যাচে মোহনবাগান আটটি জিতেছে। একটি ড্র হয়েছে। ইস্টবেঙ্গল এই ম্যাচে মাত্র পাঁচটি গোল দিয়েছে। মোহনবাগান দিয়েছে ২২টি।
দুই দলের কোচ কী বললেন
মোহনবাগান কোচ হোসে মোলিনা
· ছেলেরা লড়াইয়ের জন্য তৈরি। আশা করি জিতব। তবে সহজে জিততে পারব না। আমরা পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে রয়েছি। ওরা ১১ নম্বরে রয়েছে। হয়তো পয়েন্টের বড় ব্যবধান রয়েছে। কিন্তু সেটা পুরোটাই আইএসএলের সামগ্রিক পারফরম্যান্সের বিচারে। আমার মতে, আইএসএলে এত দিন যা কিছু করেছি তার কোনও মূল্য নেই। কাল কী করব তার উপরে অনেক কিছু নির্ভর করছে। যদি আমরা নিজেদের সেরাটা খেলতে পারি তা হলে জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী।
· আমরা বাকি দলগুলির সঙ্গে যে মানসিকতা নিয়ে খেলি সে ভাবেই ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে খেলব। আমরা জানি ইস্টবেঙ্গল কেমন খেলে। কী ভাবে আক্রমণ বা রক্ষণ করে। সেই মতো আমাদেরও পরিকল্পনা তৈরি আছে। ২০ মিনিট নয়, আমার ছেলেরা যাতে ৯০ মিনিটই ১০০ শতাংশ দিতে পারে সেটা চাই। সেটাই ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধেও করার চেষ্টা করব।
· ম্যাচটা তো ৯০ মিনিটের। আমি জানি আমার দল কী ভাবে খেলতে পারে। আমরা যদি ১০০ শতাংশ দিতে পারি তা হলে বিপক্ষ দল কী করল সেটা নিয়ে ভাবতেই হবে না। আমি শুধু নিজের দলের খেলোয়াড়দের সাহায্য করতে চাই। বাকিরা কী করতে পারে সেটা নিয়ে ভাবিত নই।
ইস্টবেঙ্গলের কোচ অস্কার ব্রুজ়ো
· এই ধরনের ম্যাচে ‘আন্ডারডগ’ বলে কিছু হয় নাকি? মনে হয় না। আসলে আপনারা বোধহয় আমাকে দিয়ে কিছু কড়া কথা বলাতে চান। তাই এ কথা জিজ্ঞেস করছেন। আমি বলব, এই ম্যাচে দুই দলেরই জেতার সুযোগ ৫০ শতাংশ করে। দুই দলেরই সমস্যা আছে। মোহনবাগানও কয়েকটা ম্যাচে অনেক কষ্ট করে শেষ মুহূর্তে গোল দিয়ে জিতেছে। তাই এই ম্যাচে কেউই এগিয়ে বা পিছিয়ে আছে বলে মনে হয় না।
· আমার কোচিং জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ এসেছে। শনিবারের ম্যাচটা তার মধ্যে অবশ্যই অন্যতম। তবে কঠিনতম নয়। এটা ঠিকই যে, মোহনবাগান অনেক ভাল ফর্মে থাকা দল। হয়তো এই ম্যাচে তাদের সফল হওয়ার সুযোগই বেশি। তবে ওদের থামানোর জন্য যা যা করা দরকার, সবই করব আমরা।
· প্রথম ডার্বিতে দলের অবস্থা যে রকম ছিল, তাতে আমাদের জেতার সম্ভাবনাও কম ছিল। এখন অবস্থা অনেক ভাল। ডিসেম্বর মাসটা আমাদের ভাল কেটেছে। দলের ছেলেদের আত্মবিশ্বাস ফিরে এসেছে। তবে চোট-আঘাতের জন্য কয়েক জন নির্ভরযোগ্য ফুটবলারের অভাব বোধ করছি। আমরা পয়েন্ট টেবলের নীচের দিকে থাকায় মোহনবাগান হয়তো আমাদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলবে। কিন্তু গত চার-পাঁচটা ম্যাচের ফল যদি দেখেন তা হলে নিশ্চয়ই বুঝতে পারবেন যে, সেরা ছয়ে পৌঁছতে কতটা মরিয়া আমরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy